ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাল ও গমের ওপর চাপ কমাবে সাদা ভুট্টা

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২২ এপ্রিল ২০১৭

চাল ও গমের ওপর চাপ কমাবে সাদা ভুট্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের কৃষি প্রধান দেশে খাদ্যাভ্যাসে চাল ও গমের প্রাধান্যই বেশি। তবে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সে তুলনায় চাল ও গমের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভবিষ্যতে হিমশিম খেতে পারে দেশের সরকার। ওই বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার চাল ও গমের ওপর চাপ কমাতে সাদা ভুট্টা চাষের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে খাদ্য বিভাগ। সাদা ভুট্টা খেতে সুস্বাদু ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। তাছাড়া আটা ও হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভূট্টার দানা মিহি হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা অন্যতম সুষম খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ ভুট্টা থেকে ৩০/৩৫ প্রকারের খাদ্য দ্রব্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। খাবারের গুণগত মান, কম খরচে উৎপাদন ও রপ্তানীযোগ্য হওয়ায় কৃষি বিভাগের তদারকিতে কৃষি ও খাদ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোণা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, বানেশ্বরদী ইউনিয়নের চাষিরা সাদা ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এ ভুট্টা চাষে অধিক লাভ দেখে অন্যসব ইউনিয়নের কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। অনুর্বর জমি, মাত্র একটি সেচ, কম পুঁজিতে স্বল্পশ্রমে ও সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় উপজেলায় দিন দিন ভুট্টা চাষির সংখ্যা ও অনাবাদি জমিতে ভুট্টা আবাদের পরিমাণ বেড়েই চলছে। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই নকলা উপজেলায় বিভিন্ন দেশিয় জাতের অল্প পরিমাণে ভুট্টা চাষ করা হতো যার রং ছিলো হলুদ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এবার উপজেলায় ২ হাজার ৫০ একর (৮২০ হেক্টর) জমিতে পাইওনিয়ার, এনকে-৪০, সুপার সাইন ও প্যাসিফিক জাতের ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই সাদা জাতের। তার মধ্যে রাজস্ব খাতের ৫৬ টি ও পুষ্টি প্রকল্পের ৩ টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। প্রতি একর জমিতে ১শ’ থেকে ১২০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। তাতে উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। অনেক চাষি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে উপজেলার অনেক অনুর্বর ও অনাবাদি ৭শ’ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাদের মতে, অনুর্বর ও অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষ করলে একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হবে, অন্যদিকে আসবে পুষ্টি ও টাকা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, ভুট্টা অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকরা অলাভজনক অন্য আবাদ ছেড়ে দিন দিন ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আর ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে এ বছর উপজেলার ৮০ জন চাষিকে প্রণোদনা দেওয়াসহ ভর্তুকি মূল্যে ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র ও বপনের জন্য বেড প্লেন্টার মেশিন বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। একই কথা জানান খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন।
×