ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নূরুল ইসলাম হত্যা মামলার তিন আসামির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

স্বামীর অবর্তমানে সুমি নাগরীকে বাসায় ডেকে নিতেন!

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ এপ্রিল ২০১৭

স্বামীর অবর্তমানে সুমি নাগরীকে বাসায় ডেকে নিতেন!

আজাদ সুলায়মান ॥ স্বামী বাসা থেকে বের হয়ে যাবার পরই ফোনে নাগরীকে বাসায় ডেকে নিতেন নুরানী আক্তার সুমি। সন্ধ্যায় স্বামী ফেরার আগেই নাগরীকে বাসা থেকে বের করে দিতেন। গত এক বছর এটাই ছিল শাহাবুদ্দিন নাগরী আর সুমির রুটিন কাজ। এতে ফ্ল্যাটের দারোয়ানরা সন্দেহ করলেও তাদের চুপ থাকার জন্য বখশিশ দিতেন নাগরী। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় নিউমার্কেট থানায় রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসছে। বর্তমানে পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আসামিদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে নিহত নুরুল ইসলামের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমির সঙ্গে শাহাবুদ্দিন নাগরীর অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধূর্ত শাহাবুদ্দিন নাগরী পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুললেও নুরানী আক্তার সুমি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। কখন কিভাবে কার মাধ্যমে নাগরীর সঙ্গে তার পরিচয় এবং প্রণয় গড়ে ওঠে তা পুলিশকে অবহিত করেছেন। পুলিশের মতে এই মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে আগামীকাল তাদের আবারও আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করার জন্য সুমির নিখোঁজ হওয়া ওই বান্ধবীকেও আটক করা হবে। পুলিশ তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, মূলত স্বামী নুরুল ইসলামের শারীরিক দুর্বলতার সুযোগেই সুমির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ পান নাগরী। এ ক্ষেত্রে সুমির এক বান্ধবী মূল ভূমিকা পালন করে। বছরখানেক আগে নিউমার্কেটে একটি অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় হলেও নুরুল ইসলাম তা জেনেছেন অনেক পরে। পরিচয়ের পরই সুমি বাসা বদল করে বর্তমান নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় ওঠেন। এ বাসায় নাগরী নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলে নুরুল ইসলাম আপত্তি করেন। এতে সুমি যুক্তি দেখান, নাগরী খুব প্রভাবশালী কাস্টমস কর্মকর্তা। তিনি রিটায়ার্ড করলেও অনেক ক্ষমতার অধিকারী। স্বামীর ব্যবসায়িক উন্নতিতে নাগরী অনেক সহযোগিতা করতে পারবেন বলে যুুক্তি দেখান। স্ত্রীর এ ধরনের আগ্রহে নুরুল ইসলামের চুপসে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। পুুলিশ নুরুল ইসলামের গাড়ির ড্রাইভার সোহাগের বরাত দিয়ে জানায়, আলোচিত এই কাস্টমস কর্মকর্তা নাগরী দুহাতে অকাতরে টাকা বিলিয়েছেন। সুমি যখন যা চেয়েছেন- তখন তাই দিয়েছেন। সুমির কোন আবদারই তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেননি। সর্বশেষ ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটি কার কিনে দিয়েছেন। ওই গাড়ির চালক সোহাগের বেতনও দিতেন নাগরী। নিউ মার্কেটের এক সাধারণ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম সব বুঝলেও তিনি ছিলেন অনেকটাই অসহায়। একে তো তার শারীরিক অক্ষমতায় বিয়ের এতদিন পরও সুমির মা হতে না পারার ব্যর্থতা, অন্যদিকে আর্থিক টানাপোড়েনের জাঁতাকলে নুুরুল ইসলামের অবস্থা ছিল ত্রাহি ত্রাহি। এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন শাহাবুদ্দিন নাগরীর মতো চৌকস প্রেমিক। যিনি সারাজীবন কাস্টমসে চাকরি করার সুবাদে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। তার এহেন দুর্নীতির একটি মামলা চট্টগ্রামের একটি আদালতে বিচারাধীন। এ দিকে বুধবার থানায় গিয়ে দেখা যায়, নাগরীর সেই প্রভাব ক্ষমতার দাপট যেন এখনও বিদ্যমান। তাকে থানায় রাখা হয়েছে জামাই আদরে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুমির সঙ্গে পরকীয়া এবং তার স্বামীকে হত্যার বিষয়ে কোন কিছুই স্বীকার করছেন না তিনি। তবে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের দারোয়ান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও চালক সোহাগের মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ফ্ল্যাটেই বসতো সুমি নাগরীর অভিসার। এমনকি সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার যেদিন নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয় সেদিনও নাগরী ওই বাসায় গিয়ে অবস্থান করেন টানা চার ঘণ্টা। বিকাল সোয়া তিনটায় ঢুকে বের হয়ে গেছেন সন্ধ্যা সোয়া সাতটায়। এ সময় দারোয়ানকে খুব অস্থিরতায় বের হয়ে যেতে দেখেন। তারপরই ওই বাসার খাটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় নুরুল ইসলামের মরদেহ। হত্যাকা-ের দিন কি জন্য ওই বাসায় গিয়েছিলেন কেন পুলিশের এমন এক প্রশ্নের জবাবে শাহাবুদ্দিনের জবাব ছিল, ‘আমি ওই বাসায় গিয়ে দেখি নুরুল ইসলামের বেডরুমে ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। তিনি দরজা লাগিয়ে ভেতরে একাই ছিলেন। আমি আর সুমি পাশের রুমে বসে গল্প করছিলাম।’ নিউ মার্কেট থানায় গিয়ে বুধবার দেখা যায়, নাগরী বেশ আরাম আয়েশেই থানায় কাটাচ্ছেন। সকালে তার স্ত্রী খাবার ও ওষুধ নিয়ে দেখতে যান। স্বামীর সঙ্গে বেশ কিছু সময় একান্তেই কাটান। একটি সোফায় বসে তারা নিরিবিলি কথাও বলেন বলে জানিয়েছে থানার এক দারোগা। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার এলিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ ডোম-ইনো এ্যাপার্টমেন্টে নিজ বাসার বেডরুমে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মরদেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় পরদিন ১৪ এপ্রিল নিউমার্কেট থানায় নিহতের বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্ত্রী নুরানী আকতার সুমি ও তার প্রেমিক শাহাবুদ্দীন নাগরী, চালক সোহাগ ও কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর নিকুঞ্জে শাহাবুদ্দিনের বাসা নজরদারিতে রাখেন। বাসায় তার অবস্থান নিশ্চিত হবার পর সমবার সকালে সেখানে হানা দিয়ে আটক করা হয় শাহাবুদ্দীন নাগরীকে। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকা মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুনী খান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
×