ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদ এখন বাবলুর মামাশ্বশুর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ এপ্রিল ২০১৭

এরশাদ এখন বাবলুর মামাশ্বশুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক কারণে এরশাদের সঙ্গে দূরত্ব ছিল তার দলেরই শীর্ষ নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর। দ্রুত সময়ের মধ্যে এরশাদের সঙ্গে বিরোধ মিটে যাবে এরকম কোন আলামত ছিল না। বাবলুর রাজনৈতিক কর্মকা-ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পার্টির মহাসচিবের পদ থেকেই বহিষ্কার করেছিলেন এরশাদ। এরপর থেকেই মূলত টানাপোড়েন শুরু। এবারের খবর একেবারেই ভিন্ন। বাবলুর শ্বশুর হলেন খোদ এরশাদ। এক সময়ের দোর্দ- প্রতাপশালী সেনা শাসক ছিলেন এইচ এম এরশাদ। তাতে কি। পারিবারিক বন্ধনের কারণে এখন তাকে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে জামাইয়ের সম্মান দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ একেবারেই আপনজন হয়ে এরশাদের ঘরে প্রবেশ করলেন সাবেক মন্ত্রী বাবলু। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এতদিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পেয়েছেন পার্টি চেয়ারম্যান হিসেবে। শুক্রবার মামা শ্বশুর হলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বারিধারার এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে ভাগ্নি মেহেজেবুন্নেসা রহমান টুম্পার সঙ্গে বিয়ে হয় জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব বাবলুর। এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেস সচিব সুনীল শুভরায় বলেন, সকাল থেকে স্যারের (এরশাদ) বাসায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে ছিলেন তিনিসহ দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। জানা গেছে, দুই পক্ষের আলোচনায় পারিবারিকভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু গত সপ্তাহে জনকণ্ঠকে বলেন, বিয়ের আয়োজন হবে ছোট্ট পরিসরে। সবকিছু দেখভাল করছেন স্যার (এরশাদ)। এতে উভয় পক্ষের আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত থাকবেন। পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাবলু-টুম্পার আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সন্ধ্যায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাতটা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। এতে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনসহ দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সব মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক অতিথি এতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বাবলুর বিয়ের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়াও সরকারের মন্ত্রিপরিষদের প্রভাবশালী কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে জানা গেছে। এরশাদের বোন জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের মেয়ে মেহেজেবুন্নেসা রহমান একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএর সহকারী অধ্যাপক মেহেজেবুন্নেসা রহমান টুম্পারও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম পক্ষে তার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রয়েছে। আর বাবলু দশম জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও ছিলেন ৬০ বছর বয়সী বাবলু। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবেও আছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে এরশাদ তাকে বিশেষ সহকারীর পদে নিযুক্ত করেছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিয়ের পর বাবলুর প্রথম স্ত্রী ফরিদা সরকার ২০০৫ সালে ক্যান্সারে মারা যান। ফরিদাও একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় ছিলেন। ফরিদার মৃত্যুর পর থেকে তাদের একমাত্র সন্তান আশিক আহমেদকে নিয়েই ছিলেন বাবলু। আশিক পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা করছেন, বিয়েও করেছেন। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও প্রতাপশালী ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। ছিলেন ডাকসুর জিএস। এরশাদ সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ছাড়াও পরবর্তী সময়ে এই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পর্যটনমন্ত্রীও ছিলেন। চট্টগ্রামের রাউজানের কদলপুরে তার গ্রামের বাড়ি হলেও জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি ছিলেন বেশি সম্পৃক্ত। তার বিয়ের খবরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সবাই বাবলুকে ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও করতে শুরু করেছেন।
×