ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন এমন লোককে সংবর্ধনা দেবেন সেলিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২১ এপ্রিল ২০১৭

ঘুষ ছাড়া চাকরি  পেয়েছেন এমন লোককে সংবর্ধনা দেবেন সেলিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেকক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগের তীর। আবার রাজনীতির মাঠের একাংশ বারবারই চাকরিক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলে আসছে। এখন বাংলাদেশে চাকরির জন্য প্রত্যেককেই ঘুষ দিতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেছেন, ঘুষ ছাড়া চাকরি নিয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে সংবর্ধনা দেবেন তিনি। বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে সিপিবি সভাপতি বলেন, এমএ পাস, বিএ পাস, ম্যাট্রিক পাস কিংবা শিক্ষাবঞ্চিত সাধারণ নাগরিক হোক, বড় অফিসার থেকে শুরু করে পিয়নের চাকরি হোক, ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছে- এ রকম লোকের খোঁজ পেলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আমি এই প্রেসক্লাবের সামনে তার ছবি সাঁটিয়ে রেখে দেব, যাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ তাকে দেখতে পারে। তবে ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন এমন লোক এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেই এ বাম নেতার বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার ঘুষ ছাড়া চাকরির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুব ইউনিয়নের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। সেলিম বলেন, ঘুষ দেয়া ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না সে কথা আমরা বলছি। কিন্তু ঘুষ দিলেও চাকরি পাওয়া যায় না। ঘুষের ভেতরে নাকি এখন দুর্নীতি ঢুকে গেছে, এ রকম একটা অবস্থার ভেতরে আজ চলে গেছি। এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে, একে একটা ভাওতা দিয়ে ওকে একটা ভাওতা দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নাম ‘বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের’ তালিকায় আসার প্রসঙ্গ টানেন সিপিবি সভাপতি। তিনি বলেন, দরবেশ সাহেব এক সময়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ছিলেন, তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। যার জায়গা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, তাকে আজ উপদেষ্টা বানিয়ে রেখেছে। চাকরিতে ঘুষের এ ‘ন্যক্কারজনক’ অবস্থা কেবল ‘পাকিস্তান আমলে’ ছিল মন্তব্য করে সেলিম বলেন, ‘তখন আমরা লড়াই করেছিলাম, অন্যায় এবং বেইনসাফ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দাবি ছিল ঘুষ-দুর্নীতি নিপাত যাক। আইয়ুব খান ও মোনায়েন খান যুব সমাজকে সঙ্কীর্ণ স্বার্থবোধে আটকে রাখত। সেটাকে রুখে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম।’ কিন্তু স্বাধীন দেশে ঘুষ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মন্তব্য করে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংক্রামক না, রোগ সংক্রামক। একজনের একটা অসুখ হলে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। মাথার উপরে রোগ ধরেছে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে।’ দুর্নীতির কারণেই মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে অভিযোগ করে সিপিবি সভাপতি বলেন, কাজ শুরু হয়, ছয় মাস পেছালে সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার ছয় মাস পেছালে আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যেটা তিন হাজার কোটি টাকায় শেষ হওয়ার কথা, সেটা দুই লাখ কোটি টাকায়ও শেষ করতে পারে না। চাকরিসহ সবক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব সরকার আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। অধিকার যেন বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সবকিছু করতে হবে। ঘুষ ছাড়া চাকরি দাবির পাশাপাশি বদলি, পদোন্নতিতে ঘুষ এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। একটি জেলার এক কর্মকর্তা ১৭ লাখ টাকা দিয়ে বদলি হয়েছেন- এমন ঘটনার তথ্য তুলে ধরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বদলির জন্য যদি ১৭ লাখ টাকা দিতে হয়, তাহলে তিনি চাকরি কী জন্য করবেন? সেই টাকা তোলার জন্য? নিজের জন্য, না জনগণের জন্য? সুজন সম্পাদক বলেন, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ও অনেকগুলো প্রকাশনা থাকার পরও তার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পায়নি ‘দলপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতির’ কারণে। যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি চাই’ দাবির সমর্থনে সারাদেশের পাঁচ লক্ষাধিক গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করতে গেলে পুলিশ শাহবাগে শিশুপার্কের সামনে বাধা দেয়। পরে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে হাফিজ আদনান রিয়াদ, শেখ আবদুল মান্নান, মসরুর আমান মুখর, শিশির চক্রবর্তী, ত্রিদিব সাহা, খান আসাদুজ্জামান মাসুম ও আশিকুল ইসলাম জুয়েল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
×