ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

সাতক্ষীরার ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ ৯ মে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ এপ্রিল ২০১৭

সাতক্ষীরার ৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ ৯ মে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক ম-লসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ ৯ মে। অন্যদিকে বাগেরহাটের ১৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে আদেশের জন্য ৩১ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এই আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, রিজিয়া সুলতানা বেগম চমন, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি ও প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত। সাতক্ষীরার চার রাজাকারের মধ্যে সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের খালেক ম-ল ওরফে জল্লাদ খালেক কারাগারে। পলাতক অন্য তিন রাজাকার হলো একই উপজেলার বুলারআটি গ্রামের এম আব্দুল্লাহ আল বাকি, দক্ষিণ পলাশপোল গ্রামের খান রোকনুজ্জামান ও বৈকাবি গ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে টেক্কা খান। আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, আটক, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বুধহাটা খেয়াঘাটে বেতনা নদীরপারে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মোঃ ইমাম বারী, মোঃ মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পহেলা ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে কমরউদ্দিন ঢালী নামের একজনকে ধরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় ১০/১২ রাজাকার। তাদের নেতৃত্বে ছিল সাতক্ষীরা মহকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মৃতদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীরপারে। রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ ৪-৫ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি। চতুর্থ অভিযোগ সোহেল উদ্দিন সানা নামের এক ব্যক্তি তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা ভাদ্র বুধহাটা বাজার অতিক্রম করার সময় রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সঙ্গী রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাদের ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সোহেল ও সানার সন্ধান আর মেলেনি। একই বছরের ২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মোঃ বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙ্গুলের রগ কেটে দেয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোন এক সময় আসামি আব্দুল খালেক ম-ল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টিক্কা খান একদল পাকিস্তানী সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথান্ডা প্রাইমারী স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীকে ডেকে মিটিং করে। মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করে এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথান্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেয়। বাগেরহাটের ১৪ রাজাকার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ১৪ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হবে ৩১ মে। এর আগে বুধবার রাজাকারদের বিরুদ্ধে সাত অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। আসামিরা হলো বাগেরহাটের খান আশরাফ আলী (৬৫), খান আকরাম হোসেন (৬০), সুলতান আলী খান (৬৮), রুস্তম আলী মোল্লা (৭০), ইদ্রিস আলী মোল্লা (৬৪), মকছেদ আলী দিদার (৮৩), শেখ মোঃ উকিল উদ্দিন (৬২), শেখ ইদ্রিস আলী (৬১), শেখ রফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৬৪), মোঃ মনিরুজ্জামান হাওলাদার (৬৯), মোঃ হাশেম আলী শেখ (৭৯), মোঃ আজাহার আলী শিকদার (৬৪), মোঃ মকবুল মোল্লা (৭৯), মোঃ আব্দুল আলী মোল্লা (৬৫)। আসামিদের মধ্যে আজহার আলী শিকদার বিএনপি সমর্থক। বাকিরা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক।
×