ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাদে বাগান

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২২ এপ্রিল ২০১৭

ছাদে বাগান

ঢাকা নগরী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, বাড়ছে সুউচ্চ অট্টালিকার সংখ্যা। এতে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশগত সমস্যা। শুধু তাই নয়, সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও রাজধানীর সামগ্রিক পরিবেশকে অসহনীয় করে তুলছে। আর গ্রীষ্মের খরতাপে তাপমাত্রার আধিক্য তো আছেই। আরও রয়েছে তীব্র যানজটের দুঃসহনীয় যন্ত্রণার পীড়ন। এই ধরনের অসহনীয় পরিবেশকে কিছুটা সহনীয় এবং আরামদায়ক করতে ভিন্ন মাত্রার কর্মযোগের সুপারিশ বিবেচনায় আনা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের ছাদে বাগান করার পরামর্শ এসেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের পক্ষ থেকে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৬০% জায়গা দখল করে আছে বিভিন্ন ভবনের ফাঁকা ছাদ। যা ঢাকাকে একটি উষ্ণপ্রধান নগরীর দিকে ক্রমান্বয়ে ঠেলে দিচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই অসহ্য পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে যদি ‘ছাদ বাগান’ বা ‘ছাদ কৃষি’র মতো উৎপাদন সহায়ক গাছপালা রোপণ করা যায়, তাহলে সেটা তাপমাত্রার আধিক্যকে কমিয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপরিকল্পিতভাবে ছাদে বাগান বা কৃষির ব্যবস্থা করতে পারলে তাপমাত্রা প্রায় ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাদে বাগানের একটি মডেলও প্রস্তুত করেছে। যেখানে রাস্তা থেকে শুরু করে বসার জায়গা, শাক-সবজি, ফুল, ফল, ঔষধি এবং অন্যান্য গাছের জন্য বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যা বৈচিত্র্য, দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় স্থান এবং কিছুটা হলেও দৈনন্দিন খাদ্য উৎপাদনের জায়গা হিসেবে বিবেচিত হবে। ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য শরীরের জন্য যেমন নিরাপদ, একইভাবে তা অনুকূল পরিবেশ ও আবাসন স্থানকে দূষণমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সবুজ গাছপালা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর যে ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তা স্বাস্থ্য এবং পরিবেশকে নির্মল ও বাসযোগ্য করতে অত্যন্ত জরুরী। আমরা জানি বাতাসের ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে গাছ টেনে নেয়, পরিবর্তে প্রয়োজনীয় এবং উপকারী অক্সিজেন বাতাসে ছেড়ে দেয় যা বাতাসের সামগ্রিক উপাদানকে সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ধরনের শাক যেমন লাল শাক, পালং, ডাঁটা এবং কচুশাকের মতো ভিটামিনযুক্ত সুষম খাদ্যকে ছাদ বাগানে বিশেষ ব্যবস্থায় ফলানো অনেকটাই সম্ভব। পেঁপে, বেগুন, ঢেঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেবু, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, ক্যাপ্সিকামের মতো সবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকÑ এসবও ছাদ কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদন করা অসম্ভব নয়। এ ছাড়া আম, পেঁপে, বেল, কামরাঙ্গা, আতা, শরীফা ইত্যাদি ফলও এখন অতি সহজেই ছাদ বাগানে ফলানো যায়। বাজারের ফরমালিনমুক্ত শাক-সবজি এবং ফলমূলের চাইতে নিজের উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী সুস্বাস্থ্যের অন্যতম সহায়ক। পাশাপাশি দূষণমুক্ত পরিবেশ এবং তাপপ্রবাহ কমানোরও বিশেষ সহায়ক হতে পারে। অনেক কম দামে এসব শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন করে বেশি মূল্যের পর্যাপ্ত খাদ্য নিজস্ব ছাদ বাগান থেকে তুলে নিত্যদিনের চাহিদা মেটানোর সম্ভাবনাকে কোনভাবেই এড়ানো উচিত নয়। তাই ছাদ বাগান ঢাকা শহরসহ সারা বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য তালিকায় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে এমন প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। এর মাধ্যমে অনুকূল বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।
×