ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার ঘোষণা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায়ও অনেক এলাকায় সরবরাহ ছিল না ॥ অপ্রীতিকর ঘটনা

গ্যাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ মিরপুরবাসীর

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ এপ্রিল ২০১৭

গ্যাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ মিরপুরবাসীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘোষণার অতিরিক্ত সময় গ্যাস বন্ধ থাকায় শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের তীব্র দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যদিও তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বলছে, দুপুর ১২টা থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। তবে কোন এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে জরুরী সংস্কার দল সেখানে পাঠানো হচ্ছে। সারাদিন গ্যাস না থাকায় দুপুরের খাবার কিনতে হোটেলেই ছুটতে হয়েছে বাসিন্দাদের। এমনকি খাবার নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সন্ধ্যা নাগাদ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, দুপুর ১২টার পর থেকেই গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবে কোন এলাকায় বিশেষ সমস্যা হলে সেগুলো তিতাসের জরুরী বিভাগ দেখছে। স্থানীয়রা বলছেন, অনেক দিন ধরেই মেট্রো রেল আর ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তাদের কাজ শেষই হয় না। কাজেই ভোগান্তিরও যেন শেষ নেই। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে চলাচলের সমস্যার সঙ্গে শুক্রবার মীরপুরবাসীর সঙ্গী হয়েছিল গ্যাসের সঙ্কট। হুট হাট গ্যাস বন্ধের প্রতিবাদও জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, মিরপুর ১, ২, ৬, ৭, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মনিপুর, আগারগাঁও, তালতলা, কচুক্ষেতসহ আশপাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ শুক্রবার সকাল ৮টায় স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন কোন এলাকার সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা বাদল ম-ল শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, সকাল থেকেই তার বাসায় গ্যাস ছিল না। দুপুর ২টার পর গ্যাস আসতে শুরু করলেও তা রান্না করার উপযোগী নয়। তিনি জানান, তার এলাকায় সিসিলিয়ান চায়নিজ রেস্টুরেন্টে দুপুরে বিয়ের আয়োজন ছিল। কিন্তু গ্যাস না থাকায় দুপুরের খাবার দিতে দেরি হওয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পল্লবী থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিতাস হুট হাট গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে। এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারেরও অভাব রয়েছে। এতে প্রায়ই নগরবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক বিড়ম্বনা নিয়ে মাথাই ঘামায় না প্রতিষ্ঠানটি। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বৃহস্পতিবার পাঠানো ‘জরুরী গ্যাস শাট ডাউন বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট মেট্রো রেল প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইন স্থানান্তরের নিমিত্তে টাই-ইন কাজের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা রাজধানীর একাধিক স্থানে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ থাকবে। তবে সকাল ৮টার পরেও গ্যাসের সরবরাহ না আসায় বিপাকে পড়তে হয়েছে। মিরপুর কাজীপাড়া এলাকার গৃহবধূ আহসান আরা ইসলাম বলেন, গ্যাস না থাকায় রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। তারা গ্যাস বন্ধর এই ঘোষণা জানতেন না। সঙ্গত কারণে তাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। বিকেলে গ্যাস এলেও চাপ স্বাভাবিক না হওয়ায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। তিতাস গ্যাসের মিরপুর জোনের কর্মকর্তা বাহারুল হক বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে সকাল ১০টা পর্যন্ত গ্যাস থাকবে না- এমন ঘোষণা ছিল। তবে কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। কখন গ্যাস আসতে পারে জানতে চাইলে তিতাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এইচএম ইসলাম বলেছেন, সব এলাকায় গ্যাস পৌঁছাতে রাত হয়ে যেতে পারে। তিতাসের পদস্থ আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কাজ করতে গিয়ে কিছু এলাকায় পানি চলে এসেছে। এছাড়াও কিছু এলাকায় আগুন ধরে যাওয়ায় সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এতে করে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। তবে তিনি জানান, রাতের মধ্যেই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জুমার নামাজের পর স্থানীয় খাবারের দোকানে চোখে পড়ার মতো ভিড় ছিল। ভাত না কিনতে পেরে অনেকেই ছুটে গেছেন শুকনা খাবার কিনতে। কেউবা রান্নায় গ্যাসের বিকল্পও খুঁজে নিয়ে যান। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সবাই বাসাতেই থাকে। সঙ্গত কারণে মেট্রোরেলের জন্য গ্যাস লাইন পরিবর্তন অন্য দিন করা উচিত ছিল বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
×