ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইচ্ছা পূরণের মেলা

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ২২ এপ্রিল ২০১৭

ইচ্ছা পূরণের মেলা

ঘাগোয়া ইউনিয়নের কিংবদন্তি খ্যাত মীরের বাগানে প্রতিবারের মতো এবারও বসেছে ইচ্ছা বা মানত পূরণের মেলা। প্রতি বছর বৈশাখ মাস জুড়েই চলে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। মীরের বাগানের ঐতিহাসিক পীর শাহ সুলতান গাজী, মীর মোশারফ হোসেন ও ইবনে শরফুদ্দিন শাহর মাজার আর মসজিদের সামনে বসেছে এ মেলা। নির্দিষ্ট এলাকায় রয়েছে চারু, কারু পণ্যসহ বেচাকেনার নানা পসরা সাজানো ছোট ছোট দোকান। এর সঙ্গে রয়েছে নানা মিষ্টি, মুড়ি, জিলাপির দোকান। আর মাজার সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী চুলা বানিয়ে চলে বিশেষ খিচুড়ি রান্না। মানত বা ইচ্ছা পূরণের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত ভক্ত নারী-পুরুষ এখানে এসে মাজার জিয়ারত করে। খিচুড়ি রান্না করে। রান্না খিচুড়ি মাজার ও দরিদ্রদের মধ্যে বিলি করে নিজেরা খায়, বাড়িতেও নিয়ে যায়। এখানে বৈশিষ্ট্য হলো মুরগির মাংসের খিচুড়ি রান্না করা হয়। ভক্তরা বাড়ি থেকে চাল-ডাল, মুরগি, জ্বালানি কাঠ, কাঁচামরিচ আর পিঁয়াজ কেটে নিয়ে আসে মাজারে। নির্দিষ্ট স্থানে মুরগি জবাই করে কেটে-কুটে মাজারের সামনে চুলায় রান্না করা হয় খিচুড়ি। ভক্তরা জানায়, দুরারোগ্য অসুখ, সন্তান কামনাসহ নানা সমস্যা সঙ্কট নিরসনে মানত পূরণের লক্ষ্য নিয়ে তারা এখানে আসে। মাজারের মোতওয়ালী কারী আলী আশরাফী জানান, দারিয়াপুরের মীরের বাগানের সঙ্গে ইতিহাসখ্যাত মীর জুমলার সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে রয়েছে কিংবদন্তি। অতীতে বিশাল আমবাগানের জন্য এই মীরের বাগান খ্যাত ছিল। ১৩০৭ সালে কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগণার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেন। ময়মনসিংহের কারী করিম বক্সের উত্তরাধিকারীরা বংশ পরম্পরায় মোতওয়াল্লী হিসেবে এই ওয়াক্ফ সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। জনশ্রুতি আছে, সংস্কারকালে মসজিদের ভেতরে একটি কালো পাথর পাওয়া যায়। এতে ‘১০১১ই সাই’ উৎকীর্ণ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের কোন এক সময় তা হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধান করেও কালো পাথরটির আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। মীরের বাগানের পীর সাহেবের মাজার জাতিধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখে। অসুখ-বিসুখ কিংবা যে কোন ধরণের ‘বালামুসিবত’ দূর করতে বহুদূর থেকে মানুষ এখানে এসে ‘মানত’ করে। বিশেষত সন্তানধারণে অক্ষম মেয়েরা এখানে মানত করলে সন্তান সম্ভাবনা হয় বলে স্থানীয়দের ধারণা। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে বিরাট আকারে মেলা বসে। স্থাপত্যকলার বিচারে মীরের বাগানের মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে হিন্দু-মুসলিম উভয় ধর্মমতের শিল্পরীতির বিন্যাস লক্ষ্যণীয়। Ñআবু জাফর সাবু গাইবান্ধা থেকে
×