ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃত্তির ফল নিয়ে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

বৃত্তির ফল নিয়ে প্রতারণা

শিক্ষা ‘বাণিজ্য’ নিয়ে আমাদের দেশে সমালোচনা বিস্তৃত ও পুরনো। টাকার বিনিময়ে নামসর্বস্ব ও অবৈধ দেশী-বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্র্যাজুয়েট থেকে পোস্ট ডক্টরেট পর্যন্ত সনদ বিক্রি, স্বজনপ্রীতি কিংবা টাকার বিনিময়ে শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার খবরও পুরনো। এমনকি টাকার বিনিময়ে ভর্তি বাণিজ্যের কথাও বেশ প্রচলিত। কিন্তু টাকার বিনিময়ে বৃত্তির ফল পাল্টে দেয়ার খবর সত্যি দুঃখজনক। এটাকে বাণিজ্য বলার অবকাশ সামান্যই। আমরা মনে করি, এটা নিছক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এমনই এক সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে শুক্রবারের জনকণ্ঠে। জানা যায়, সাতক্ষীরায় টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রাপ্তনম্বর পাল্টে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগের তদন্তে জেলার একটি উপজেলাতেই দশটি অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। কমিটি শিক্ষার্থীর ফল বদলে বেশি নম্বর দিয়ে বৃত্তি পেতে সহযোগিতা করা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দিয়ে বৃত্তি না পাওয়ার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। তদন্ত কমিটি এসব বিষয়ে সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার আরও চারটি উপজেলা থেকে ৩৩ অভিভাবক তাদের সন্তানদের খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে ১০ ফল পরিবর্তনের অভিযোগে কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে সুপারিশ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি দেশের একটি উপজেলার চিত্র হলেও তা সমগ্র দেশের প্রতিচ্ছবি কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত মেধাবীর ফল কম মেধাবীর পক্ষে চলে যাওয়া প্রকৃত শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা। অবিলম্বে এহেন প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অন্যথায় যদি এই ধরনের কার্যক্রম নির্বিঘেœ চলে, তাহলে আমাদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এমনিতেই দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় নানা সমস্যা বিদ্যমান। সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক স্কুলগুলোর মানের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ করা যায়। সেখানে শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। পাঠদানসহ স্কুলের নানা কর্মকাণ্ডে বহু স্কুল পিছিয়ে রয়েছে। আগে দেশে ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারী প্রাথমিক স্কুল ছিল। ২০১৩ সালে একসঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি নিবন্ধিত প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে সরকার। এসব বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস করা শিক্ষক আছেন ৫৪ হাজার ৮৪১ জন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা মূল্যায়নে দেখা গেছে, জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নেই। বলা হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষার মান কমছে। সেই অবস্থায় টাকার বিনিময়ে ফল পাল্টে দেয়ার এই ধরনের সংবাদ সুখকর নয়। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে শিক্ষার পবিত্র অঙ্গনে এই ধরনের অনৈতিকতা দূর করা সম্ভব। এই ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
×