ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীতে আউশ ধানের বীজ সঙ্কট, দুশ্চিন্তায় কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

পটুয়াখালীতে আউশ ধানের বীজ সঙ্কট, দুশ্চিন্তায় কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালী জেলায় মৌসুমের শুরুতেই আউশ ধানের বীজের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ সরবরাহ কম থাকা এবং কৃষকদের নিজস্ব মজুদ না থাকায় এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু বীজ পাওয়া গেলেও তার দাম অনেক বেশি। এর মান নিয়েও কৃষকদের মধ্যে নানা সংশয় রয়েছে। এদিকে অতিবৃষ্টিতে জেলায় রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ আবাদের দিকে ঝুঁকলেও বীজ সঙ্কটের কারণে বীজতলা করতে পারছে না। এ অবস্থায় আউশ আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক। আউশ আবাদের সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহতেরও শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমের এক মাস পেরিয়ে গেলেও বহু কৃষক এখনও আউশ ক্ষেতে নামতে পারেনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, পটুয়াখালী কার্যালয় থেকে জানা গেছে, গত ৮ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত অতিবৃষ্টিতে জেলায় রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে মুগ, খেসারী, ফেলন, মরিচ, তিল, চীনাবাদাম, আলু ও তরমুজ ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরকারী হিসাবেই জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৩৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বেসরকারী হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে কৃষকরা ধারণা করছে। রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণে কৃষকরা আউশ চাষে ঝুঁকে পড়লেও সৃষ্টি হয়েছে বীজের সঙ্কট। গত ১৫ মার্চ থেকে আউশ মৌসুম শুরু হয়েছে, চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। এ বছর জেলায় ২৯ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরি শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের হিসাবে জেলায় আউশের আবাদের জন্য ৭৩৩ টন বীজের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী বীজ নেই। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রতনদী-তালতলী ইউনিয়নের কামারহাওলা গ্রামের কৃষক নেছার উদ্দিন জেলা শহরে বীজ কিনতে গিয়ে না পেয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি জানান, এ বছর রবি মৌসুমে ২৩ হেক্টর জমির তরমুজ পাঁচ দিনের অতিবর্ষণে পচে গেছে। চাষাবাদের খরচসহ ১৫ লাখ টাকা তার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৌসুমের শুরুতে আউশ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেন। কিন্তু বিএডিসির বীজ পাননি। বাজারে এখন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বীজ পাওয়া গেলেও তার দাম অনেক বেশি। নেছার উদ্দিন আরও জানান, বিএডিসির বীজের কেজি ৩৬ টাকা কিন্তু বাজারে নেই। গলাচিপার বাজারে খুঁজে পাননি। জেলা শহরেও বিএডিসির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে বেসরকারী কোম্পানির কিছু বীজ পাওয়া যাচ্ছে, তবে দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এত দাম দিয়ে তার পক্ষে বীজ কেনা সম্ভব নয়। জেলার সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাদারবুনিয়া গ্রামের কৃষক বেল্লাল হাওলাদার জানান, অতিবৃষ্টিতে তার ক্ষেতের মুগডাল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনিও বীজ সঙ্কটের কারণে আউশ আবাদ করতে পারছেন না। এমন সমস্যায় পড়েছেন এলাকার হাজারও কৃষক। পটুয়াখালী বিএডিসির বীজ বিক্রেতা থানাপাড়া এলাকার ‘কৃষি ঘর’-এর মালিক মজিবর রহমান জানান, তাকে বিএডিসির ৫০০ কেজি বীজ দেয়া হয়েছিল। তা দু’দিনেই শেষ হয়ে গেছে। বিএডিসির বীজের ব্যাপক চাহিদা কিন্তু সরবরাহ কম। তাই এলাকার চাহিদা মেটাতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন। বীজ সঙ্কট প্রসঙ্গে বিএডিসি, পটুয়াখালীর উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আসলে প্রণোদনায় বীজ বরাদ্দ থাকে। এ কারণে বাজারে বীজের সরবরাহ কম। এ বছর জেলায় ২৬ টন আউশ বীজ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিন টন বীজ কৃষকদের কাছে সরাসরি বিক্রির জন্য বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। আর প্রণোদনায় দেয়া হয়েছে ২৩ টন। পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম মাতুব্বর জানান, টানা পাঁচ দিনের অকাল বর্ষণের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর কৃষকদের আউশ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। জেলায় চার হাজার ২০০ কৃষক পাঁচ কেজি করে আউশ বীজ প্রণোদনা হিসেবে পাচ্ছেন। তারপরও বিএডিসির বীজ বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে কৃষক উপকৃত হতেন।
×