ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষণ মানেই দুর্ভোগ, চট্টগ্রামে জলজটের শেষ কোথায়-

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ এপ্রিল ২০১৭

বর্ষণ মানেই দুর্ভোগ, চট্টগ্রামে জলজটের শেষ কোথায়-

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আকাশে কালো মেঘ কিংবা আবহাওয়ার খারাপ পূর্বাভাস প্রচার হলেই চট্টগ্রামবাসীর মনে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। বর্ষণ মানেই দুর্ভোগ, শুধু দুর্ভোগ আর ক্ষতি। মাঝারি, ভারি বর্ষণ আর যাই হোক মহানগরজুড়ে দ্রুততম সময়ে পানি আর পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, থমকে যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বাণিজ্যপাড়াগুলোতে বিভিন্ন আমদানি পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে শুক্রবার দিনভর চলে মুষলধারে। এতেই চট্টগ্রাম নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। পানি আর পানি। পুরো নগরীই যেন একটি সুইমিংপুল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একই কথা ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগের অবসান হবে না। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ দুর্ভোগ তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। চট্টগ্রামে ছোটবড় অর্ধশত খাল রয়েছে, যা মাটি ভরাট হতে হতে ছোটখাটো ড্রেনে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে চাক্তাই খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বাণিজ্যপাড়া খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, চর চাক্তাই, আসাদগঞ্জ, কোরবানিগঞ্জ, মাঝিরঘাট থেকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা জলজটে একাকার হয়ে যায়। কোথাও হাঁটুপানি, কোমরপানি আবার কোথাও বুক পর্যন্ত পানি জমে যায়। বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের জলজট পরিস্থিতির কেবলই অবনতি ঘটছে। ভারি বর্ষণের সঙ্গে জোয়ার থাকলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বেশি। শুক্রবারও তাই হয়েছে। ভারি বর্ষণের সময় ছিল ভরা জোয়ার। এ সময় ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দফতর; যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে ষোলোশহর, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ নি¤œাঞ্চলে দ্রুততম সময়ে ব্যাপক জলজট সৃষ্টি হয়। রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন পানিতে তলিয়ে গিয়ে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে আটকা পড়ে যায়। এ সময় পথচারীর অনেককে ভ্যান গাড়িতেই রাস্তা পাড়ি দিতে দেখা যায়। মূলত বিভিন্ন পাহাড় থেকে বৃষ্টির সঙ্গে মাটি নেমে আসার ঘটনা, কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং না হওয়া এবং শহর এলাকার অভ্যন্তরে খালগুলো সংস্কারমুক্ত না হওয়ায় ভয়াবহ জলজটের কারণ। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শুক্রবার কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নিষ্কৃতি পাবে। কথাটা সত্য। তবে যত গ-গোল পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। যে স্থানে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রযোজন সে স্থানে হয় না, আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘটে যায় পুকুর চুরি। ফলে অবস্থা তিমিরেই থেকে যায়। চট্টগ্রামবাসী বছরের পর বছর এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আসছে। মনোনীত প্রথম মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর নাছিরের আমলে যা ছিল পরবর্তীতে নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, এম মঞ্জুর আলম এবং বর্তমান আ জ ম নাছির উদ্দিনের আমলেও এ দুর্ভোগ উত্তরণে কোন হেরফের ঘটেনি। অবস্থা সে আগের মতোই গেছে। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। এতে নগরবাসীর ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি ডেকে আনে। সঙ্গত কারণে বৃষ্টি মানেই চট্টগ্রামবাসীর জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, নির্বাচন এলে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সমাধানের যে প্রথম আশ্বাসটি দেয়া হয় সেটি হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন। সঙ্গে থাকে অসংখ্য আশ্বাস। জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাসটি কথার কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরবাসীর আক্ষেপ, একটি সুইমিংপুল প্রতিষ্ঠার জন্য গত কদিন আগে যে লঙ্কাকা- ঘটে গেছে, সেক্ষেত্রে বর্ষণের কারণে পুরো নগরী একটি সুইমিংপুলে রূপ নিয়েছে। বর্ষণের কারণে নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় তা পরিসংখ্যান না করলে অনুভবে আনা কঠিন। প্রচারমাধ্যমসহ বিভিন্ন সমাবেশ এবং টকশোতে এ সমস্যা নিয়ে যত কথা হয় তার চুল পরিমাণও সমাধান নেই। অথচ, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবছরই বরাদ্দ আসে। সে বরাদ্দ দিয়ে খনন কাজের জন্য স্ক্যাভেটরসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় করার ঘটনাও রয়েছে। এমনও দেখা গেছে, খাল সংস্কার কাজে স্ক্যাভেটরও পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে আছে। চসিক সূত্রে জানানো হয়েছে, বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় সরকারী বরাদ্দ মেলেনি। ফলে সংস্কার কাজ প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই হয়নি। এ কারণেই বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলজট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বর্তমান চসিক প্রশাসন যে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান অনুমোদনের জন্য পেশ করেছে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুমোদন না পেলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলজট পরিস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারে। এছাড়া শহর এলাকার প্রায় অর্ধশত ছোটবড় খালের দুই তীর দখল হয়ে গেছে। এসব অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদের ঘটনা নামমাত্র। সমস্যা উত্তরণে রাজনীতির পাশাপাশি আর্থিক বিষয়টিই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বরাবরই দেখা গেছে, প্রশাসন অতীতকে দোষারোপ করে পার পেয়ে যাওয়ার তৎপরতা চালায়, যা এখনও চলমান। অথচ, চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে উত্তরণে রয়েছে সহজপন্থা। খালগুলো সংস্কার করে পূর্বের রূপে ফিরিয়ে আনা এবং পরিকল্পিত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা গেলেই নগরবাসী দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। বাণিজ্যপাড়া মোটা অঙ্কের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়।
×