ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পানিশূন্য পদ্মা চরে সবুজ ফসল

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

পানিশূন্য পদ্মা চরে সবুজ ফসল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পদ্মা নদী এখন অনেকটাই পানিশূন্য। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। এসব চরজুড়ে এখন বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। পানিশূন্য পদ্মার বুকজুড়ে কেবলই সবুজ ফসল। বিশেষ করে জেলার বাঘা, পবা, চারঘাট আর গোদাগাড়ীর বিস্তীর্ণ চরে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজ ফসলের মাঝে মাঝে গড়ে উঠছে বাগান, যেন পদ্মার বুকে সবুজ বিপ্লব। যে পদ্মায় নৌকা নিয়ে জেলেদের মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকার কথা, এখন সে পদ্মায় কৃষক ব্যস্ত কৃষিকাজে। এক সময় পদ্মা প্রমত্তা থাকলেও এখন তা শুকিয়ে ও পলি পড়ে আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। বর্ষার পর থেকেই পদ্মার পানি কমতে থাকায় সেখানে সব ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে। নদীর চরে জেগে ওঠা জমিতে চাষ করা ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষক। আবার নতুন করেও চলছে চাষাবাদ। ফলেছে সোনার ফসল। কৃষক স্বপ্ন দেখছেন ভাল ফসল ঘরে তুলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার। চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, এক সময় চরের জমিতে শুষ্ক মৌসুমে শুধু ধান ও গম চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই চরের জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আমবাগান, পেয়ারাবাগান, বরইবাগান, কলাবাগান ও পেঁপেবাগান। আগের মতো বন্যার পানিতে জমি প্লাবিত হয় না। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে সেখানে বাগান গড়তে শুরু করে। গত চার বছর ধরে সেই হার বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মায় যেসব জমি জেগে উঠেছে এগুলো বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এসব জমি মূলত চারঘাটের ইউসুফপুর, পরাণপুর, বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর, পলাশী ফতেপুর, দাদপুর, কালীদাসখালী, কলিগ্রাম, পবা উপজেলার খিদিরপুর, শ্যামপুর, দাশমারী, ফুলতলা, তালাইমারী, শাহাপুর, শ্রীরামপুর ও বুলনপুর এলাকায়। এসব চরে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজির পাশাপাশি গম, ছোলা, মসুর, সরিষা ও বাদাম। এছাড়া শতাধিক আম, পেয়ারা, পেঁপে, কলাবাগান। এসব ফসলের পাশাপাশি এখন শুরু হয়েছে বোরোর চাষাবাদ। বাঘার চরাঞ্চলের পলাশী ফতেপুরের চাষী জুলফিকার আলী জানান, তিনি ৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেছেন। এসব জমিতে শীতকালে ছিল গম, ছোলা, মসুর, খেসারী ও বাদাম। জমিতে লাঙ্গলের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করেন। মাটি নরম থাকার কারণে চাষের খরচ কম। এছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হয় শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া যায়। তিনি জানান, শ্যালো মেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় সেচ খরচ বেশি পড়ে। তবে চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। ফলে চাষীরা ফসল চাষ করে লাভবান হন। শ্রীরামপুর এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রায় ৩৫ বিঘা জমি চাষ করেছেন। ফসল ঘরে তুলে লাভবান হয়েছেন। এখনও চাষাবাদ চলছে। চকরাজাপুর এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, প্রথমে ভুট্টা, সরিষা ও মসুর চাষাবাদ করেন। এগুলো জমি থেকে তুলে সেখানে এখন সবজির চাষ করেছেন। পাশাপাশি চলছে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বোরোর চাষাবাদ। চরের জমিতে বন্যার সময় পলি পড়ায় উর্বরতা বেড়েছে। এ কারণে কম খরচে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করে এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক এখন সচ্ছল হয়েছেন বলে জানান তিনি। বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আলম জানান, চরাঞ্চল এখন আর চর মনে হয় না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অসংখ্য বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটেছে। গত ৪-৫ বছর ধরে চরে ফসলের চাষ বেড়েছে। এখন বাগান গড়ে তোলার দিকে ঝুঁকছে মানুষ। পবা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনজুরে মওলা বলেন, চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ভাল ফসল ফলানোর জন্য তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। ফসল উৎপাদনও ভাল হয়। এ কারণে কৃষকের মাঝে পদ্মার চরে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। গত কয়েক বছরে চরে সবুজের নীরব বিপ্লব হয়েছে। এতে রাজশাহীতে উৎপাদনও বেড়েছে সব ধরনের সবজির। সম্প্রতি সরেজিমন দেখা যায়, বাঘা উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার চকরাজাপুর, পলাশী ফতেপুর, দাদপুর, কালীদাসখালী এলাকা ভরেছে সবজির পাশাপাশি বোরো চাষে। লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি হচ্ছে এখানে। বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, চরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। ভাল ফসল ফলানোর জন্য তারা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন।
×