ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ॥ মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ এপ্রিল ২০১৭

বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হতে দেয়া হবে না ॥ মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের নিবন্ধন বাতিলের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। কারণ, বিএনপিকে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ২০১৪ সালে কি নির্বাচন করেছেন? কোন বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সে নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই বিএনপিকে কিভাবে নির্বাচনে নেয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এম ইলিয়াস আলীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গুম-খুনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে প্রতিটি জায়গায় নতুন কমিটি হচ্ছে, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হোন। রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে সংগঠনের শক্তি বাড়ান। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির যে নতুন কমিটি হয়েছে তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে রাজধানীতে বিএনপির দুর্গ গড়ে তুলুন। ভবিষ্যতে যাতে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের সরকার গঠন করতে পারি। ফখরুল বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচন চাই। আমরা ক্ষমতায় যেতে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোন চিন্তা করি না। কিন্তু সেই নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচনী পরিবেশ লাগবে। প্রতিটি পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পথ আটকে রাখবেন বিএনপিকে আর বলবেন নির্বাচনে যান আর আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন সেটি হবে না। বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোঃ নাসিমের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে নিবন্ধন বাতিল হবে। মোঃ নাসিম এর আগে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কথা তিনিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা আগেও বলেছেন। কিন্তু বিএনপি এ দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপিকে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় বসে থাকবেন, সমস্ত কলকব্জা নাড়বেন, ‘ইলেকশন ম্যানিপ্যুলেটেড’ করবেন, আর আমাদের বলবেন নির্বাচনে যাও, সেটি হবে না। বিএনপির কারও বিরুদ্ধে দশটা, কারও পনেরোটা, কারও বিশটা, কারও চল্লিশটা, কারও ১০০ থেকে ১৪১টা মামলা আছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ মামলা। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আশিটার কাছাকাছি মামলা আছে। এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস সম্পর্কে যে অধ্যায় আছে, সেখানে আছে অপহরণ করে গুম করে দেয়া সবচেয়ে ঘৃণ্য একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাই আজকের এই সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। এর জবাব তাদের দিতে হবে। এই অপরাধ ক্ষমার যোগ্য নয়। যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তারাও ক্ষমতা পাওয়ার যোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বিদেশ সফরে যান এবং শান্তিতে ফিরে আসেন। সম্প্রতি তিনি প্রতিবন্ধীদের সম্মেলনে যোগ দিতে ভুটানে গেছেন। কিন্তু তিনি তো দেশের রাজনীতিকে পুরোপুরি প্রতিবন্ধী করে রেখেছেন। মানুষকে যে তিনি পঙ্গু করে রেখেছেন সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার এ সফর থেকে আমরা কি পেয়েছি এ দেশের মানুষ জানে না। তিনি সেখানে শুধু দিয়ে এসেছেন, বিনিময়ে কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে তিনি দেশের স্বার্থ আদায় করতে পারেননি। কারণ, তিনি নিজেই বলেছেন, আমি যা চেয়েছি তা পাইনি। তাই আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জানে না তারা যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে সরকার মনে করে যারা আজ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে তাদের যদি স্তব্ধ করা না যায় তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। তাই অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন ও মামলা-গ্রেফতার করে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় সরকার। এ সরকার দেশের জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিম, ঢাকা মহানগর (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, ঢাকা মহানগর বিএনপি (দক্ষিণ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরে পদ পেলেন আরও ২ নেতা বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরে পদ পেলেন আরও ২ নেতা। এর মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার পেয়েছেন প্রথম যুগ্ম সম্পাদক এবং এম শামসুল হক পেয়েছেন দ্বিতীয় যুগ্ম সম্পাদক পদ। মঙ্গলবার রাতে এ দুটি পদ শূন্য রেখে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
×