ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলা

ঢাকা নগর বিএনপির নতুন কমিটিতে খোকা গ্রুপের প্রাধান্য

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ এপ্রিল ২০১৭

ঢাকা নগর বিএনপির নতুন কমিটিতে খোকা গ্রুপের প্রাধান্য

শরীফুল ইসলাম ॥ অবশেষে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে আবার খোকা গ্রুপ প্রাধান্য পেয়েছে। প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এ ২ ভাগে ভাগ করে দেয়া কমিটির শীর্ষ ৪ পদের সবাই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান খোকার অনুসারী। আর অন্যান্য পদেও রাজধানীর দলীয় রাজনীতিতে খোকার প্রতিপক্ষ ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের অনুসারী অপেক্ষাকৃত কম। তবে মির্জা আব্বাসকে বাগে নিয়েই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন। এদিকে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে গঠিত নতুন কমিটিকে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। তবে নতুন কমিটির শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকায় তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের টানা ৯২ দিনের অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে রাজধানীতে বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর যেসব মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির অধিকাংশ নেতা সেসব মামলার আসামি। উল্লেখ্য, খোকা-আব্বাসের বিরোধের কারণে দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি দিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মহানগরের সকল ইউনিটের সম্মেলন করে ইউনিট নেতাদের ভোটে নতুন কমিটি দিতে চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। কিন্তু মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বাধীন কমিটি দীর্ঘ ৩ বছর ধরে চেষ্টা করেও ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সম্মেলন ছাড়াই ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি করে দিয়েছেন। তবে এ কমিটি আংশিক বলে উল্লেখ করে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নতুন কমিটির নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এই আহ্বায়ক কমিটিকে এক মাসের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সম্মেলন করে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীদের কোন্দলের কারণে ঢাকা মহানগরে অধিকাংশ থানা এবং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতে পারেনি ওই আহ্বায়ক কমিটি। অবশেষে ৩ বছর পর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তাই এ কমিটি গঠনের পর রাজধানীকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন দলের এমন নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হয়ে পড়ায় এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২ ভাগে বিভক্ত করে কমিটি দেয়ায় বিএনপিও এবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এ ২ ভাগে ভাগ করে নতুন কমিটি দিয়েছে। নতুন কমিটিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি করা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাসারকে। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি করা হয়েছে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুমকে। আর ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসান উল্লাহ হাসানকে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি অনুমোদন করেন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির এক বিবৃতিতে নতুন কমিটিতে দক্ষিণে ৭০ জন এবং উত্তরে ৬৬ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নতুন সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল মির্জা আব্বাসের ঘোর বিরোধী। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব থাকাকালে আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তবে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও তার অনুসারীদের সঙ্গে ঠিকই যোগাযোগ রাখেন। তার সভাপতি হওয়ার ব্যাপারে খোকার সায় ছিল বলে জানা যায়। যদিও খোকা চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম যেন মহানগরের সভাপতি পদ পান। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী খোকা যখন বুঝতে পারেন সালাম সভাপতি হতে পারছেন না তখন তার অনুসারীদের সোহেলের পক্ষে থাকার নির্দেশ দেন। অবশ্য সোহেল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডনপ্রবাসী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রিয়ভাজন। দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। খোকা মেয়র থাকাকালে কাউন্সিলর আবুল বাশার তার ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তবে নতুন কমিটি ঘোষণার আগে আবুল বাশার মির্জা আব্বাসের আশীর্বাদ নিয়েছেন মূলত, কমিটির শীর্ষ পদ পেতে। কার্যত তিনি এখনও খোকারই অনুসারী বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে শীর্ষ পদ না পেলেও মির্জা আব্বাসের অনুসারী কজন নেতা সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদে ওপরের দিকেই স্থান পেয়েছেন। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন সভাপতি এম এ কাইয়ুম বরাবরই সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। কাইয়ুম বহুল আলোচিত ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। তবে তাকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পছন্দ করেন। তারেক রহমান যখন হাওয়া ভবনে বসতেন তখন কাইয়ুম সেখানে নিয়মিত যেতেন। আর খালেদা জিয়াকে যখন ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয় তখন তার বাসার কিছু মালামাল এম এ কাইয়ুমের বারিধারার বাসায় রাখা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। জানা যায়, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগরের প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে নিয়ে বৈঠক করেন। সে বৈঠকে কমিটি চূড়ান্ত করে পরে নতুন কমিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ২৬ জন সহসভাপতি, ১৯ জন যুগ্ম সম্পাদক, ১৮ জন সহসাধারণ সম্পাদক, ৩ জন সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। আর ঢাকা মহানগর উত্তরে ২৩ সহসভাপতি, ১৫ জন যুগ্ম সম্পাদক, ১৯ সহসাধারণ সম্পাদক, ৩ জন সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছে। তবে উত্তরের যুগ্ম সম্পাদকের দুটি পদ শূন্য রাখা হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে যাদের স্থান দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেনÑ সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহসভাপতি শামছুল হুদা, ইউনুস মৃধা, নবী উল্লাহ নবী, মীর হোসেন মিরু, মোঃ আবু মোতালেব, নাসিমা আক্তার কল্পনা, ফরিদ উদ্দিন, মোঃ সাজ্জাদ জহির, মোস্তাফিজুর রহমান হিরু, গোলাম হোসেন, আনবীর আদেল খান বাবু, আরিফুর রহমান আরিফ, ইশরাত মির্জা, মোশারফ হোসেন খোকন, আতিক উল্যাহ আতিক, মীর আশরাফ আলী আজম, মোঃ মোহন, জয়নাল আবেদীন রতন, মোঃ আবদুল লতিফ, সিরাজুল ইসলাম, হাজী দেলোয়ার হোসেন, আবুল হাসান ননি তালুকদার, হামিদুর রহমান হামিদ, এস কে সেকান্দার কাদির, সাব্বির হোসেন আরিফ ও নিতাই চন্দ্র ঘোষ। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন কাজী আবুল বাশার। যুগ্ম সম্পাদক পদ পেয়েছেন হাবিবুর রশিদ হাবিব, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, হারুনুর রশিদ হারুন, আলী রেজাউল রহমান রিপন, এ্যাডভোকেট ফারুকুল ইসলাম, আরিফুর রহমান নাদিম, লতিফ উল্লাহ জাফর, আবদুস সাত্তার, মকবুল হোসেন টিপু, আলমগীর হোসেন, খতিবুর রহমান খোকন, আবুল খায়ের বাবলু, আনোয়ার পারভেজ বাদল, আবদুল হান্নান, আনোয়ার হোসেন টিপু, শাহীন লাল শাহীন, কে এম জুবায়ের এজাজ ও ফরহাদ হোসেন। সহসাধারণ সম্পাদক মোঃ নাঈম, মোয়াজ্জেম হোসেন খান, তারেক জামাল, জাফর সাদেক টুটুল, আলী আহম্মেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, মারুফ তালহা মনি, হামিদুল হক, জামিলুর রহমান নয়ন, শেখ মোহাম্মদ আলী চায়না, সাইদুর রহমান সাঈদ, রফিকউল্লাহ রফিক, আকবর হোসেন নান্টু, শাহেদা মোরশেদ, জাফর আহমেদ, হাজী লিটন, হাজী নাজিম ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন তানভীর আহমেদ রবিন, সাইফুল ইসলাম পটু ও রফিকুল ইসলাম রাসেল। আর দফতর সম্পাদক পদ পেয়েছেন সাঈদুর রহমান মিন্টু ও আবদুল হাই পল্লব। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেনÑ সভাপতি আবদুল কাইয়ুম, সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, আবদুল আলী নকী, মোঃ সাহাব উদ্দিন, আলহাজ মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান মশু, আতিকুল ইসলাম মতিন, আলী ইমাম আসাদ, মাসুদ খান, ফয়েজ আহমেদ, কাজী হযরত আলী, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, নবী সোলায়মান, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এএলএম কাওসার আহমেদ, রবিউল আউয়াল, আলতাফ উদ্দিন মোল্লা, আলহাজ শামছুল হক, এসএম আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আলহাজ আবুল হাসেম, শাহিনুর আলম মারফত ও আক্কেল আলী। সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন আহসান উল্লাহ হাসান। প্রথম দুটি যুগ্ম সম্পাদকের পদ শূন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যুগ্ম সম্পাদক কফিল উদ্দিন, শামীম পারভেজ, আবুল মেসের, নাসির আহমদ, আশরাফ হোসেন, সাইফুল রহমান মিহির, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, গোলাম সাবের চৌধুরী কিরণ, মোঃ আতিক, গাজী মোঃ রেজাওয়ান উল হোসেন, গোলাম রব্বানি, মাহফুজুর রহমান, বেলাল চেয়ারম্যান, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান। সহসাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন গোলাম মোস্তফা, নুরুল হক, আশরাফুজ্জামান জাহান, ডিএম নজরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন নান্টু, হেলাল তালুকদার, তারিকুল আলম ট্যানজিং, খন্দকার ইব্রাহিম খলিল, দেওয়ান গিয়াস উদ্দিন, মনিরুল আলম, মাহাবুবুল করিম জাফর, আবদুল্লা হিল বাকী, রেজাউর রহমান তপন, আলাউদ্দিন সরকার টিপু, হাফিজুর রহমান ছাগির, রেজাউর রহমান ফাহিম, কেএমএইচ নজরুল ইসলাম, তুহিনুল ইসলাম তুহিন, শেখ ইকবাল হোসেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আক্তার হোসেন, সৈয়দ মনজুর হোসেন মঞ্জু ও সোহেল রহমান। দফতর সম্পাদক পদ পেয়েছেন এবিএম আবদুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক পদ পেয়েছেন ভিপি হানিফ এবং প্রকাশনা সম্পাদক পদ পেয়েছেন মশিউর রহমান বাবু।
×