ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভবিষ্যতে কৃষি দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হবে ॥ মতিয়া

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

ভবিষ্যতে কৃষি দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হবে ॥ মতিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া কৃষি কল্পনা করা যায় না। তবে কৃষি উন্নয়নে যান্ত্রিকীকরণ যেমন দরকার সেইসঙ্গে যন্ত্র ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ। যন্ত্র কে পরিচালনা করছে, কার হাতে পরিচালিত হচ্ছেÑ তাও ভাবতে হবে। রোপণ, কর্তন ও মাড়াই-ই নয়, ফসলের উন্নতি করতেও যন্ত্রের আবিষ্কার করতে হবে। কৃষি উত্তরাঞ্চল থেকে ভবিষ্যত দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কৃষি দক্ষিণাঞ্চলে স্থানান্তর হবে। তাই জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততা মাথায় রেখে কৃষি গবেষণা, যন্ত্রপাতি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা বের করতে হবে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর পিকেএসএফ অডিটরিয়ামে ‘রুরাল মেকানাইজেশন : এ ড্রাইভার ইন এগ্রিকালচার চেঞ্জ এ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এম এ সাত্তার ম-ল, স্টিফেন ডি বিগস ও স্টক ই জাস্টিসের যৌথ সম্পাদনার এই বইটি প্রকাশ করে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লিউসিভ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ডেভেলমেন্ট (আইএনএম)। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি কিন্তু বেশিদিন উত্তরবঙ্গে থাকবে না। ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গ শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হবে। এই যে উত্তরবঙ্গ থেকে কৃষি বিলুপ্ত হবে, কৃষি জমি কমে যাবে; তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি স্থানান্তরিত হবে। সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে যে জমি পাওয়া গেছে তা কাজে লাগাতে হবে। নতুন উদ্ভাবনী বের করা সম্ভব না হলে হাবুডুবু খেতে হবে। যদিও বাঙালী হাবুডুবু খায় না। পন্থা বের করে। তাই জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততা মাথায় রেখে কৃষি গবেষণা, যন্ত্রপাতি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা বের করতে হবে। তিনি আরও বলেন, একই যন্ত্র বাঙালীর হতে পরলে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। শ্যালো মেশিন যিনি আবিষ্কার করছেন তিনি কখনও ভাবেননি এটা নৌকায়ও ব্যবহৃত হবে। আর এভাবেই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দেশের কৃষিতে বড় যন্ত্র উপযোগী নয় জানিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জন্য বড় আকারের যন্ত্র নয়, যন্ত্র হতে হবে ছোট ছোট; তবে আধুনিক। দেশে ছোট ছোট শিল্প কারখানায় নিজস্ব প্রযুক্তিতে যেসব যন্ত্র আবিষ্কার হচ্ছে- সেসব যন্ত্রপাতিকে আরও বেশি উৎসাহিত করতে হবে। সরকারী সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুঁজি কৃষকের হাতে থাকে না। প্রয়োজন সরকার বা সমাজের সহায়তা। সমাজ কিন্তু সরাসরি কৃষকে সহায়তা করে না। যাদের হাতে শাসনভার থাকে তাদের দ্বারা সহায়তা করায়। এজন্য সরকারকে ভাবতে হয় দেশ ভিক্ষা করে চলবে কি-না। না খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। ১৯৯৬ এর আগে বা ২০০১ এর পরে দেশ কিন্তু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। আগে যারা ছিল তারা ভাবতো দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে বিজ্ঞানীদের দ্বারা টিউটর পেপার তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে সেখানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। আজ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি নেই। এ সময় তিনি জীনম ও হাইব্রিড নিয়ে সমালোচনাকারীদেরও সমালোচনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষিতে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তা বিস্ময়কর। যন্ত্রপাতির ৮০ শতাংশই ছোট, এটা কিন্তু কৃষকের অবদান। মেশিনগুলো শুধু ফসলি কাজেই যুক্ত ছিল না, অন্য কাজেও ব্যবহার হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়নে গ্রামীণ অবকাঠামোও ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সরকার কৃষি যন্ত্রপাতিতে উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। মেকানাইজেশন ও জেন্ডার নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে। কেননা কৃষিতে নারী ব্যাপক অবদান রাখছে। একই সঙ্গে যন্ত্রপাতির জন্য মেয়েদের কষ্ট কমেছে। তিনি বলেন, আমরা শুধু কর্পোরেট মনোভাবের কারণে বড় যন্ত্রের কথা বলি। কিন্তু বাস্তবতা চিন্তা করে ছোট যন্ত্র নিয়ে বেশি কথা বলা উচিত। কৃষি উন্নয়নে এ দেশে যে লুকায়িত গল্প রয়েছে তা বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে হবে। স্বদেশের প্রতি যে ভাবনা তা সামনে রেখে নতুন করে এগিয়ে যেতে হবে। সৈরচালিত সেচযন্ত্রের ক্ষেত্রে সরকারে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে উৎপাদন ও পক্রিয়াজাতকরণÑ উভয়টি নিয়েই ভাবতে হবে। কোন কিছু তখনই টেকসই হয়, যখন তার উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। কৃষির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও হবে। নীতি ও সহায়তা যা প্রয়োজন তার সবকিছ্ইু সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এতে বক্তব্য রাখেন আইএনএমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুস্তফা কে মুজেরি, এ এ সাত্তার ম-ল, আক্তার আহমেদ, বিআরসির সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়াইস কবির ও সিমিটর ত্রিমতি জে ক্রুপিনক।
×