ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ দাবি সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২০ এপ্রিল ২০১৭

 রামপাল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ দাবি সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি সকলের সামনে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংগঠনটি বুধবার এ দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রামপাল প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতের এক্সিম ব্যাংক নীতিহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে ঋণচুক্তি সই হয়। ব্যাংকটি প্রকল্প নির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানিকে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। যেহেতু অন্যসব আনুষ্ঠানিকতা এর মধ্যে শেষ হয়েছে তাই এবার প্রকল্প নির্মাণ শুরু হবে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় কেন্দ্রটি নির্মাণে আর কোন সমস্যা থাকছে না। তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রায় প্রতিদিনই রামপাল প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। পরিবেশবাদীদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হয়েছে। সরকার নানানভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে না। এর পরও পরিবেশবাদীরা অনড় অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে সুলতানা কামাল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। ‘রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন ও বিশাল দূষণে সুন্দরবন ধ্বংসের বাস্তবতা: দুটি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূতত্ত বিভাগের অধ্যাপক ভূতত্তবিদ ড. বদরুল ইমাম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্কাইপের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কয়লা বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী রণজিৎ সাহু। রণজিৎ সাহু বলেন, ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় পরিবেশ দূষণরোধে রামপালে তার থেকে অনেক পুরনো সেকেলে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের গুজরাটের মুন্দ্রায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের কারণে সেখানকার ছোট একটি ম্যানগ্রোভ বনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরের মাথায়। সুন্দরবনের ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতি হবে। ড. বদরুল ইমাম বলেন, কয়লা পোড়ানোর কারণে যে তিনটি প্রধান বায়ু দূষক রয়েছে তা হলো নাইট্রোজেন (নক্স), সালফার অক্সাইড (সক্স) ও কার্বন অক্সাইড ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পারবে না রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। কারণ নক্স আটকানোর জন্য রামপাল কর্তৃপক্ষ লো-নক্স বার্নার ব্যবহার করবে। অথচ এটি পুরানো প্রযুক্তি; আধুনিক প্রযুক্তিতে নক্স আটকানো হয় সিলেকটিভ ক্যাটালিক রিডাকশনের (এসসিআর) মাধ্যমে। আর সক্স আটকানোর জন্য সর্বাধুনিক হচ্ছে ব্যাগ হাউস প্রযুক্তি। অথচ রামপালে ব্যবহার করা হবে ইলেক্ট্রোস্ট্র্যাটিক প্রিসিপিটেটর। এ ছাড়া রামপাল কেন্দ্রে ব্যবহৃত পানি পশুর নদীতে ছেড়ে দেয়া হবে যা নদীর পানির চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি। কেন্দ্র থেকে এভাবে গরম পানি নদীতে গেলে পানি দূষিত হবে।
×