ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকারের মামলার রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন (৫৪) ও মোঃ মোসলেম প্রধানের (৬৬) মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। এটি হবে ট্রাইব্যুনালের ২৮তম রায়। এর আগে ৭ মার্চ এ মামলার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি ঘোষণা করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের পলাতক আসামি খন্দকার গোলাম রব্বানীর (৬৩) বিরুদ্ধে দেশের প্রচারিত দুটি দৈনিক (ইংরেজি ও বাংলা) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফাদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী অরুণ চন্দ্র ধর জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকাররা মৌলভীবাজার আর্মিরা সুশিতল ধরসহ ১৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর আবুল কালাম। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সুবহান তরফদার। রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন (৫৪) ও মোঃ মোসলেম প্রধানের (৬৬) মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের ছয় অভিযোগ রয়েছে এই দুই আসামির বিরুদ্ধে। দুই রাজাকারের মধ্যে মোসলেম প্রধানকে গ্রেফতার করা হলেও হুসাইন পলাতক; মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের পলাতক আসামি খন্দকার গোলাম রব্বানীর (৬৩) বিরুদ্ধে দেশের প্রচারিত দুটি দৈনিক (ইংরেজী ও বাংলা) পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ মে পরবর্তী দিন ঠিক করেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে এ মামলার আট আসামির মধ্যে সাত আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। আসামিরা হলেনÑ ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ এমএ হান্নান, হান্নানের ছেলে মোঃ রফিক সাজ্জাদ (৬২), ডাঃ খন্দকার গোলাম ছাব্বির আহমাদ (৬৯), মিজানুর রহমান মিন্টু (৬৩), মোঃ হরমুজ আলী (৭৩), মোঃ ফখরুজ্জামান (৬১) ও মোঃ আবদুস সাত্তার (৬১)। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। মৌলভীবাজারের ৫ রাজাকার মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফাদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী অরুণ চন্দ্র ধর জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, আমার নাম অরুণ চন্দ্র ধর। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা-গ্রাম-খলাগ্রাম, থানা- রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। একাত্তর সালে আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমি এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। বর্তমানে আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে ২৯ নবেম্বর সকাল বেলায় আমি আমাদের বাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন আমি দেখতে পারি, প্রায় ১০০ পাকিস্তানী আর্মি রাজাকাররাসহ আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রবীণ রাজনৈতিক শশাংক ঘোষের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। ওই রাজাকারদের মধ্যে উজের, আফাজ (বর্তমানে মৃত), ইউনুছ, নেছার, শামসুল, মোবারক ছিল। তাদের আমি চিনতে পারি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই যে, আর্মি ও রাজাকাররা শশাংক ঘোষের কাকা যতীন্দ্র মোহন ঘোষকে বেঁধে বাড়ির ভেতর থেকে মারধর করতে করতে বাইরে নিয়ে আসে। এবং দক্ষিণ দিকে পার্শ্ববর্তী সুরীতি মোহন ধরের বাড়ির দিকে যায়। এরপর ১০-১২ জন রাজাকার আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে সুরীতি ধরের পুরাতন বাড়ির দিকে যায়। এরপর আমি ঝোপের ভেতর থেকে দেখতে পাই, সুরীতি ধরের পুরাতন বাড়ি থেকে সুকেশ রজ্ঞন ধর, অখিল রজ্ঞন ধর ও নিশি রজ্ঞন ধরকে আটক করে এবং পথ থেকে বিজয় দাশ ও বাবুল দেবকে আটক করে সুরীতি ধরের বাড়ির দিকে নিয়ে আসে। সাক্ষী আরও বলেন, এর কিছুক্ষণ পর সুরীতি ধরের নতুন বাড়ির দিকে থেকে গুলির আওয়াজ ও মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। কিছুক্ষণ পর আর দেখতে পাই, কয়েকজন আর্মি ও রাজাকাররা সুশিতন ধরের ছেলে সুভাস ধর ও শতদল ধরের ছেলে শান্ত ধরকে তাদের নতুন বাড়ির ভেতর থেকে ধরে পশ্চিম দিকে তাদের পুরাতন বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পর সুশিতল ধরের পুরাতন বাড়িতে যেখানে সুকেশ রজ্ঞন ধর, অখিল ধর, ও অরবিন্দ ধর থাকত সেদিক থেকে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পাই। ১০-১৫ মিনিট পরে আরও দেখতে পাই, আর্মি ও রাজাকাররা সুভাষ ও শান্তকে ধরে মুন্সিবাজারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইত্যবসরে দেখা যায়, সুশিতল ধরদের নতুন বাড়িতেও আগুন জ্বলছে। এরপর লোকজনের কানাঘুষা শুনি, সুশিতল ধরের বাড়ির লোকজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সুশিতল ধরের বাড়িতে যাই। সেখানে দেখি, বিভিন্ন জায়গায় লাশ পড়ে আছে। লাশগুলোর মধ্যে সুশিতল ধর, শ্যামল ধর, সজল ধর, যতীন্দ্র মোহন ঘোষ, সুকেশ রজ্ঞন ধর, বিজয় দাস, প্রতাপ পুরকায়স্থ, ক্ষিরোদ দেব, পরিমল দাস, অরবিন্দ ধর, শতদল ধরের লাশ ছিল। এখানে আহত অবস্থায় নিশি রজ্ঞন ধর ও বাবুল দেবকে পড়ে থাকতে দেখি। দুই দিন পর নিশি রজ্ঞন ধর মারা যায়। আহত বাবুল দেব ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
×