ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে তিন নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

রাজধানীতে তিন নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে তিন নারীকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীর কাফরুলে ইব্রাহীমপুরে এলাকায় রোজিনা আক্তার রোজি (৩৫) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে গলাকেটে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে ইব্রাহীমপুর বাজার এলাকার ৮৩৯ নম্বর চারতলা ভবনের নিচ তলার বাসার বাথরুম থেকে ওই নারী গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই বাসা থেকে নিহত নারীর দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের বয়স ৭ ও ৪ বছর। তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। কাফরুল থানার ওসি (তদন্ত) আসলামউদ্দিন জানান, নিহত নারী সৌদি প্রবাসী বিপ্লব চৌধুরীর স্ত্রী। তিনি দুই শিশুকন্যা জননী। ইব্রাহীম বাজার এলাকার ওই বাড়িতে দুই কন্যাকে নিয়ে থাকতেন রোজি। তিনি জানান, পরকীয়ার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শাকিল নামের এক ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। ওসি তদন্ত আসলামউদ্দিন জানান, শাকিল নামে এক ছেলের সঙ্গে তার অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সকাল ১০টার থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে শাকিল রোজিনাকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এদিকে একইদিন রাজধানীর উত্তরায় একটি আবাসিক হোটেল থেকে পুষ্প (৩০) নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গরবার ভোর ৬টার দিকে পুলিশ উত্তরা পশ্চিম থানাধীন আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মিলা আবাসিক হোটেলের ৪ তলার ৪৭০ নম্বর কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। দুপুরে তার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে দুর্জয় (৪০) নামে এক যুবক পুষ্পকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ওই হোটেলের চারতলা ওই কক্ষটি ভাড়া নেয়। ওসি জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষ কক্ষের দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকে পুষ্পের গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোঃ শাহেনশাহ জানান, সোমবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। গলার ক্ষত ছাড়া শরীরে অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। হোটেলটির ব্যবস্থাপকের বরাত দিয়ে শাহেনশাহ জানান, হোটেলের কক্ষে ভাড়া নেয়ার আগে খাতায় ওই নারীর নাম পুষ্পা (৩০) ও পুরুষটির নাম দুর্জয় (৪০) লেখা রয়েছে। তবে এই নামগুলো সঠিক নয়। ওই নারীর সঙ্গে হোটেলে ওঠা পুরুষ ও শিশুটিকে পুলিশ খুঁজছে। কারণ হোটেলে ওই নারীর সঙ্গে এক শিশু ছিল। অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পাঁচতলার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে স্বর্ণা খাতুন (১৯) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে তার পাষা- স্বামী। ঘটনার পর পুলিশ নিহতের ঘাতক স্বামী নাজমুল হোসেন বিদ্যুতকে (২০) গ্রেফতার করেছে। নিহতের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার মুসরদী। তার মা কাজলী বেগম জানান, আট মাস আগে একই জেলার নাজমুলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মেয়ে স্বর্ণার। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী ও তার পরিবারের সঙ্গে মাতুয়াইল দক্ষিণপাড়ায় আব্দুর রহমানে বাসায় ভাড়া থাকত স্বর্ণা। ঘর সংসারের পাশাপাশি উত্তরা এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করত মেয়েটি। নিহতের মা কাজলী জানান, বিয়ের আট মাসের মধ্যেই মেয়ে স্বর্ণাকে কারণে অকারণে মারধরের পাশাপাশি তার কাছে যৌতুকের টাকা, স্বর্ণালঙ্কার দাবি করতেন জামাতা নাজমুল। দাবি পূরণ করতে না পারায় গত ১১ এপ্রিল মাতুয়াইল ওই পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে মেয়ে স্বর্ণাকে ফেলে দেয় তার স্বামী নাজমুল। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়ে স্বর্ণার মৃত্যু হয়। তিনি জানান, আমি আমার মেয়ে স্বর্ণার হত্যার বিচার চাই। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আইয়ুব জানান, হত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। যার নম্বর ৩৪। ঘটনার দিনই নাজমুলকে গ্রেফতার করে জেলাহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার শমরিতার হাসপাতাল থেকে স্বর্ণার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য বিকেলে ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
×