স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও বিনা বিচারে কারাগারে আটক থাকার পর মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের পুনর্বাসনের জন্য আইন থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। মঙ্গলবার লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে সুপ্রীমকোর্টের কনফারেন্স লাউঞ্জে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা এসব মানুষ পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আইনী সহায়তায় তারা জামিনে মুক্তি পেলেও অর্থের অভাবে কিছু করতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তিদের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকার এসব বিষয়ে দৃষ্টি দেবে। এ বিষয়ে আদালত নিজেও যে কোন আদেশ দিতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মিডিয়া একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় আটক বন্দীদের নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর লিগ্যাল এইড কমিটি তাদের আইনী সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। সে উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট তাদের জামিনে মুক্তি এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ প্রদান করে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, শিপন নামে এক ব্যক্তি দেড় যুগ কারাগারে আটক ছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তার মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা তাকে আদালতে হাজির করে বক্তব্য গ্রহণকালে জানতে পারি প্রতিপক্ষ ঘটনার পরপরই তার একটি হাত কেটে ফেলেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কারণে পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। ফলে সে মুক্তি পেয়ে কোথায় আশ্রয় নেবে সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। পরবর্তীতে আমরা তার পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেই।
সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহকারী পরিচালক আবিদা সুলতানা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব টাইটাস হিল্লোল রেমা।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অফিস উদ্বোধনের পর সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ৫৫৫টি মামলায় আইনী সহায়তায় যুক্ত হয়। এর মধ্যে ২৯৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ২৩২ বিচারপ্রার্থীকে মৌখিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের দেয়া তালিকা অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় পাঁচ থেকে ১০ বছর ধরে বন্দী ৪৬২ জনের বিষয়ে আদালতের নজরে আনা হলে ১৮ জন মুক্তি পেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। বাকি ৪০৪ জনের বিষয় নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: