ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ প্রধান বিরোধী দলের

তুরস্কে গণভোটের ফল চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

তুরস্কে গণভোটের ফল চ্যালেঞ্জ

তুরস্কে সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে রবিবারের গণভোটে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সমর্থন দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে এর ফলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। রবিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে ৫১ শতাংশের কিছু বেশি ভোটে এরদোগানের ‘ইয়েস’ প্রচারাভিযান জয় পেয়েছে। এই জয়ের ফলে সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর সামনে আর কোন বাধা থাকল না। নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্ট সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন। এরদোগান এত সামান্য ভোটে সম্মতি পেয়েছেন যে তার প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার বৈধ হবে কি না তা নিয়ে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি প্রশ্ন তুলেছে। তাছাড়া নির্বাচনের ফল দেখিয়ে দিয়েছে সংস্কার ইস্যুতে তুরস্কের জনমত এখনও তীব্রভাবে দ্বিধাবিভক্ত। তারা শতকরা ৬০ ভাগ পুনর্গননার দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, সিলমারা হয় নাই এরকম অনেক ব্যালট পেপারকেও গণনায় আনা হয়েছে। রাজধানী আঙ্কারাসহ ইস্তানবুল ও ইজমিরের মতো বড় বড় শহরগুলোতে ‘না’ ভোট বেশি পড়েছে। গণভোটে ৮৫ শতাংশ ভোট পড়ে। গণভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দিয়ারবাকির শহরে নির্বাচনী সহিংসতায় তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমা পর্যবেক্ষকদের মতামত অবশ্য জানা যায়নি। ‘হ্যা’ ভোট যতটা পাওয়া যাবে আশা করা হয়েছিল ততটা পাওয়া যায়নি বলে উপপ্রধানমন্ত্রী ভেসি কায়নাক স্বীকার করেছেন। দেশটিতে বর্তমানে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। নতুন সংবিধানে একে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থা করা হবে। এরদোগানের সমর্থকেরা বলছেন, পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার পরিবর্তে নির্বাহী প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থার প্রচলন দেশকে সামনে এগিয়ে নেবে। গণভোটের এই ফল চ্যালেঞ্জ করা হবে বলে বিরোধীরা জানিয়েছে। তবে এরদোগান সবাইকে রায় মেনে নেবার আহ্বান জানিয়েছেন। বিদ্যমান নিয়ম অনুসারে দেশটিতে প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন হয়ে থাকে। সংবিধান সংস্কারের পর ২০১৯ সালের ৩ নবেম্বর হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। প্রতি মেয়াদে ৫ বছর করে দুই মেয়াদে ২০২৯ সাল পর্যন্ত এরদোগান ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। মন্ত্রীসহ সকল শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তাদের প্রেসিডেন্ট সরাসরি নিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়া কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হবে সীমিত। প্রেসিডেন্ট তখন একক সিদ্ধান্তেই জরুরী অবস্থা জারি করতে পারবেন। এরদোগান এর আগে কুর্দি ও ইসলামপন্থীদের তৎপরতা এবং চলমান সিরিয়া যুদ্ধের ফলে তুরস্ককে এখন যে অস্বাভাবাবিক অবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তা সামাল দেয়ার জন্য সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়ে ছিলেন। বিশ্লেষকরা একে আধুনিক তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার বলে মন্তব্য করেছেন। সমর্থকদের দৃষ্টিতে এরদোগান তুরস্কের আধুনিকায়নের রূপকার অন্যদিকে বিরোধীদের দৃষ্টিতে তিনি একজন একনায়ক। তিনি এর আগে ১০ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। তখন প্রেসিডেন্টের পদটি ছিল কেবল সাংবিধানিক। তাকে আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্কের পর তাকে তুরস্কের সবচেয়ে প্রভাবসম্পন্ন ও ক্ষমতাশালী নেতা বিবেচনা করা হয়। গত বছর জুলাই মাসে তার বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটলেও তা সফল হয়নি, ১২ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর দেশটিতে প্রায় এক লাখ সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হন, হাজার হাজার লোক কারাবন্দী হন। তখন থেকে দেশটিতে এখনও জরুরী অবস্থা জারি রয়েছে।
×