ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখের আকাশে এবার আষাঢ়ের মেঘ!

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২২ এপ্রিল ২০১৭

বৈশাখের আকাশে এবার আষাঢ়ের মেঘ!

সমুদ্র হক ॥ জলবায়ুর পরিবর্তন না বিবর্তন! এবারের বৈশাখ এই প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছে। বৈশাখে কেমন করে ঢুকল আষাঢ় তা আবহাওয়াবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। আকাশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় কোন সঠিক রিডিং মিলছে না। মেঘ দেখে অঙ্ক করা হয় একটা ফল আসে আরেকটির। বৈশাখের এই সময়টায় আকাশ দখল করে নিয়েছে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ। ইংরেজী প্রবাদ আছে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। অর্থাৎ সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে!। এখন সকাল দেখলে দিন দূরে থাক সকালই বোঝা দায়। আকাশের সাদা মেঘ পালিয়েছে। কোন্ কোনায় যে কখন কালো মেঘ জমছে তারও হিসাব নেই। কখনও গোটা আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। মেঘলা আকাশে ঘর থেকে ছাতা নিয়ে বের হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো ছাতা কোথায় ফেলে রাখা হলো তা মনে থাকে না। আবার আকাশ মোটামুটি ভাল, ঘর থেকে খালি হাতে বের হয়েছেন। অমনি বলা নেই কওয়া নেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। তা আর থামে না। সঙ্গে মেঘের গর্জন আর বজ্রপাত। বৈশাখের কোন চিহ্ন নেই। বৈশাখের দিন যাচ্ছে আষাঢ়ের নিয়মানুযায়ী। প্রকৃতিতে চলছে ঋতু দখলের পালা। বর্তমানে ঋতু বৈচিত্র্য বলতে যা বোঝায় তা নেই। শীতকাল কখন এলো, মাঘ কখন এসে কখন ফিরে গেল তা টেরই পাওয়া গেল না। বসন্তের দিন টের পাওয়া গেল ফাল্গুনের অনুষ্ঠান ও সাজগোজ দেখে। চৈত্রে কাঠফাটা রোদ ছিল না। যে রোদ ছিল তা শীতল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন এটা বিকিরণজনিত ঠা-া। বঙ্গোপসাগর থেকে কোন হাওয়া আসছে না। যা আসছে তা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। বৈশাখেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত যে মৌসুমি বায়ু বয়ে যাওয়ার কথা তা এবার নেই। প্রাক মৌসুম শুরু হলেও তা ঠিক থাকছে না। পশ্চিমা লঘুচাপ, উচ্চচাপ বলয় এলোমেলো হয়ে আছে। মেঘ ও আর্দ্রতা ভূপৃষ্ঠে তাপ ধরে রাখতে পারে। এই সময়টায় তার কোনটিই ঠিক অবস্থানে নেই। আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস মেঘের ওপর নির্ভরশীল। মেঘদের পূর্ণ জীবনচক্র নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান করলে বৈশাখের পরিবর্তনের একটা হিসাব বের করা যেত। বাংলাদেশে মেঘের জীবনচক্র নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয় না। একজন আবহাওয়াবিদ বললেন, মৌলভীবাজারের ওয়েদার রাডার ঠিক রাখা এবং রংপুর ও বগুড়া আবহাওয়া অফিসকে মেঘ পর্যবেক্ষণে আধুনিকায়ন করলে জলবায়ু পরিবর্তনের আগাম আভাস দেয়া সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের আগাম আভাস না থাকার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। কৃষক ঠাহর করতে পারছে না কোন আবাদ কখন করবে। যেমন এবারের অনেক স্থানে মাঠের ফসল অকাল বন্যার কবলে পড়েছে। চৈত্র-বৈশাখে যা হওয়ার কথা নয়। দেশে সাধারণত কালবৈশাখীর সময় মার্চ এপ্রিল মে এই তিন মাস। মার্চ ও এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ও হালকা কালবৈশাখী বয়ে গেছে। বাতাসের গতি তেমন ছিল না। তবে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি ছিল। যা এখনও আছে। গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুড়িগ্রাম অঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকায় বর্ষাকালের মতো ঢল নামে। প্রবীণরা বলছেন, এবারের বৈশাখে বর্ষার মতো এমন আচরণ আগে কখনও দেখা যায়নি।
×