ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পানি দূষিত, বাতাসে দুর্গন্ধ ॥ কিশোরগঞ্জে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার ফসলহানি

হাওড় পারের মানুষের চোখে অন্ধকার, খামারিদের উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ এপ্রিল ২০১৭

হাওড় পারের মানুষের চোখে অন্ধকার, খামারিদের উদ্বেগ

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ হাওড় পাড়ের মানুষের চোখে এখন অন্ধকার। বৈশাখের এমন দিনে যেখানে ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা, সেখানে তাদের অলস কর্মহীন দিন অতিবাহিত হচ্ছে। ফাল্গুনের শেষ দিক থেকে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে আগাম বন্যা দেখা দেয়। তলিয়ে যায় বোরো ফসল। গত ১০ দিনে পানি কমতে শুরু করেছে। কাঁচা ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে আরেক বিপত্তি। অকাল বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এইসব আধাপাকা ধান ও ধানগাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। এছাড়া ধানগাছ এবং ঘাস নিধনের বিষের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে হঠাৎ পানির পিএইচ (পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন) কমে গিয়ে স্বাভাবিক ৭ মাত্রা থেকে পিএইচ ৫.৮ মাত্রায় নামায় এ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস (৫ পিপিএম) হওয়ায় ধান ও মাছ পচে হাওড়ের পানি দূষিত হয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সিলেট বিভাগের বৃহত্তম হাওড় হাকালুকিসহ বিভিন্ন হাওড়ে মাছের মড়ক দেখা দেয়। হাকালুকি হাওড়ে আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, কাল বাউস, সরপুঁটি, পাবদা, গুলশা, টেংরা, পুঁটি, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চলে এ পর্যন্ত শতাধিক টন মাছ মারা গেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডুবে যাওয়া ধানে ব্যবহৃত কীটনাশক ও সার পানিতে মিশে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, আধাপাকা ধান ও ধান গাছ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করেছে। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে হাওড়াঞ্চলের সর্বত্র মাছ মরে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই হাওড়ে খাবার খেয়ে মারা যাচ্ছে হাঁসও। আকস্মিক বন্যায় হাকালুকি হাওড়ের ধান নষ্ট হওয়ার পর মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা ছিল সেখানকার মানুষের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। কিন্তু স্থানীয় মানুষের দুর্দশা এখানেই শেষ হয়নি। হাওড়ে মাছ মড়কের সঙ্গে হাঁস মড়কের ফলে গরিব কৃষকসহ খামারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওড়ের পাশের অনেক মানুষের জীবিকা হাওড়ে হাঁস পালনের ওপর নির্ভরশীল। হাওড়ে বিচরণ করা এমন শত শত হাঁস মরে হাওড়ে ভেসে উঠছে। কুলাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাইফুদ্দিন জানান, হাঁসের মড়ক প্রতিরোধে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাওড়ে চিকিৎসক টিম হাঁসের মধ্যে ভ্যাকসিনসহ ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি হাওড়ের পানিতে হাঁস না ছাড়ার জন্য খামারিসহ কৃষকদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়ার কাজ চলছে। সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, বন্যার পানিতে আধাপাকা ধান পচে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এই হাওড়ের খাবার খেয়ে হাঁস মারা যাচ্ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন সুলতানাও হাঁস ও মাছের মৃত্যুর জন্য বিষক্রিয়াকেই দায়ী করেছেন। তার মতে ধান পচে এটা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মরা মাছ বা হাঁস খেলে মানুষের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষতি হতে পারে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সভাপতি ড. মোঃ শাহাবউদ্দিন বলেন, পচা মাছ থেকে বের হওয়া এ্যামোনিয়ায় হাওড়ের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। মরা মাছ বা পাখি কেউ যেন কোন অবস্থাতেই খেতে না পারে তার জন্য নজর রাখা দরকার। বড়লেখা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘চলতি মাসে অকাল বন্যায় বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি অংশে প্রায় ১৮০০ হেক্টর বোর ধান তলিয়ে যায়। উপজেলার হাকালুকি অংশে প্রায় ২২৭৫ হেক্টর বোর ধান আবাদ করা হয়। আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়েছিল ২২৭৫ হেক্টর। কিন্তু হঠাৎ করে পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাকালুকি হাওড় অংশের ১৮০০ হেক্টর ধান পানির ২/৩ ফুট নিচে তলিয়ে যায়। এতে হাকালুকি হাওড় অংশের ৩টি ইউনিয়ন বর্ণি, সুজানগর ও তালিমপুর ইউনিয়নের ৪১২০ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওড় অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীদের তালিকা করা হচ্ছে। অতি দ্রুত তাদের সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া খাদ্য ও অর্থ সহায়তা (জিআর) কর্মসূচীর আওতায় ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে এই চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এদিকে হাকালুকিতে মাছ মড়ক বন্ধে মৎস্য অফিসের উদ্যোগে চুন ও ওষুধ ছিটানোর কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ফেঞ্চুগঞ্জ হাকালুকি হাওড়ের মাছ, হাঁস মড়কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার দুপুরে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে এক সচেতনতা সভায় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এ কার্যক্রম হচ্ছে, হাওড়ের পানিতে ক্ষতিকর এ্যামোনিয়ার প্রভাবে রোগাক্রান্ত মাছ, হাঁস ক্রয়-বিক্রয় ও খাওয়া যাবে না। পানির এ্যামোনিয়ার প্রভাব কাটানোর সব চেষ্টা করা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে পরিবেশ স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। হাওড় বিলে কারেন্ট জাল, সুতার জাল, মশারি জাল দিয়ে মাছ না ধরতে অনুরোধ করে বলেন, এগুলো আইনত দ-নীয় অপরাধ। এসব থেকে বিরত থেকে কেউ এ কাজ করলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে বলেন। তার উপস্থিতিতে রোগাক্রান্ত মাছ, হাঁস না খাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করানো হয়। সচেনতা সভায় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার হোসাইন মোঃ হাই জাকি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ মফজুল রহমান মজুমদার। লাইফ স্ট্রোক টিম শুক্রবার সকালে ফেঞ্চুগঞ্জ হাকালুকি হাওড়ের মাছ ও হাঁসের মড়ক ঠেকাতে ‘লাইফ স্ট্রোক টিম’ আশিঘর এলাকায় এক জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করে। এ সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ, কীটনাশক, টিকাসহ জীবাণুনাশক সামগ্রীও বিতরণ করা হয়। সভায় রোগাক্রান্ত মাছ, হাঁস না খেতে ও আপাতত হাওড়ের পানিতে হাঁস না ছাড়তে বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা বলেন, আমরা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে হাঁসের খামার করেছি। এখন আমরা বিপদে পড়েছি। এ ব্যাপারে তারা সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। হাকালুকি হাওড়ে মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশে চুন প্রয়োগের ফলে পানির গুণাগুণ অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ টনেরও বেশি চুন পানিতে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হাকালুকির পানিতে পিএইচ ৭.৫, দ্রবিভূত অক্সিজেন ৫.৫ পিপিএম, এ্যামোনিয়া ০.৫ পিপিএম এবং টিডিএস ৬০ ছিল। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার থেকে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে হাকালুকি হাওড়ের পানি দূষণমুক্ত ও মাছ মড়করোধ করতে চুন ছিটানো শুরু হয়। উচ্চ পর্যায়ের সমন্বিত টিম গত দুদিন উচ্চ পর্যায়ের সমন্বিত একটি টিম হাকালুকি হাওড় পরিদর্শন করেছে। এসময় তারা স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। সরেজমিন হাকালুকি হাওড় পরিদর্শন টিমে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদি হাসান, মৎস্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (রিজার্ভ) মোঃ রমজান আলী, মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকার্তা আ.ক.ম শফিক-উজ-জামান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও জুড়িসহ মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পরিদর্শন শেষে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং পানি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে হাওড়ের অবস্থা প্রায় স্বাভাবিক বলে টিমের পক্ষ থেকে জানান কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। তিনি আরও জানান, মাছ মরা আপাতত বন্ধ রয়েছে। এদিকে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মোঃ গোলাম রাব্বি জানান- হাকালুকি হাওড় তীরের কুলাউড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের জন্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারী সাহায্য হাওড় পাড়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা চৈত্রের মাঝামাঝি প্রবল বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো প্লাবিত হয়ে ধ্বংস হয়েছে একমাত্র বোরো ফসল। এবার এ অঞ্চলে আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। এক সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বজ্রঝড়ের ঘনঘটা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারি থেকে অতি বৃষ্টি হতে পারে। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ সতর্কাবস্থা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মোঃ আব্দুর রহমান খান। ব্র্যাকের জরুরী ত্রাণ ১৫ কোটি টাকা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকায় আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় জরুরী ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জরুরী ত্রাণ সহায়তার আওতায় ১৫ কোটি টাকা দেবে ব্র্যাক। বন্যায় ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী এক মাসে ৫০ হাজার পরিবারকে এই সহায়তা দেয়া হবে। চলতি মাসের শুরুতে পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড় এলাকা তলিয়ে যায়। এর মধ্যে সিলেট জেলায় প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যে জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যা শুরুর পরপরই ব্র্যাক হাওড় এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছিল। কিন্তু মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জরুরী ত্রাণ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের এই সিদ্ধান্ত হয়। ব্র্যাকের দুর্যোগ পুনর্বাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, “হাওড়ে নতুন জটিলতাও দেখা দিয়েছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাছ ও হাঁস মারা যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যাতে এই ধকল সামাল দিতে পারে, সেজন্যই আমাদের এ কর্মসূচী। চার জেলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে এই ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে ব্র্যাকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, আগামীতে দুর্গত এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী নেয়ারও পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। সাড়ে ৬শ’ টাকার ফসলহানি নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত ৮টি উপজেলায় চলতি বছর ১ লক্ষ ২১ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। আবাদকৃত জমি থেকে ১ হাজার ৭১৮ টাকা সমমূল্যের ৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতি বৃষ্টির ফলে কৃষকের সে আশা ভেস্তে গেছে। ইতোমধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবাদি জমির ফসল তলিয়ে গিয়ে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মোট ফসলহানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি। এতে করে প্রায় ছয়শত কোটি টাকার সমমূল্যের চাল উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানা গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত উপজেলাসমূহে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭০টি বাঁধ রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই ইতোমধ্যে প্রচ- পানির ঢেউয়ের কারণে ভেঙ্গে গেছে। এতে করে ওইসব এলাকার বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-করিমগঞ্জ ও নিকলীতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও ৯ হাজার ৮৬০ হেক্টর আবাদি বোরো জমি। এতে আরও প্রায় দেড়শত কোটি টাকার ফসলহানি ঘটতে পারে বলে এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে শুক্রবার ভোররাতে আবারও অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলায় আরও দুটি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে করে আরও কয়েক হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে। অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দেবব্রত চক্রবর্তী জানান, অষ্টগ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় কলমা বাঁধটি শুক্রবার ভোররাতে প্রচ- বর্ষণের ফলে ভেঙ্গে গেছে। বিগত দিনে এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি রক্ষায় প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিও আর রক্ষা করা গেল না। তিনি আরও জানান, কলমা বাঁধটি ভেঙ্গে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মোট ৬৮ হাজার ১৭৭ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া এই তিন উপজেলার বাদ বাকি বিভিন্ন হাওড়ের বোরো ফসলও ঘরে তোলার অনুপযুক্ত। এ অবস্থায় অবিলম্বে হাওড়াঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার জন্য স্থানীয়ভাবে জোর দাবি উঠেছে।
×