ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিটিং সার্ভিস নিয়ে মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পর্যালোচনা করতে বলেছেন মন্ত্রী

পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা কষ্টকর, ক্ষমতাধররা জড়িত ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা কষ্টকর, ক্ষমতাধররা জড়িত ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবহন নিয়ন্ত্রণে কোন হুমকি-ধমকিই কাজে আসছে না। তাই রবিবার এক অনুষ্ঠানে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার অনেকটা ব্যর্থতার সুরেই কথা বলেছেন তিনি। রাজধানীর সিটিং সার্ভিস নৈরাজ্য ইস্যুতে মন্ত্রী বলেন, গাড়ির সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা সামান্য লোক নয়। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারফিটনেসের কথা বলেন, তারাই আবার অন্যায়ভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালান। এসবের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে তারাই গাড়ি বন্ধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। তখন সরকারের অভিযান ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। মন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন, গাড়ি মালিকদের ডাকলেও তারা প্রাথমিকভাবে আসেন না। অনেক পরে আসেন। এর সঙ্গে অনেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক ভাল বলে মত দেন ওবায়দুল কাদের। পরিবহনের মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করলেও গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হচ্ছে না কেনÑ এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যখন ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান করতে চাই তখন অফ রোড হয়ে যায়, দুর্ভোগ হয়। দুই ধরনের সমালোচনায় তোপের মুখে পড়ি আমরা। দায়টা আসে আমাদের ঘাড়ে। ফিটনেসের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে রাস্তায় গাড়ি নামে না, সেটা আরেকটা বিষয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিআরটিসি পুরো সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দেন কাদের। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছিল। এছাড়া মালিক সমিতিরও দু-তিনজনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। চলমান অভিযান জনস্বার্থে পর্যালোচনা করতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী। বুধবার এ বিষয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। মন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, গতকালের তুলনায় আজ রাস্তায় গাড়ি বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। আমরা সকলে মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এদিকে ঢাকায় গণপরিবহনে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পর্যালোচনা করতে বলেছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের পর দুই দিন মালিকরা গাড়ি কম বের করায় জনভোগান্তির প্রেক্ষাপটে মন্ত্রীর এই নির্দেশনা এলো। তিনি বলেন, মালিক সমিতির দুই-তিনজনের সঙ্গে আলাপ করে তাদের বলেছি বিষয়টি রিভিউ করার জন্য। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান করছেন বিষয়টি জনস্বার্থে রিভিউ করতে বলেছি। সবাইকে নিয়ে বসে জনস্বার্থে বাস্তবভিত্তিক নিয়ামক সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছি। তিনি বলেন, কেউ নানা অজুহাতে যদি গাড়ি না চালায় আমরা কি আমাদের দেশের বাস্তবতায় কি জোর করে গাড়ি নামাতে পারব? আর গাড়ির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা খুব সামান্য মানুষ না, তারা অনেকেই খুব প্রভাবশালী। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধে ১৬ এপ্রিল থেকে অভিযান চালানো হবে। রবিবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন শুরুর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা-মারামারির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন স্থানে। অনেক মালিক রাস্তায় গাড়ি না ছাড়ায় যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। সোমবারও বাস না পেয়ে বিভিন্ন মোড়ে যানবাহনের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যাত্রীদের। এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, রাশ আওয়ারে যে পরিমাণ গাড়ি থাকে সে তুলনায় কম, তবে গাড়ি আছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি একটু সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধন করা উচিত। পত্রপত্রিকার লেখালেখিও আমার চোখে পড়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য বুধবার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হবে। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও সেখানে ডাকা হবে। সড়কে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে ‘সিটিং সার্ভিসকে’ বৈধতা দেয়ার চেষ্টা’ হচ্ছেÑ যাত্রীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, এ ধরনের কিছু আছে কি না, সেটা রিভিউ করলে বলা যাবে, সেখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হবে। জনস্বার্থ কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেটা বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও মালিক সমিতির নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছি।
×