ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকরের উপায় খুঁজছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকরের উপায় খুঁজছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে খুশি রেখে আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করার উপায় খুঁজছে সরকার। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নাগরিকদের ওপর যাতে অতিরিক্ত করের বোঝা চেপে না বসে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। আবার বড় বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই বাস্তবতায় সবাইকে খুশি ও ম্যানেজ করেই ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। সোমবার মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন নিয়ে বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও অর্থসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, একে আজাদ ও সংগঠনটির বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি আগের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ বহাল রেখে ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সরকার। রাজনৈতিক সরকার সকল পক্ষের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মূসক আইন কার্যকর করতে হবে। আবার সাধারণ মানুষের স্বার্থের দিকটিও দেখতে হবে। আর অর্থমন্ত্রী এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা তার। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ফলপ্রসূ ও যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক সরকার, অনেক কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারের মেয়াদেরও শেষ সময়। মূসক আইনও কার্যকর করতে হবে, আবার সাধারণ মানুষের স্বার্থের দিকটিও দেখতে হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা আবার বসব। ব্যবসাবান্ধব সরকার অবশ্যই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সবার মঙ্গল হয় এমন সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অর্থমন্ত্রী বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন নিঃসন্দেহে। নতুন আইন অনুযায়ী ১৫ শতাংশ মূসক কি বাস্তবসম্মত নয়? জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন কথা বলি রাজনৈতিক ভাষায় কথা বলি। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, যাতে সবাই খুশি হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য যারা করেন, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও স্বাগত জানাবেন। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে মূসক আইন কার্যকর হবে এবং একই হারে হবে। নতুন আইনে ৪ হাজার ৮০০ পণ্যে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপিত হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। তারা চান, ৭ থেকে ১০ শতাংশ মূসক আরোপ করা হোক। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা প্যাকেজ মূসক চান। যদিও এনবিআর বলছে, আইনে সেই সুযোগ নেই। আগামী অর্থবছরে সরকার যে প্রায় সাড়ে চার লাখ ২১৮ কোটি টাকার বাজেট দিতে চায়, তার সিংহভাগ যোগান দেবে এনবিআর। তার ভিত্তিতেই সরকার এত বড় বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এদিকে বৈঠক শেষে মুহিত জানান, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের সিদ্ধান্তেও অনড় থাকার ঘোষণা দেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার। এরপর নতুন আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগের মতো এলাকা ও ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এনবিআরের ঠিক করে দেয়া নির্দিষ্ট হারের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালু রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সরকার সেই দাবি মানলেও প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বলেছিল, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে। এখন ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছেন। ভ্যাট আইন নিয়ে সম্প্রতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জানান, আইনটি ভাল। তবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করলে ভাল হবে। একটি বিরাট গোষ্ঠী ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসা করছেন। আইনটি কার্যকর হলে তারা চাপের মুখে পড়েবন। তাই আইনটি এমনভাবে কার্যকর করা হোক যাতে সবাই খুশি থাকেন এবং ভাল ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ও ট্যাক্সে সরকারের আয় বাড়ছে। তাই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব সরকার। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি, বাস্তবসস্মত সিদ্ধান্তের আলোকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবে সরকার।
×