ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাস্ট আইন দীর্ঘ ১৩৫ বছর পর সংশোধন, হচ্ছে বাংলায়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

ট্রাস্ট আইন দীর্ঘ ১৩৫ বছর পর সংশোধন, হচ্ছে বাংলায়

বিকাশ দত্ত ॥ আইন কমিশন ১৩৫ বছর পর ট্রাস্ট আইনকে সহজ যুগোপযোগী করার সুপারিশ ও বিলের খসড়া তৈরি করেছে। আইনটি সম্পূর্ণ বাংলায় করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। ১ বছর ৪ মাস ২৬ দিন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই আইনের খসড়া তৈরি করা হয়। এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ট্রাস্টের সব ধরনের বিধি ও বিধান একত্র করে একটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। এর ফলে কাউকে তিন জায়গায় দৌড়াতে হবে না। এক জায়গাতেই সব ধরনের আইন পাওয়া যাবে। এই তিনটি খসড়া থেকে ট্রাস্ট (সর্বজনিক ও ব্যক্তি উদ্যোগমূলক) বিল ২০১৭ প্রবর্তন করা হলে অপর দুটি প্রবর্তনের প্রয়োজন নেই। অথবা পৃথকভাবে ব্যক্তি উদ্যোগমূলক ট্রাস্ট বিল ও সর্বজনীন ট্রাস্ট বিলটি প্রবর্তন করা যেতে পারে। তাই, আইন কমিশন ‘ট্রাস্ট (সর্বজনিক ও ব্যক্তি উদ্যোগমূলক) আইন, ২০১৭’ নামক অপর একটি খসড়া বিল তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, ‘ট্রাস্ট (সর্বজনিক ও ব্যক্তি উদ্যোগমূলক) আইন, ২০১৭’ নামক একটি বিশদ আমব্রেলাল আইনে সর্বজনিক ট্রাস্ট ও ব্যক্তিগত ট্রাস্ট, উভয় প্রকার ট্রাস্ট অন্তর্ভুক্ত হলে ওই আইন একটি অভিন্ন আইন হিসেবে এ সংক্রান্ত ভবিষ্যত জটিলতা হ্রাস পাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এর সিদ্ধান্তের আলোকে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ বিগত ওই বছরের ৭ অক্টোবর পত্রের মাধ্যমে আইন কমিশনকে সরকারী ট্রাস্ট গঠনের জন্য একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ এ সংক্রান্ত একটি বিলের খসড়া প্রস্তুত করার অনুরোধ জ্ঞাপন করে। আইন কমিশন এ লক্ষ্যে দীর্ঘ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার তা তৈরি করেন। এই আইনটি তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন দুই সদস্য প্রফেসর ড. এম শাহ আলম ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর। সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা (জেলা জজ) ফয়জুল আজিম। মূল কাজটি করেন যুগ্ম জেলা জজ ফারজিনা হোসেন। ট্রাস্ট আইন ১৮৮২-এর আওতায় দেশে বেসরকারী খাতে বিভিন্ন ধরনের ট্রাস্ট গঠন করা হয়। কিন্ত সরকারী খাতে ট্রাস্ট বিষয়ের কোন অভিন্ন আইন নাই। বর্তমানে সরকারী খাতে ট্রাস্ট গঠন করতে হলে প্রতিটির জন্য পৃৃথক আইন গঠন করতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া সরকারের আওতায় ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য অভিন্ন আইন না থাকায় কর্মপ্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্যের অভাবও পরিলক্ষিত হয়। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে সংযোজিত হয়েছে জাতীয় ট্রাস্ট কমিশন সংক্রান্ত বিধানাবলী যেখানে বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পুরণ কল্পে ‘জাতীয় ট্রাস্ট কমিশন’ নামে সরকার একটি কমিশন প্রতিষ্ঠা করবে যা হবে একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা ও আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান। একজন চেয়ারম্যান যিনি হবেন বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বিভাগের একজন কর্মরত বা অবসর বিচারপতি অথবা অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ এবং ২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে ‘জাতীয় ট্রাস্ট কমিশন’ এবং তাদের একজন হবেন মহিলা। এ কমিশনের মূল কাজ হবে ওই আইনের প্রয়োগ, এই আইনের অধীনে গঠিত সকল প্রকার ট্রাস্টের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা, ট্রাস্টসমূহ ঘোষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে কি না, তদারকি করা। ট্রাস্টসমূহ হতে বার্ষিক প্রতিবেদন গ্রহণ করা, উদ্ভূত সকল প্রকার বিরোধের তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা। এই আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের উদ্দেশ্য সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা। সর্বজনিক ট্রাস্ট আইন ২০১৭: সরকারী বা সর্বজনিক ও জনকল্যাণ সম্পর্কিত ট্রাস্টের সংজ্ঞা প্রদান, গঠন, পরিচালনা এবং সংশোধনের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। সর্বজনিক ট্রাস্ট সৃষ্টি, জনকল্যাণমূলক ট্রাস্টের বিধানসমূহ এবং ব্যক্তি সৃষ্ট জনকল্যাণমূলক ট্রাস্ট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিধানাবলী আলোচিত হয়েছে। সর্বজনিক ট্রাস্টের দায়িত্ব হবে ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন, ট্রাস্টের তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিনিয়োগ, ট্রাস্টের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অর্থায়ন, ট্রাস্টের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও হেফাজতকরণ, সরকারী উৎস ছাড়াও অন্যান্য উৎস হতে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে, বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থপ্রাপ্তির উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ, ট্রাস্টের উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষসহ যে কোন সরকারী-বেসরকারী, দেশী-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বা সংগঠনের সঙ্গে প্রচলিত আইন সাপেক্ষে চুক্তি সম্পাদন ও সমন্বিত কর্মসূচী পরিচালনা করা। ব্যক্তি উদ্যোগমূলক ট্রাস্ট আইন ২০১৭-এর নবম অধ্যায়ে সংযোজন হচ্ছে ‘ব্যক্তি উদ্যোগমূলক পরিবার কল্যাণ ট্রাস্ট’ যেখানে বলা হয়েছে যে কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণার্থে ট্রাস্ট গঠন করতে পারবে। এবং ওই সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। সর্বোপরি ট্রাস্ট সৃষ্টিকারী বা তার উত্তরাধিকারীগণ তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে কোন সময়ে এই প্রকার ট্রাস্টের অবসান ঘটাতে পারবে। ট্রাস্ট (সর্বজনিক ও ব্যক্তি উদ্যাগমূলক) আইন ২০১৭ মূলত একটি পরিপূর্ণ ট্রাস্ট আইন যেখানে সকল প্রকার ট্রাস্ট আইনের বিধানাবলী সংযোজিত হয়েছে।
×