ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, শাস্তি দাবি

রাবির চারুকলায় রাতের আঁধারে ৫ শতাধিক ভাস্কর্য ওলটপালট

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

রাবির চারুকলায় রাতের আঁধারে ৫ শতাধিক ভাস্কর্য ওলটপালট

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ চত্বরে রাখা শিক্ষার্থীদের তৈরি পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য রাতের আঁধারে ওলটপালট করে রাখা হয়েছে। অনুষদের শিক্ষকরা বলছেন, ‘মস্তিষ্ক বিকৃত’ কিছু শিক্ষার্থী ক্ষোভের বশে ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রেখেছে যা আমাদের শিল্পমনে আঘাত দিয়েছে। তবে এর দায় স্বীকার করে একই অনুষদের দুই শিক্ষার্থী বলছেন, ছাত্রদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদ জানাতে ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সরেজমিনে চারুকলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, চারুকলা ভবনের পেছনে পুরাতন ক্লাসরুমগুলোর সামনে রাখা পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। সামনের রাস্তাগুলোতে ফেলে রাখা হয়েছে ভাস্কর্য। আবার কিছু ভাস্কর্য স্তূপ করে রাখা হয় শিক্ষকদের চেম্বারের গেটের সামনে। প্রাথমিকভাবে এ কাজের জন্য মৌলবাদী বা উগ্রপন্থী গোষ্ঠীকে সন্দেহ করা হলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন এবং ইমরান হোসেন অনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভাস্কর্য ওলটপালটের দায় স্বীকার করে। তারা সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগের নানা সমস্যার ব্যাপারে শিক্ষকদের জানিয়েও কোন সমাধান না হওয়ায় প্রতিবাদ হিসেবে সোমবার রাতে ত্রিশ-চল্লিশজন শিক্ষার্থী ভাস্কর্যগুলো ওলটপালট করে রেখেছেন। পুরাতন ক্লাসরুমগুলো এবং শিক্ষকদের চেম্বারের সামনেও শিল্পকর্মগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। আমাদের কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। যদি থাকত তাহলে ভাস্কর্যগুলো এভাবে শুধু শুইয়ে রাখতাম না, ভেঙ্গে ফেলতাম। তারা বলেন, ভাস্কর্যগুলো দীর্ঘদিন থেকে অরক্ষিতভাবে চারুকলা ভবনের পেছনে পড়ে আছে। এছাড়া এগুলো সংরক্ষণে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন। পুরো পরিবেশটা নোংরা হয়ে আছে, জায়গাটা পরিষ্কার করা হয় না। শিক্ষকরাও ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না। শিক্ষকদের একাধিকবার বলা হলেও তারা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তারা নিজেদের তৈরি ভাস্কর্য ওলটপালট ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার। তিনি বলেন, সকালে এই ঘটনা দেখার পরে জরুরী বৈঠকে বসা হয়। আমরা সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি বিভাগের ৭-৮ জন শিক্ষার্থী এই কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাদের যদি কোন দাবি থাকত তাহলে বিভাগে এসে জানাতে পারত। তা না করে তারা শিক্ষা পাঠ্যক্রমের পরিবেশ নষ্ট করেছে। রাতের আঁধারে ভাস্কর্য উল্টিয়ে রাখা কোন প্রতিবাদ হতে পারে না। তবে জড়িতদের নাম জানতে চাইলে অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ তাদের নাম জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ভাস্কর্য উল্টানোর ঘটনায় চারুকলার সাত শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা সবাই স্নাতকত্তোর শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তাদের নাম পরিচয় জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এদিকে ভাস্কর্য ওলটপালট করে রাখায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, সারাদেশে জঙ্গী তৎপরতা বাড়ছে। ভাস্কর্য নিয়েও নানা বিতর্ক চলছে। এরইমধ্যে চারুকলার ভাস্কর্যের ওলটপালট অবস্থায় আমরা প্রথম ধারণা করেছিলাম এটার সঙ্গে মৌলবাদী গোষ্ঠী ও জঙ্গীদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু শিক্ষর্থীরা এমন কাজ করবে সেটা ভাবতে পারছি না। এটা প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাবি ছাত্রলীগ। রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দলীয় টেন্টে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ থেকে ভাস্কর্য ওলটপালটের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। চারুকলা বিভাগের অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এই ভাস্কর্যগুলোতে আমাদেরও অংশীদার আছে। আর পরিচর্যা বা প্রাচীরের দাবি আমরাও করি, কিন্তু এভাবে রাতের আঁধারে কেন প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা অন্যভাবেও এ প্রতিবাদ করতে পারতাম। এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদৎ হোসেন বলেন, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ নিয়ে কোন অভিযোগ থানায় আসেনি। অভিযোগ হলে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
×