ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অদৃশ্য কারণে স্বাধীনতা দিবস পালন করেনি বার কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

অদৃশ্য কারণে স্বাধীনতা দিবস পালন করেনি বার কাউন্সিল

আরাফাত মুন্না ॥ এবার ৪৬তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেনি দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটিও প্রতিবছরই ২৬ মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। তবে এবার কাউন্সিলের উপ-সচিব আফজাল-উর-রহমানের নির্দেশে সেই কর্মসূচী বাতিল করা হয়। এ বিষয়টিতে বার কাউন্সিলের অনেক কর্মকর্তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচী পালন না করার বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে জানা না গেলেও ৫ এপ্রিল বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের লিখিত একটি অভিযোগপত্র থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই অভিযোগে অনুষ্ঠান বাতিলের নির্দেশদাতার নাম না থাকলেও, জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে উপ-সচিবের নামটি উঠে এসেছে। তবে ওই উপ-সচিব আফজাল-উর রহমান নিজের দোষ অস্বীকার করে ভাইস চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কথা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। এদিকে, বার কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস প্রতিবছরই পালন করা হয়। বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ওই কর্মসূচীতে যোগ দেয়। এবারও স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচী পালনের জন্য অফিস আদেশ দেয়া হয়েছিল। তবে হঠাৎ ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ওই কর্মসূচী বাতিল করা হয়। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বার কাউন্সিলের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আবদুল মজিদ ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কাউন্সিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফোন করে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি জানান। এ বিষয়ে তার দেয়া এক নোট থেকে জানা গেছে, ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাউন্সিলের উপ-সচিব আফজাল-উর রহমান তাকে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে সবাই বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। উপ-সচিবের নির্দেশেই তিনি সবাইকে ফোন করে অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিলকারীদের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (পদাধিকার বলে) ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমসহ সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ কমিটি বরাবরে একটি অভিযোগ দাখিল করেন কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ ম রেজাউল করিম। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৪৬/১৯৯৭ মূলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আইনানুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সরকারী বিধিবদ্ধ সংস্থা। এ সংস্থার আইন ও বিধি সরকারের নিয়ম অনুসারে প্রণীত হয়।’ এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সরকার দিবসটি স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটি প্রতিপালন রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাপূর্ণ। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থাÑ রাষ্ট্রের সকল জাতীয় দিবস উদ্যাপন করে থাকে যথাযথ মযার্দার সঙ্গে। ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব মোঃ আনিসুর রহমান (জেলা ও দায়রা জজ) কর্তৃক ২৩ মার্চ, ২০১৭ তারিখে দিবসটি যথাযথভাবে পালনে অফিস আদেশও জারি করা হয়।’ অভিযোগপত্রে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বার কাউন্সিলের একজন নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমি ওই দিবসে সাভার স্মৃতিসৌধে যাই। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও বার কাউন্সিলের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেখানে না পেয়ে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা নাজমুল জানায়, তাকে প্রশাসন বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচী বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। ফলে সচিব মোঃ আনিসুর রহমানকে টেলিফোন (মুঠোফোন) করে জানতে পারি, তিনি কর্মসূচী বাতিল সংক্রান্ত বিষয় অবহিত নন।’ অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ব্যানার, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফুলের মালাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্যরা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান দীর্ঘদিন ধরে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো তথা স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনের কর্মসূচী বাতিল করার ঔদ্ধত্য অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বিষয়টি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অবমাননার শামিল। বিষয়টি, রাষ্ট্রের অস্তিত্বের উৎসকে তথা জাতীয় দিবসকে অবজ্ঞা ও অবমাননাপূর্ণ। এহেন ঘটনা, আমাকে হতবাক করেছে।’ অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এহেন সিদ্ধান্ত তথা কাজ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমতুল্য। বিষয়টি তদন্ত করে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্যক। সে মতে, অনুগ্রহপূর্বক ওই বিষয়ের গুরুত্ব সদয় বিবেচনায় গ্রহণ করে তদন্তপূবর্ক জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের উপ-সচিব আফজাল-উর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করে ওইসময়ে ছুটিতে ছিলেন বলে জনকণ্ঠকে জানান। পরে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আবদুল মজিদের নোটের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে তিনি বলেন, কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অসুস্থ ছিলেন এ জন্য আমরা এবার যাইনি। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা বার কাউন্সিলের কোন রেওয়াজ নয় বলেও জানান। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলে, উপ-সচিব এ বিষয়ে মিথ্যাচার করছেন। প্রতিবছরই বার কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাউন্সিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যান। এবারও একই ধরনের কর্মসূচীর নেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ওই কর্মসূচী বাতিল করেন উপ-সচিব আফজাল-উর রহমান।
×