ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ু চাপের আধিক্যে বিপর্যস্ত অবস্থা ॥ বজ্র বৃষ্টি ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

বায়ু চাপের আধিক্যে বিপর্যস্ত অবস্থা ॥ বজ্র বৃষ্টি ঝড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের আধিক্যের কারণে চারদিন ধরেই সারাদেশের ওপর দিয়েছে বয়ে যাচ্ছে ভারি বৃষ্টি, বজ্রসহ কালবৈশাখী ঝড়। এদিকে সারাদেশে ভারি বর্ষণের কারণে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও তলিয়ে গেছে তরমুজ, মরিচসহ ক্ষেতের বিভিন্ন ফসল। প্লাবিত হয়েছে দেশের নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রার তারতম্যের আধিক্যের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের উপকূলীয় এলাকায়, সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্নস্থানে প্রবল বর্ষণ ও ঝড়োহাওয়া আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। একই কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রবল বর্ষণে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৮৬ মিলিমিটার, উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে ১০৩ ও রাজধানীর ঢাকায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে সন্দ্বীপে ৫০, রাঙ্গামাটিতে ৬৩, কুতুবদিয়ায় ৪৯, কক্সবাজারের ৫৮, টেকনাফে ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। তারা জানায়, বায়ুচাপের আধিক্যের কারণে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রবল বর্ষণ। তবে শুক্র ও শনিবার দুদিনের প্রবল বর্ষণের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবারও সকাল থেকেই সারাদেশই বৃষ্টিমুখর ছিল। বর্ষার বাদল দিনের মতো অঝোরধারায় বইছে ঝড়ো ঝড়ো বৃষ্টি। প্রকৃতির চেহারা রূপ নিয়েছে আষাঢ়ের ঘন বরষার ছাপ। গত দুদিন ধরেই কালো মেঘে ঢেকে আছে রাজধানীসহ সারাদেশের আকাশ। মনে হচ্ছে, এখনি আকাশ ভেঙ্গে নামবে বৃষ্টি। গত দুদিনের বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টিতে এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। অবিরাম বৃষ্টির কারণে জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে। দিনমজুররা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে লোক চলাচলও কমে গেছে। এছাড়া অবিরাম বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণেও দেশে বিভিন্ন নদীর স্রোত দুকূল ছাপিয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পুল-কালভর্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধানের। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, কৃষক যখন বোরো কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক তখনি প্রচ- বৃষ্টিপাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মহারাশি ও সোমেশ্বরী নদীর দুকূল ছাপিয়ে আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যুব উন্নয়ন ও মহিলাবিষয়ক পোস্ট অফিসের সামনে হাঁটুপানি জমেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফসলি জমি, পুকুর, বাড়িঘর ও বাঘবেড়ি ইউপি পরিষদ চত্বর প্লাবিত হয়েছে। দিনাজপুরে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতেও থেমে থেমে বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। সাগর উত্তাল থাকায় মাছধরা বহু ট্রলার ও জেলেরা মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহীপুর, মৌডুবি, ঢোসসহ জেলার বিভিন্নস্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে চারদিনের টানা বর্ষণে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি, কমলনগর সদর উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে টানা বর্ষণের কারণে এ জেলার তরমুজ, মরিচ, সয়াবিনসহ অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের পর শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। তা শনিবার সারাদিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। আজ ও আগামীকাল ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের। তারা জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। যে কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হ্রাস পেতে পারে। একই কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থানেও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। শনিবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। পাশাপাশি ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এদিকে দেশের অন্যান্য এলাকার পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী ঢাকাতে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত আব্হাওয়ার এই অবস্থা বিরাজ করতে পারে। তারা জানায়, গত শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় দুই মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। পরের তিন ঘণ্টায় শনিবার সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আকাশ সারাদিনই মেঘলা ছিল। এদিকে বৃষ্টির কারণে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে স্বস্তি মিলেছে রাজধানীসহ দেশবাসীর। বিশেষ করে কয়েকদিনের গরমে অতিষ্ঠ ছিল তারা। বৃষ্টির কারণে কয়েকদিনের তাপমাত্রাও বেশ কমে এসেছে। তারা জানায় কয়েকদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবার তা ছিল ২৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে চট্টগ্রাম অফিসসূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৮৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বর্ষণে রাজধানীতেও ভোগান্তি এদিকে গত কয়েকদিন বৃষ্টিতে গরম কমলেও ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। নগরজুড়েই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। শনিবার সকালে বৃষ্টিতে পরীক্ষা দিতে বের হওয়া শিক্ষার্থী, অফিসগামী, গার্মেন্টস কর্মীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে দেখা যায়। নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছতে কাকাভেজা হয়েই ছুটেছেন কর্মস্থলের দিকে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর এলাকায় হাঁটুপানি জমে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এ এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে সারাবছরই ভোগান্তিতে থাকতে হয়। বৃষ্টির কারণে এ ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। তিনদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অবস্থা খারাপ। কোথাও জলাবদ্ধতা, কোথাও ভাঙ্গা রাস্তায় পানি জমে, কোথাও ওয়াসার লাইনের জন্য কাটা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এ কারণে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। পল্লবীতে খুঁড়ে রাখা রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজটের। আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১২ পর্যন্ত খুঁড়ে রাখা এবং মাটি ফেলে বন্ধ করার কারণে পুরো রাস্তা কাদা-মাটিতে একাকার হয়ে গেছে। সড়কজুড়েই পানি জমেছে। পানি যাওয়ার কোন পথও নেই। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, রামপুরা ও পুরান ঢাকার মীর হাজিরবাগ, ধোলাইর পাড়, জুরাইন, পোস্তাগোলা ড্রেনেজ লাইনের কাজ চলছে। অল্প বৃষ্টিতেই এসব এলাকার প্রতিটি অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়।
×