ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

বিশ্ব ভারতীতে একদিন এবং কলকাতার আন্তর্জাতিক সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

বিশ্ব ভারতীতে একদিন এবং কলকাতার আন্তর্জাতিক সম্মেলন

(গতকালের চতুরঙ্গ পাতার পর) এ কারণেই ইয়েটস মন্তব্য করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ হচ্ছেন সামগ্রিক অর্থে মানুষের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছায়া, সমস্ত সভ্যতা আমাদের কাছে যা অগুণনীয়ভাবে বিস্ময়কর! ইয়েটসের বক্তব্যটি বিশ্ব ভারতীয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ওইখানে দাঁড়িয়ে বার বার মনে পড়ে গেল। কবি তো স্বপ্নদ্রষ্টা আর সার্থক বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু। এ কারণে স্বাধীনতা সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনুপ্রেরণা। আমার বাবা ‘রবীন্দ্রনাথ : অন্তরঙ্গ আলোকে’ যখন রচনা করেন শৈশবে দেখতাম আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়তেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের মননে আর শক্তির উৎস হিসেবে বাঙালী চেতনাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাই পাকিস্তানী শাসকরা রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করতে চেয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শুনেছি কি গভীর আবেগের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন বিভিন্ন আলোচনা ও বক্তব্যে। সে মুহূর্তে মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা : ‘অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে! নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে। জাগ্রত করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে! মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে।’ রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ্য মনে মনে নিবেদন করে যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন কলকাতা নগরীর দিকে ফেরার পালা। ফেরার পথে ভাবছি, দু’দেশের মধ্যে অভিন্নমাত্রার যোগাযোগ, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার পাশাপাশি জঙ্গীবাদী ভাবনা থেকে মুক্ত হওয়ার এক অপরূপ পন্থা হতে পারে। শেখ হাসিনা যথার্থভাবেই বাংলাদেশ-ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের উদ্যোগ নিয়েছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্স’ মুকুন্দপুরে অবস্থিত। মানবসেবার জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া দরকার- যেখানে বেসরকারী খাতে চিকিৎসা পণ্য ক্রয় বরং সেবা হয়ে উঠবে। আজকাল এ দেশে পাঁচ তারকাবিশিষ্ট কিছু হাসপাতাল গড়ে উঠেছে- যাদের অর্থগৃধœু বললে কম বলা হবেÑ বরং শাইলকের চেয়েও অধম। অর্থ খরচ করেও বেসরকারী খাতে স্বাস্থ্যসেবা এদেশে পাওয়া যায় না। কলকাতা ফিরেই দেখলাম ফিউচার ইনস্টিটিউটের প্রথম আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেয়ার আহ্বান। প্রফেসর ড. শান্তনু রায়, পরিচালক, ফিউচার ইনস্টিটিউটের অনুরোধপত্র পেয়ে মানা করার মতো শক্তি পেলাম না। কেননা ড. শান্তনুদার আদি বাড়িও বাংলাদেশে। সে প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক ও তাদের স্ত্রীদের আদি বাড়ি এদেশে। যখন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গেলাম তখন মনে হলো একরাশ স্বজনের মধ্যে এসে পৌঁছেছি। দেশে-বিদেশে বহু কনফারেন্সে অংশ নিলেও এ প্রতিষ্ঠানের কনফারেন্সটি মনে হচ্ছিল যেন একরাশ বাঙালীর মধ্যেই অনুষ্ঠান হচ্ছে। তফাৎ কেবল তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব মনোভাব এবং সময় জ্ঞান। আমাদের কাছে অনুষ্ঠানে উদ্ভাবনী শক্তি, ব্যবস্থাপনার ওপর যে আলোকপাত তা শিল্প ও শিক্ষার সঙ্গে যথার্থ সংযোগ ঘটানোর প্রয়াস। এদিকে দেশে দশটার ট্রেন কয়টায় আসেÑ ঠিক তেমনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে দেরিতে শুরু হয়। অনুষ্ঠানে আরেকটি দিক ভাল লাগল, তারা কিন্তু মোটামুটিভাবে ইংরেজীর মতোই দৌউ দিউ, ইউকে, আপনি, তুই, তুমির বদলে তুমি কে মূলত আঁকড়ে ধরেছে। অথচ আমাদের দেশে এখনও তিনটি ভাগে বিভক্ত- আপনি, তুই, তুমির মধ্যে কেবল তুমিকে যথার্থ গুরুত্ব দিলে ভাষা অনেক সহজ হয়ে উঠবে। অবশ্য ইদানীং বাংলা ভাষাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার লোকের অভাব হয় না। তথাকথিত রেডিওর জকিরা এ কাজটি করে আমাদের ভাষাকে নষ্ট করছে। এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত বিএনপি-জামায়াত ভাষাকে বিকৃত করার প্রয়াসে বেসরকারী রেডিও চ্যানেলগুলোকে কাজে লাগিয়েছিল- এটি বন্ধ হওয়া দরকার। জিন্নাহর প্রেতাত্মা তাদের মধ্যে বহমান। অথচ সংস্কৃতিপ্রেমীরা সোচ্চার হলে ভুল বাংলা বলা বন্ধ হবে। সুব্রত দা জানালেন তাদের পুরো কনফারেন্স স্পন্সরড। এদিকে বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে এ দেশের মানুষের মধ্যে। তারপরও সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক বিভাজন তথাকথিত ইংরেজী জ্ঞানীরা বাংলায় কথা বলা বন্ধ করতে সচেষ্ট। আর তাই তো তারা হয়ে পড়ছে সমাজ ও জনবিচ্ছিন্ন। একটি পৃথক শ্রেণী বর্তমানে তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানীদের সতর্ক হওয়া উচিত। এবার শেখ হাসিনার ভারত সফর দু’দেশের বন্ধুত্বকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করবে। ৬২ দফার বিবৃতিতে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ফুটে উঠেছে। মোট ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে শুনতে মনে হলো সে পুরনো গল্প চার অন্ধের হস্তি দর্শন। দেশ কি আলু পটোল যে বিক্রি করা যায়? আসলে নোংরামি ইতরামির সীমা-পরিসীমা কি বিএনপি-জামায়াত নেতা-নেত্রীরা মেনে চলেন? যুদ্ধাপরাধীদের প্রেতাত্মাই তো বর্তমান জঙ্গীগোষ্ঠী। আমাদের দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছেÑ বিদ্যুত ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভারত সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে। উদ্ভাবনী শক্তি ও কৃতকার্যতা দেশের উন্নয়নকে সুসংহত করতে পারে। সামাজিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় জননেত্রীর নেতৃত্বগুণ উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ
×