ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ১৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পাল্টে যাবে নগর চিত্র

রাজশাহী মহানগর উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২২ এপ্রিল ২০১৭

রাজশাহী মহানগর উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নাগরিকবান্ধব ও টেকসই নগরায়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ১৭৩ কোটি টাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণের মতো অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিদ্যমান বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সর্বশেষ সভায় পাস হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানসম্মত ভৌত অবকাঠামো, সড়ক, নর্দমা, কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে টেকসই ও নাগরিকবান্ধব আবাসস্থল হিসেবে দৃশ্যমান হবে রাজশাহী মহানগরী। ফলে পাল্টে যাবে এ নগরের চিরচেনা রূপ। এমনটায় আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, নগরীর যানজট নিরসনে ১৩২ কিলোমিটারের বেশি নতুন সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় ৪৯ কিলোমিটারের বেশি পাকা ড্রেনেজ নির্মাণ করা হবে। পথচারীদের চলাচলের জন্য সাড়ে ১৯ কিলোমিটার ফুটপাথ করা হবে এবং নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সড়কের পাশে দেয়াল নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর কেন্দ্রস্থলে ও অন্যান্য সড়কে ময়লা ফেলার ব্যবস্থা, ৪ কিলোমিটারের বেশি সড়কে বাতির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নগরীর ৪ দশমিক ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে রেলস্টেশনের উন্নয়ন করা হবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী। এদিকে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একনেক সভায় রাজশাহীর সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে। ফলে নগর উন্নয়নে আশার সঞ্চার হয়েছে। রাসিক সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানসম্মত ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ নগরীর চেহারা বদলে যাবে। পরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নাগরিক সেবাও বৃদ্ধি পাবে। আগামী ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে বলে মনে করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী দেশের চতুর্থ বৃহত্তম মহানগরী। মোট ৯৩ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ নগরীতে ৩০টি ওয়ার্ড রয়েছে, যা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এ ছাড়া পাশের জেলা ও উপজেলা থেকে অভিবাসনের ফলে মূল নগরীর জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিবাসনকৃত জনগণ নগরীর অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ওয়ার্ডগুলোয় বাস করেন, যেখানে নতুন রাস্তা ও নর্দমা নির্মাণের প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যমান রাস্তাগুলো অত্যন্ত সরু এবং নর্দমাগুলো অগভীর হওয়ার কারণে যানজট ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকার ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। এর ফলে নাগরিক সেবাগুলো জনগণের কাছে নির্বিঘেœ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ফলে নগরবাসীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। জানা গেছে অনুমোদিত প্রকল্পটি মোট ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৯ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৩২ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ওভারলেনের মাধ্যমে সড়ক উন্নয়ন ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ, ৪৯ দশমিক ২১ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন এবং ক্রস ড্রেন নির্মাণ, ১৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার পাশে ২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রক্ষণামূলক দেয়াল নির্মাণকাজ। এছাড়া সিটি হাটের চারদিকের সড়কে মাটি ভরাটকরণ ও ৪ দশমিক ২৩ কিলোমিটার সড়ক আলোকায়ন রয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। এ বিষয়ে রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নগরবাসীর উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আগামীতে এ প্রকল্প যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করবে সিটি কর্পোরেশন। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন, সরকারী-বেসরকারী অংশীদারত্ব, নাগরিকদের অংশগ্রহণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাসাবাড়ির বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তার মতো পরিবেশগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।
×