ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেলোয়াড় কেনাবেচার খেসারত দিচ্ছে কাতালানরা!

কাঁদলেন, কাঁদালেন নেইমার

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২১ এপ্রিল ২০১৭

কাঁদলেন, কাঁদালেন নেইমার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পিএসজির বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে রূপকথা লিখেছিল বার্সিলোনা। তাতেই অসাধ্য সাধন করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল কাতালানরা। শেষ আটের প্রথম লেগেও একই অবস্থার মুখোমুখি হয় স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু এবার পারেনি তারা। সেবার রূপকথার নায়ক ছিলেন নেইমার। যে কারণে পরশু রাতে ম্যাচ শেষে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টারকে। মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় শিশুর মতো কেঁদেছেন। জার্সি দিয়ে লুকিয়েছেন মুখ। ‘না পারা’ নেইমারকে কতটা কষ্ট দিয়েছে, সেটা বোঝা যায় ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই। তুরিন থেকে শেষ আটের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হেরে এসেছিল বার্সা। নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগে জুভেন্টাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। শেষ হয়ে গেছে বার্সিলোনার হয়ে নেইমারের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের স্বপ্ন। তার ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নও বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। সবমিলিয়ে নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারেননি। ম্যাচ শেষে মাঠেই কাঁদলেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে মাঠ ছাড়েন নেইমার। একসময়ে বার্সায় খেলা তাঁর স্বদেশী ডিফেন্ডার দানি আলভেস এসে সান্ত¡নাও দিয়ে গেছেন। তবে তাতেও কান্না থামেনি নেইমারের। দিন কয়েক আগে বার্সিলোনার সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ। তার কথায় ছিল বার্সার প্রতি একরাশ ক্ষোভ। সাবেক ক্লাবকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে ওঠায় নিশ্চয়ই দারুণ খুশি তিনি। বিষয়টা মোটেই কিন্তু তেমন নয়। শেষ চারে উঠে দারুণ আনন্দিত আলভেজ, তবে সাবেক ক্লাব সতীর্থ স্বদেশী নেইমারের কষ্টও ছুঁয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়। আলভেজ বলেন, আমি আমার দল আর সতীর্থদের জন্য আনন্দিত। কিন্তু এখানে ফেরার কারণে অনুভূতিটা অম্লমধুরও। আমার বন্ধুরা হতাশ। এটা অদ্ভুত এক অনুভূতি। কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু জীবন তো এমনই। ফলটা উল্টো হলে আমার জন্য তাদের খারাপ লাগত। নেইমারকে সান্ত¡না দিতে ছুটে যান আলভেজ। বলেন, আমি নেইমারকে বলেছি, জীবন এমনই। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। নেইমারের কান্না দেখে সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের ফুটবলাররাও চোখ মুছেছেন। গ্যালারিতে দর্শকরাও কেঁদেছেন সমানতালে। এদিকে আরেকবার ব্যর্থ হওয়ার পর কারণ খোঁজা শুরু হয়েছে। কেন বারবার বার্সিলোনার এমন হচ্ছে? বার্সার এই নিয়তির পেছনে কাজ করছে অনেকগুলো কারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই বছরে খেলোয়াড় কেনাবেচা কর্মকা-েরই খেসারত দিচ্ছে ক্লাবটি। লুইস এনরিকে যোগ দেয়ার প্রথম মৌসুমেই ট্রেবল জেতে বার্সা। এরপরই ২০১৩-১৪ মৌসুমে হতাশা দূর এবং ফিফার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পাশাপাশি গ্রীষ্মে দল বদলের বাজারে প্রচুর বিনিয়োগের পথ নেয় তারা। লুইস সুয়ারেজ, ইভান রাকিটিচ, মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান, ক্লাউডিও ব্রাভো এবং জেরমি ম্যাথিউসহ আরও বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় কেনে বার্সা। কম বয়সী খেলোয়াড় কেনাবেচার অভিযোগে বার্সার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফিফা। যা নিয়ে বেশ চাপে ছিল ক্লাবটি। এর মধ্যে ২০১৫ জানুয়ারিতে ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে হেরে যান ক্রীড়া পরিচালক আন্দোনি জুবিজারেটা। খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা মানতে চাননি তার উত্তরসূরি রবার্ট ফার্নান্দেজ। তাকে সমর্থন করেছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্টামেউও। এ কারণে খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে ফিফার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০১৫’র গ্রীষ্মে তুর্কি মিডফিল্ডার আরডা তুরান ও এ্যালেক্সি ভিদালকে কেনে বার্সা। তুরান-ভিদালকে কিনলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৬’র জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের বেঞ্চেই বসিয়ে রাখতে হয় বার্সাকে। এসব কারণের পাশাপাশি একাডেমি থেকে মানসম্পন্ন খেলোয়াড় উঠে না আসায় ভুগতে হচ্ছে কাতালানদের।
×