ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুক না পেয়ে এসিড মেরে স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দারোগার

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২২ এপ্রিল ২০১৭

যৌতুক না পেয়ে এসিড মেরে স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দারোগার

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ২১ এপ্রিল ॥ পুলিশ লাইন্সের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআইবিল্লাল হোসেন যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বেচ্ছায় তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রী সহিদাতুজ জান্নাতকে এসিড মেরে অথবা গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী সহিদাতুজ জান্নাত বর্তমানে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, গৃহবধূ সহিদাতুজ জান্নাতের বাড়ি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকায়। তিনি সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। ২০১৫ সালে এক অনুষ্ঠানে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার হালগড়া গ্রামে। বিল্লাল হোসেন পরবর্তীতে সহিদাতুজ জান্নাতের কাছে ফোন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে বিল্লাল হোসেন কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে পদোন্নতি পান। চাকরিতে পদোন্নতি হওয়ার পর বিল্লাল হোসেন সহিদাতুজ জান্নাতকে বিয়ে করে জামালপুর শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার প্রস্তাব দেন। মাস্টার্স পরীক্ষার কথা বলে সময় চাইলে বিল্লাল খুব শীঘ্রই বদলি হয়ে যাবেন বলে তাকে জানান। একপর্যায়ে তিনি মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার স্বজনদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে গত বছরের ৫ নবেম্বর ৬ লাখ টাকার দেনমোহর উল্লেখ করে তাদের বিয়ে নিবন্ধন হয়। বিয়ের চারদিন পর বিল্লাল হোসেন স্ত্রীকে ৫ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন এবং ১০ দিনের মধ্যে না দিতে পারলে তাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন। সহিদাতুজ জান্নাত এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে জামালপুর আদালতে মামলা করেন। পুলিশের চাকরি হারানোর ভয়ে বিল্লাল হোসেন গত ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সহিদাতুজ জান্নাতকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করে তাকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করবে, আর কখনও অত্যাচার করবে না, এমনকি কখনও যৌতুক দাবি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে জামিনে মুক্ত হন। ওইদিনই বিল্লাল তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই গ্রহণ করে হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কিছুদিন না যেতেই বিল্লাল হোসেন তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু মেয়েটি এএসআই বিল্লাল হোসেনকে স্বেচ্ছায় তালাক দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে এসিড মেরে অথবা গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। এতে তিনি মানসিক যন্ত্রণা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এএসআই বিল্লাল হোসেন বলেছেন, সহিদাতুজ জান্নাত আমার স্ত্রী। তাকে আমি নির্যাতন করি নাই। কোন হুমকিও দেই নাই। আমি তার কাছে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দেই নাই। আমাকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে সে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এরপরও আমি আদালতে মুচলেকা দিয়ে তাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়েই চলেছি। স্বেচ্ছায় তালাক দিতেও আমি বলি নাই। আমি তার সঙ্গে এসব বিষয়ে নিয়ে আপোসে থাকার দৃষ্টিভঙ্গিতে কথা বলতে চাইলে সে রাজি হয় না। উল্টো মামলার বিচারে যা হয় হবে বলে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। সে আসলে আমাকে হয়রানি করার জন্যই এসব করছে।
×