ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সঞ্চালন লাইন করে এক বছরের মধ্যেই এই বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব

এবার হলদিয়া থেকে ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

এবার হলদিয়া থেকে ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আনা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ বাংলাদেশের কাছে আরও ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (পিটিসি)। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ার কয়লাচালিত একটি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে এই বিদ্যুত বিক্রিতে আগ্রহী পিটিসি। এখন ভারতের বেসরকারী খাতের ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রতিদিন সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে এক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশে এই বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কোম্পানি। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসকে বিদ্যুত বিক্রির আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে কোম্পানিটি। বিদ্যুত সচিব আলোচনার জন্য বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে এক হাজার মেগাওয়াট আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ভুটানের জলবিদ্যুত প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়াও ভারত থেকেও আরও বিদ্যুত আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে। কোম্পানি তাদের প্রস্তাবে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে যে দরে বিদ্যুত কিনছে এই বিদ্যুতের দরও তেমনই হবে। এই বিদ্যুত বাংলাদেশে নেয়ার জন্য ১৭০ কিলোমিটার সরাসরি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে বাংলাদেশে এই বিদ্যুত সরবরাহ করতে চায় তারা। হলদিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের নিজস্ব সাবস্টেশন থেকে সব থেকে নিকটবর্তী খুলনার গোয়ালপাড়া সাবস্টেশনে এই বিদ্যুত আনা সম্ভব বলে জানিয়েছে কোম্পানি। চিঠিতে বলা হয়েছে, মেসার্স ইন্ডিয়া পাওয়ার হলদিয়াতে একটি ৪৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। কেন্দ্রটির প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০ মেগাওয়াট। এরমধ্যে প্রথম ইউনিটটি ইতোমধ্যে উৎপাদনে এসেছে। বাকি দুটি ইউনিট শীঘ্রই উৎপাদনে আসবে। বলা হচ্ছে, মেসার্স ইন্ডিয়া পাওয়ার এর বিভিন্ন জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেই কোম্পানি বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণ বাণিজ্যে কাজ করে। প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, বিদ্যুত কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লায় চলবে। বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে কয়লার আমদানি মূল্যে দরকে প্রভাবিত করবে। বিদ্যুত বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য প্রতি কিলোওয়াটের ট্রান্সমিশন চার্জ প্রস্তাব করা হচ্ছে দশমিক ০৮৪ ডলার। এছাড়া বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রভাবক বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থায়ী ব্যয় এবং জ্বালানি ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সঙ্গে ২৫ বছরের ক্রয় চুক্তি সই করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের ঝাড়খ-ে নির্মাণ করা আদানি পাওয়ারের এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চুক্তি করেছে সরকার। এই কেন্দ্রটিও বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রটি থেকেও সরাসরি বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। এই বিদ্যুত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে প্রবেশ করে। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট কেনা হয় ভারতের সরকারী খাত থেকে, বাকি ২৫০ মেগাওয়াট আসে বেসরকারী খাত থেকে সরকারী খাতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে প্রায় তিন টাকা। আর বেসরকারী খাতের প্রতি ইউনিট বিদ্যুত কেনা হয় গড়ে ৬ টাকায়। অন্যদিকে ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতী জেলার পালাটানায় স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কিনছে বাংলাদেশ। গত বছরের ২৩ মার্চ এই বিদ্যুত আমদানি শুরু হয়। এই ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে জাঙ্গালিয়া (কুমিল্লা) গ্রিডে যুক্ত হয়। ত্রিপুরার প্রতি ইউনিটের দাম পড়ছে সাড়ে পাঁচ রুপি (প্রায় সাড়ে ৬টাকা)। একই কেন্দ্র থেকে ৬০ মেগাওয়াট আমদানির জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি ভারত সফরে চুক্তি হয়েছে।
×