ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হেফাজতী মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিল দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

হেফাজতী মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিল দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’। সুন্নী সম্প্রদায়ের এ দলের নেতারা ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর ও চিহ্নিত উগ্রবাদী গোষ্ঠী হেফাজতের সঙ্গে কোন আপস শান্তিপ্রিয় ইসলামী জনতা কখনও মেনে নেয়া হবে না। শান্তিবাদী আলিয়া মাদ্রাসা ধারাকে ধ্বংস করবে সরকারী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কওমি সনদের স্বীকৃতি। বৈষম্যমূলক এ ইসলামী শিক্ষানীতি কখনও মেনে নেয়া হবে না। কোন রকম সরকারী নিয়ন্ত্রণ, সরকারী কোন নীতিমালা, কোন প্রতিনিধি ছাড়া কওমি সনদ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত সমন্বয় কমিটি ঢাকা জেলার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মুসল্লিরা। যেখানে দেশব্যাপী আন্দোলনের পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করার মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয় কমিটির ঢাকা জেলার নেতৃবৃন্দ। এ সময় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের বর্তমান শিক্ষানীতিই যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস এবং ভোটের রাজনীতির অংশ হিসেবে উগ্রবাদী চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হেফাজতের সঙ্গে আপস করেছে সরকার। সাধারণত ১৭ থেকে ২০ বছর পড়ালেখার পর মাস্টার্স সনদপ্রাপ্ত হলেও সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে কওমি ধারায় মাত্র ৫ বছরে মাস্টার্সের সনদ পাওয়া যাবে। যার ফলে একটি বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি সৃষ্টি হবে। এ নীতি কখনও মেনে নেয়া হবে না। ‘জঙ্গী প্রজনন কেন্দ্র হেফাজতী মাদ্রাসার স্বীকৃতি বাতিলের দাবিতে’ কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন আ ন ম মাসউদ হুসাইন আলকাদেরী। মুহাম্মদ আবদুল হাকিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, যুবসেনা ও ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেনÑ অধ্যাপক এম এ মোমেন, সৈয়দ মুজাফফর আহমাদ, মুহাম্মদ আবদুল মতিন, অধ্যক্ষ এ জেড এম হেলাল উদ্দীন, যুবনেতা আবু নাছের মুহাম্মদ মুসা, এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দীন, আলহাজ ফজলুল হক, মুহাম্মদ মাসউদ হোসেন, ইমরান হুসাইন তুষার, আবুল কালাম আজাদ, কাওসার আহমাদ রুবেল প্রমুখ। তারা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গী হামলায় হেফাজত নিয়ন্ত্রিত কওমিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ সরকারের কাছে ছিল বলে বিভিন্ন সময় দাবি করা হয়। অথচ তাদের শাস্তি না দিয়ে শান্তিবাদী আলিয়া ধারাকে ধ্বংস করতে কওমি সনদের স্বীকৃতির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বক্তারা কওমিদের সঙ্গে এ আপসের ফলে সরকারের জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এবং এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সুন্নী নেতারা। এদিকে সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি উঠেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের চট্টগ্রামের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। যেখানে সংগঠটির প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা এম এ মতিন ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা এ কওমি সনদ বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করার মাধ্যমে আইনী পদক্ষেপ নেব। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সমান স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরদিনই এক বিবৃতিতে জঙ্গীবাদের প্রসারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আহলে সুন্নাত। তারপর ধারাবাহিক নানা কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী সংগঠনটি। মাওলানা মতিন বলেন, ভোটের রাজনীতির অংশ হিসেবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হেফাজতের সঙ্গেও আপস করা হচ্ছে। সমাবেশে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার তাফসির বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ বখতেয়ার উদ্দিন আলকাদেরী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় জঙ্গী হামলায় কওমিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ তাদের শাস্তি না দিয়ে আলিয়া ধারাকে ধ্বংসের উদ্যোগের অংশ হিসেবে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। জামেয়া আহমদিয়ার শিক্ষার্থী শায়ের মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামেয়ার ছাত্র সংগঠন যুল-ইয়ামিন ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ শাহজালাল। অন্যদের মধ্যে জামেয়া আহমদিয়ার শিক্ষক গোলাম মোস্তফা মুহাম্মদ নুরুন নবী, মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুচ রজভী, মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী ও সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম সমাবেশে বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জামেয়া আহমদিয়ায় এসে শেষ হয়। এর আগে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রত্যাহার দাবিতে গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয় ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত’। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আগামীকাল ২০ এপ্রিল সকল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচী রয়েছে।
×