ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ এপ্রিল ২০১৭

চট্টগ্রামে পুলিশ-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরকারী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার আধিপত্যের লড়াই শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগ-পুলিশ সংঘর্ষে রূপ নেয়ার ঘটনা দলীয় রাজনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতিই ডেকে এনেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করার আল্টিমেটাম দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লঙ্কাকা-ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। ভাংচুর হয়েছে সাধারণ মানুষের যানবাহন। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গিয়েছিল বেশকিছু সময়ের জন্য। এ ঘটনার আগে সপ্তাহখানেক জুড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন জনসভা, বিভিন্ন সমাবেশে একে অপরকে তির্যক বাক্যবাণে জর্জরিত করেন। উভয়ে নগর আওয়ামী লীগের অভিভাবক এবং একজন সাবেক ও আরেকজন বর্তমান মেয়র। চট্টগ্রাম বন্দর, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং সুইমিংপুল নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদীঘি ময়দানে জনসভার মাধ্যমে মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং প্রয়োজনে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। বিপরীতে আ জ ম নাছিরও এর পাল্টা জবাব দেন। যা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে রীতিমত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেই বাগযুদ্ধের আপাত সমাপ্তি ঘটেছে মঙ্গলবার সুইমিংপুল প্রকল্পে ছাত্রলীগের (একাংশ) সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মাধ্যমে। চট্টগ্রামে দলীয় রাজনীতিতে দুই নেতার মধ্যে বিরোধের এ ঘটনা নিয়ে এ পর্যন্ত যা ঘটে গেল তা মূল দল আওয়ামী লীগের জন্যই বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে বলে আলোচিত হচ্ছে। দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের ‘কূল রাখি না শ্যাম রাখি’- এ অবস্থা হয়েছে। পক্ষান্তরে, বিরোধীপক্ষ উল্লসিত। আর সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন ক্ষুব্ধ, অপরদিকে ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে। যা সরকারে থাকা এ দলটির ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে ক্ষতি ডেকে এনেছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহিউদ্দিন গ্রুপ ও আ জ ম নাছির গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে অনাকাক্সিক্ষত নানা ঘটনা সংঘটিত হয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ গ্রুপিং ছড়িয়ে আছে। অথচ, বিস্ময়কর দিকটি হচ্ছে বিভিন্ন সমাবেশে এ দুই নেতা যখন একই মঞ্চে বসেন তখন মনে হয় না তাদের ভেতরকার অন্তর্দ্বন্দ্বের বিস্তৃতি কোন পর্যায়ে। মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামে দলের কা-ারি হিসেবে পরিচিত। আর আ জ ম নাছির উদ্দিন দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত মেয়র। দুজনই চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টি করে আছে। যা দলের জন্য প্লাস পয়েন্ট। কিন্তু বর্তমানে এ দু নেতার অন্তর্কলহের ঘটনার যে বিস্ফোরণ ঘটেছে তাতে মূল দলের ভাবমূর্তিকেই মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। মঙ্গলবার পুলিশ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনাটি একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত ছিল। চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুলটি হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে। প্রকল্পটি একনেক অনুমোদিত। দেশের ৬৪ জেলায় এ ধরনের সুইমিংপুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এক্ষেত্রে চট্টগ্রামে স্থান নির্ধারণের বিষয়টি নিয়েই দলের এক পক্ষের বিরোধিতা। চট্টগ্রামে খেলাধুলার মাঠের সঙ্কট রয়েছে। লালদীঘি মাঠটি জনসভাসহ বিভিন্ন ধরনের সভা সমাবেশ নিয়েই চলমান। আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠটি শিশুপার্কে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মুখস্থ মাঠটি বহু আগে থেকেই শিশুপার্কে পরিণত করা হয়েছে। ফলে এ শহরে খেলাধুলার উন্মুক্ত কোন মাঠ নেই বললেই চলে। এ বিষয় নিয়েই ছাত্রলীগ প্রকল্পটি বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার। গত ১৬ এপ্রিল আল্টিমেটাম দেয়ার পর ১৭ এপ্রিল মিছিল সমাবেশ নিয়ে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা প্রকল্পে হামলা চালিয়ে লঙ্কাকা- বাঁধিয়ে দেয়। স্কুল, অফিস আদালত ছুটির সময়ে এ ঘটনা সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। অনেকের প্রাইভেট যানবাহন ভাংচুর হয়। প্রকল্প সন্নিহিত দোকানপাটেও হামলা চলে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের এ দু’নেতার অন্তর্কোন্দল সকলেরই জানা। অথচ, গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে উভয় নেতা নিজেদের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঠিয়ে জানান দেন তাদের মধ্যে কোন কোন্দল নেই। তারা একসঙ্গে আছেন এবং একসঙ্গে কাজ করবেন। এর ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত না হতেই মহিউদ্দিন সমর্থিত ছাত্রলীগ সুইমিংপুল প্রকল্পে হামলা চালায়। চট্টগ্রামে দলের এ দু’নেতার পরস্পরবিরোধী কর্মকা-ে বিরোধী পক্ষ উল্লসিত। যদিও তাদের পক্ষে বিষয়টি নিয়ে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। দলে নিজেরা নিজেদের শত্রু হয়ে একদিকে যেমন হাঁকডাক চালিয়েছে, তেমনি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে যে ঘটনার অবতারণা করেছে তা দলীয় রাজনীতির জন্য নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের মধ্যে কেউ আছেন মহিউদ্দিনের পক্ষে, আবার কেউ আছেন আ জ ম নাছিরের পক্ষে। অনুরূপভাবে অঙ্গ সংগঠনগুলোকেও দ্বিধাবিভক্তি গ্রাস করেছে। সর্বশেষ জানা গেছে, দু’জনের বিরোধ নিরসনে কেন্দ্র থেকে দুই নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও ইতোপূর্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্যোগ নিয়ে দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়েও কার্যকর কোন সুফল আনতে পারেননি।
×