ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিক উপলক্ষে দু’হাজার লোক নেবে ঐ দেশ

কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রতিনিধি দল জাপান যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রতিনিধি দল জাপান যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল জাপান যাচ্ছেন সোমবার। প্রতিনিধি দল জাপানে ২০২০ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিক আসরের জন্য কর্মী নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দেশটি অলিম্পিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন কাজে হাত দিয়েছে। উন্নয়ন কাজের জন্য বেশ কয়েকটি দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে জাপান। বাংলাদেশ থেকেও তারা দক্ষ কর্মী নিয়োগ করবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ৬০০ ডাক্তার ও দুই হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জাপানের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের’ (আইএম জাপান) একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিতে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও আইএম জাপানের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কিওই ইয়ানাগিসাওয়া স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তির আওতায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতেই প্রতিনিধি দল জাপান যাচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে থাকবেনÑ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নুরুল মজিদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা, উপ-সচিব সাহিনা ফেরদৌস, পিএস মোঃ মোহসিন। প্রতিনিধি দল সেখানে ৯ দিন অবস্থান করবে। আগামী ২৬ এপ্রিল প্রতিনিধি দল দেশে ফিরবে। জাপানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে অধিক দক্ষ কর্মী নিয়োগের। জাপানের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়টি প্রতিনিধি দল নিশ্চিত করতেই মূলত এই সফর। বর্তমানে সারা বিশ্বে দক্ষ কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি এবং প্রেরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাপানে নির্মাণ খাতে বাংলাদেশী কর্মীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা চায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে। জাপানের বাজারটি চালু হলে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া এই বাজারে কর্মীদের বেতন-ভাতা অনেক ভাল। জাপানে কর্মী পাঠানোর এমন সুযোগ জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে বড় একটি বিষয়। দক্ষ কর্মী নিয়োগের আগেই জাপান ৬০০ ডাক্তার নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। আইএম নিজেরাই ডাক্তার ও কর্মীদের সাক্ষাতকার নিয়ে নিয়োগের জন্য বাছাই করবে। এখানে মন্ত্রণালয় তাদের সহযোগিতা দেবে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাপানের ৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওইসময় জাপানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএম জাপানের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কিওই ইয়ানাগিসাওয়া। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) আওতায় জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিমাণ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ থেকে নেয়া শিক্ষানবিশ কর্মীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরে তারা দেশে ফিরে নিজেই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। আইএম জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ২০১৫ সালের ৮ জুলাই টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই সময় চারটি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তখনকার চুক্তিতে টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ তিন বছর মেয়াদি জাপানে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকত। চুক্তির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ পাঁচ বছর মেয়াদি জাপানে কাজের সুযোগ পাবেন। মেয়াদ শেষে তারা দেশে ফিরে নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। তাদের অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী শিল্প ও কলকারখানায় উচ্চ বেতনে ম্যানেজার ও সুপারভাইজার পর্যায়ে নিয়োজিত হতে পারবেন। এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মধ্যমে প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছর করা, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নির্বাচন ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিñিদ্রকরণ, প্রাক-বহির্গমণ প্রশিক্ষণ আরও কার্যকরকরণ, টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের পাঁচ বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে ম্যানেজার-সুপারভাইজার পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা ও আইএম জাপান, টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসমূহ থেকে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট গ্রহণ করবে ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। জানা গেছে, গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিক অনুষ্ঠান আয়োজন উপলক্ষে প্রাথমিকভাবে দুই হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী জাপান নেবে। তাদের এক বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, একজন কর্মী জাপানে যাবে অদক্ষ কর্মী হিসেবে। ৫ বছর পরে ওই কর্মী যখন দেশে ফেরত আসবে দক্ষ কর্মী বা উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। জাপান সরকারের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী একজন কর্মীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা হয়। এক বছর কাজ করে চলে এলে কর্মীরা পাবে দুই লাখ ইয়েন। আর পুরো ৫ বছর কাজ শেষে ফিরে আসার সময় দেয়া হবে ১০ লাখ ইয়েন। এই টাকা দিয়ে একজন দক্ষ কর্মী দেশে মাঝারি ধরনের ব্যবসা বা সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে সফল হতে পারবেন।
×