ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী ও কিছু আমলার চক্রান্ত

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরও ঝুলে আছে নাগরিকত্ব আইন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরও ঝুলে আছে নাগরিকত্ব আইন

তপন বিশ্বাস ॥ কিছু আমলার বিরোধিতায় আটকে আছে নাগরিকত্ব আইন। আমলাদের এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিতদের বিদেশী নাগরিকত্ব লাভের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিধান থাকা এ বিরোধিতার মূল কারণ। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করা ব্যক্তি ও তাদের বংশধররা ফিরে এলেও দেশের নাগরিকত্ব পাবে না। এতে সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারবিরোধী একটি চক্রও এ আইন পাস না করার জন্য বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ একটি নাগরিকত্ব আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে বা তথ্য গোপন করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটন করলে প্রথমবারে কৃত অপরাধের জন্য বর্ণিত দ-ের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার বছর কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে আইনটিতে। বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব প্রদান, আবার নাগরিকত্বের অবসানের বিধানও থাকছে নতুন এ আইনে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন নাগরিকত্ব আইন পাস করা হলে দেশ-বিদেশে সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, এমনকি বিদেশে অবস্থানরত অনেক তরুণ, মেধাবী ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ পাবেন। ফলে দেশের আর্থসামাজিক শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার পরও রহস্যজনক কারণে নতুন নাগরিকত্ব আইন আলোর মুখ দেখছে না। আইনটি আদৌ সংসদে উত্থাপন করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, নাগরিকত্ব আইনের নতুন কিছু বিধানের ফলে সামরিক ও বেসামরিক আমলার একটি অংশ, বিহারী ও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের একটি গ্রুপ সম্মিলিতভাবে পৃথক অবস্থান থেকে নতুন এ আইনের বিরোধিতা করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন মহলে চাপ সৃষ্টি করছে। আইনটি মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে যাচ্ছে না। নতুন নাগরিকত্ব আইনটি মন্ত্রিসভা ২০১১ সালে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। দীর্ঘ চার বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এ আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের জন্য প্রেরণ করে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে একাধিক মিটিং করে। এবং আইনটি চূড়ান্ত করে ২০১৫ সালের শেষদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করে। পরে মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি প্রস্তাবিত কতিপয় বিধানে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনটি পাস করানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত নতুন নাগরিকত্ব আইনে সরকারী চাকরিজীবী (সামরিক ও বেসামরিক) উভয়েই সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ পদে বা চাকরিতে থাকাকালীন বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে যারা বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন এবং স্বাধীনতার পরে উক্ত ব্যক্তিগণ বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করেন বা পাকিস্তান বা অন্য কোন রাষ্ট্র থেকে এ আইন কার্যকর করা পর্যন্ত দেশে ফিরে না আসেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবেন না। এছাড়াও রোহিঙ্গা, বিহারী বা অন্য কোন ব্যক্তি যার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য নেই তারাও নাগরিকত্বের অযোগ্য হবেন। এছাড়া নাগরিকত্ব বাতিল হবে যদি কোন ব্যক্তি বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন এবং বাংলাদেশে কখনই স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি। বাংলাদেশের জন্য এমন প্রয়োজনীয় এবং যুগোপযোগী আইনটি স্বার্থান্বেষী কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। পরোক্ষভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় একটি আইন সরকারী-বেসরকারী আমলাতন্ত্র তথাকথিত সাংবিধানিক পদধারী কিছু ব্যক্তি এবং স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্রের ষড়যন্ত্রের ফলে আইনটি পাস করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র উল্লেখ করেছে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, মন্ত্রীর একান্ত সচিব এবং তাদের নিকটজনদের অনেকেরই বিদেশী নাগরিকত্ব রয়েছে। আমলাদের অনেকেই চান না সরকারী চাকরিজীবীদের বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণে কোন প্রকার বাধানিষেধ থাকুক কারণ অবসরের পর দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলাই বিদেশে পাড়ি জমান। তাই নতুন এ আইনটি পাস হলে দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলার বিদেশে পাড়ি জমানো বা আত্মগোপনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি নাগরিত্ব আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে ‘দ্য সিটিজেনশিপ এ্যাক্ট ১৯৫১ এবং দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশন) অর্ডার, ১৯৭২ (অর্ডার নং ১৪৯ অব ১৯৭২) বিধান বলে দেশের নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যমান এই আইন ও আদেশে বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্বের বিধান নাই। নতুন এই আইনে বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ থাকছে। তবে বিদেশী নাগরিক বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক লাভ করলেও কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি নাগরিকত্ব হারাবেন। বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব ॥ খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রেও আবেদনকারীকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে তিন বছর বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। উক্ত তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসা, শিক্ষা অথবা জরুরী প্রয়োজনে বাংলাদেশের বাইরে গমন করতে সাময়িক অবস্থানকাল পরবর্তীতে তাকে বাংলাদেশে অবস্থান করে প্রথম আগমনের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে মোট তিন বছর পূর্ণ করতে হবে। এ সময়কে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে বসবাসের আওতাধীন বলে গণ্য হবে। এই ধারায় আরও বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব লাভের পর কোন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী স্বামী বা স্ত্রীর নাগরিকত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। নিবন্ধন সূত্রে নাগরিকত্ব ॥ কোন সাবালক এবং সমর্থ ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধন করা যাবে। যদি তার পূর্বপুরুষ (জীবিত অথবা মৃত) অবিভক্ত ভারতে জন্মগ্রহণ করেন; তিনি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হন এবং আবেদনপত্র অব্যাবহিত পূর্বে কমপক্ষে পাঁচ বছর বাংলাদেশে বসবাস করেন। তবে শর্ত থাকে যে-উল্লেখিত পাঁচ বছরের মধ্যে তাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন বছর বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। বাংলাদেশের বাইরে তার অবস্থান একাধারে ছয় মাসের বেশি হতে পারবে না। আবেদনের আগে একাধারে কমপক্ষে তিন মাস বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। এ সকল শর্ত পূরণ করতে তিনি বাংলাদেশের স্থায়ী আবাসিক অধিকার সনদ অর্জন করার যোগ্য হবেন। অপরাধ সংঘটন ও পুনঃসংঘটনের দ- ॥ এই আইনের অধীনে কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে যদি কোন মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। যদি কোন ব্যক্তি পুনরায় একই অপরাধ সংঘটন করেন সে ক্ষেত্রে প্রথমবারে কৃত অপরাধের জন্য বর্ণিত দ-ের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব ॥ প্রবাসে অর্জিত নাগরিকত্বের কারণে এই আইনে নিজ দেশের অর্জিত নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদনের পর তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা যাবে। এটি দ্বৈত নাগরিকত্ব হিসেবে গণ্য হবে। কোন বাংলাদেশী নাগরিক কোন কারণে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের অবসান ঘটানোর পর বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পন্থায় তার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে তা বিবেচনায় নিয়ে অন্য কোন আইন দ্বারা বারিত না হলে তার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করার বিধান রাখা হয়েছে। জন্মসূত্রে নাগরিক ॥ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি জন্মসূত্রে নাগরিক হবেন, যদি তার পিতা বা মাতা এ আইন বলবৎ হওয়ার তারিখে বা এর পরে অথবা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে এই আইন বলবৎ হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হন বা থাকেন। এছাড়া খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, এই আইন বলবৎ হওয়ার পর দুই বছর বয়স পর্যন্ত কোন শিশু বাংলাদেশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেলে এবং যদি সম্পূর্ণ বিপরীত কিছু প্রকাশ না পায় তাহলে ওই শিশু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে বলে ধরে নিয়ে তাকে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক করা যাবে। বংশসূত্রে নাগরিকত্ব ॥ কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোন দেশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। তবে তার পিতা বা মাতা বংশসূত্র ছাড়া ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে এই আইন বলবৎ হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্য কোনভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকলে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। তবে কোন ব্যক্তির পিতা বা মাতা কেবল বংশসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার কারণে উক্ত ব্যক্তি এই আইনের অধীনে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না, যদি বাংলাদেশী কনস্যুলেট বা দূতাবাসে তার জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন করা না হয়; তিনি যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন সে দেশের নিয়মানুযায়ী জন্ম নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত না হন; অথবা জন্মকালে তার পিতা বা মাতা বাংলাদেশ সরকারের অধীনে কিংবা প্রেষণে/লিয়েনে অন্যত্র চাকরিতে না থাকেন। বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক অধিকার ॥ যদি কোন ব্যক্তি নির্ধারিত অংকে বৈদেশিক মুদ্রায় বা বৈদেশিক মূলধন ও যন্ত্রপাতি বা উভয় প্রকারেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন বা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও অংকে বাংলাদেশের কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন এবং এতদুদ্দেশ্যে বাংলাদেশে নির্ধারিত সময়কাল অবস্থান করেন, তাকে বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক অধিকার সনদ প্রদান করা যাবে। তবে তিনি এ ধারার অধীনে নাগরিকত্ব অর্জন না করা পর্যন্ত, তাকে বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নিবাসী বলে গণ্য করা হবে। এছাড়া খসড়ায় নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে-নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত জাহাজ বা উড়োজাহাজে জন্মগ্রহণ, দেশীয়করণসূত্রে নাগরিকত্ব, ভূখ- সংযোজনসূত্রে নাগরিকত্ব, স্থায়ী নিবাসের সনদ, নিবন্ধন এবং দেশীয়করণের মাধ্যমে অর্জিত নাগরিকত্বের কার্যকারিতা, নিবন্ধন বহি, নিবন্ধন সনদ, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নিবন্ধন সংশয়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ, নাগরিকত্ব পরিত্যাগ, নাগরিকত্বের অবসান পুনর্বিবেচনা ইত্যাদি ধারা সংযোজিত হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে আইনটি বলবৎ হলে বিদ্যমান ‘দ্য সিটিজেনশিপ এ্যাক্ট ১৯৫১ এবং দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ (টেম্পোরারি প্রভিশন) অর্ডার, ১৯৭২ (অর্ডার নং ১৪৯ অব ১৯৭২) রহিত হবে। আইনটিতে অসঙ্গতি ॥ দেশে প্রথমবার এই পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও নাগরিকত্ব সনদ কে প্রদান করবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিতে পারে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এই আইনে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। এমনকি জন্মসূত্রে বা বংশ সূত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের প্রদত্ত নাগিরকত্ব সার্টিফিকেট প্রদানের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনুসন্ধানের জানা গেছে, স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত আইনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ আইন (২০০৯), পৌরসভা আইন (২০০৯) এবং সিটি কর্পোরেশন আইনে (২০০৯) নাগরিকত্ব সনদ কে দেবে তার কোন বিধান নেই। তবে ১৯৪৭ সালের পর ১৯৫১ সালের নাগরিকত্ব আইন প্রবর্তন এবং ১৯৭২ সালে নাগরিকত্ব সম্পর্কিত অস্থায়ী আদেশ জারির পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রগণ নাগরিকত্ব সনদ দিয়ে আসছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের নাগরিকত্ব সনদ দেয়ার কোন আইনগত ভিত্তি স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট আইনে নেই। সদস্য মন্ত্রিসবায় অনুমোদন পাওয়া দেশের প্রথমবার করা পূর্ণাঙ্গ নাগরিক আইনেও নগরিকত্ব সনদ কে দেবে সে সংক্রান্ত কোন বিধান রাখা হয়নি। প্রস্তাবিত এ আইনের দুই-একটি জায়গায় যেমন সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব, দেশীয়করণ সূত্রে নাগরিকত্ব, স্থায়ী নিবাসের সনদ, দ্বৈত নাগরিকত্ব সরকার দিতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু জন্মসূত্রে বা বংশসূত্রে নাগরিকত্বের সনদ কে প্রদান করবে সে বিষয়ে প্রস্তাবিত এ আইনে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া আইনে নাগরিকত্ব ব্যবস্থাপনা কোন বিধানও রাখা হয়নি। যেটি ভারতের জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে নাগরিকত্ব ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও জন্ম, মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এ কর্তৃপক্ষকে নাগরিকত্ব ব্যবস্থাপনা ও সনদ প্রদানের দায়িত্ব দেয়া যেত। কিন্তু তা দেয়া হয়নি। এছাড়াও যেসব ক্ষেত্রে সরকারের নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে সে ক্ষেত্রে সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে ওই ব্যক্তির আপীল, রিভিশন বা রিভিউ করার কোন সুযোগ রাখ হয়নি। জানা গেছে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইতোপূর্বে দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নাগরিকত্ব সনদ প্রদান এবং ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। এতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপীল, রিভিউ করার বিধান রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে শেষ পর্যন্ত তা রাখা হয়নি।
×