ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান যুদ্ধে নতুন মোড়!

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৭

আফগান যুদ্ধে  নতুন মোড়!

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী নানগড়হার প্রদেশের আচিন এলাকায় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বোমা বর্ষণের ঘটনাটি উদ্বেগজনক বৈকি। উৎকণ্ঠা এই কারণে যে, আফগানিস্তান-পাকিস্তানে হরহামেশাই বিভিন্ন স্থানে বোমাবর্ষণসহ ছোটখাটো যুদ্ধ-বিগ্রহের খবর পাওয়া যায়। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের বোমা বর্ষণের ঘটনাটি কিছুটা হলেও ভিন্ন। কেননা, এই বোমাটি যেনতেন বোমা নয়, একেবারে ‘মাদার অব অল বোম্বস’ বলে খ্যাত জিবিইউ-৪৩। ওজন ১০ হাজার কিলোগ্রাম। প্রতিটিতে থাকে ৮ হাজার ১৬৪ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক এবং বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১১ টন টিএনটির সমান। পারমাণবিক বোমা বাদ দিলে এটাই সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী বোমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক হিরোশিমায় নিক্ষেপিত ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমাটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫ টন। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই প্রথম এত বড় ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক একটি বোমা নিক্ষেপ করা হলো। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী, আইএস যোদ্ধাদের ব্যবহৃত গুহা ও বাঙ্কার লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছে এই বোমা হামলা। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞসহ ৯২ আইএস জঙ্গী নিহতের খবর আছে। গত সপ্তাহে এই প্রদেশে আইএস যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের এক সদস্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতেই নিক্ষিপ্ত হয় এই বোমা। ২০০৩ সালে প্রথম এর পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার এই প্রথম। এই প্রেক্ষাপটে সঙ্গত কারণেই এই প্রশ্নটি অনিবার্য উঠে আসছে যে যুক্তরাষ্ট্র তথা মিত্রবাহিনী কি নতুন করে জড়িয়ে পড়ছে আফগান যুদ্ধে? এর আগে সিরিয়ায় বাশার সরকারের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথিত অভিযোগে প্রথম মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টিও স্মরণ করা যেতে পারে। সত্যি বলতে কি, ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত দখলদারিত্বের অবসানে মার্কিন মদদে আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ ইত্যাদি নামের বিভিন্ন ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। এসব জঙ্গী গোষ্ঠীরই সম্মিলিত রূপ বলা যায় সুবৃহৎ জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস। এরা সর্বশেষ যুদ্ধকবলিত ইরাক ও সিরিয়ার বেশকিছু অঞ্চল জবর দখল করে নিজেদের স্বাধীন অথবা স্বশাসিত ইসলামিক স্টেটের নামে দেশে-বিদেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে আসছে। বহুকথিত নাইন-ইলেভেনে আল কায়েদা কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর মার্কিন বাহিনী ও ইইউ মিত্র জোট মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইত্যবসরে মার্কিন ও তুর্কি বাহিনীর সহায়তায় ইরাকের আইএস অধিকৃত এলাকা অনেকটাই দখলমুক্ত। সিরিয়ায়ও রাশিয়ার সহযোগিতায় বাশার বাহিনী যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে আইএস জঙ্গীগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে। আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানেও বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলাসহ জঙ্গী কার্যক্রম চললেও সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সে অবস্থায় সিরিয়া ও আফগান ভূ-খ-ে মার্কিন বাহিনীর স্বতঃপ্রণোদিত হামলা নতুন করে যুদ্ধক্ষেত্র সম্প্রসারণের ইঙ্গিতবাহী হতে পারে। পর্যবেক্ষকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং সর্বশেষ আফগানিস্তান নীতিকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। ইনফোওয়ারস নামের ওয়েবসাইটে জানা যায়, ইতোমধ্যে গুগলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সার্চ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পরমাণু বোমা নিয়ে সার্চও। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয় সার্চে সৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড। মার্কিন সামরিক ব্যয় কয়েকগুণ বাড়ানোসহ ট্রাম্প যেভাবে যুদ্ধংদেহী হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সীমিত পরিসরে হলেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আইএস নির্মূলের নামে ‘মাদার অব অল বোম্বস’-এর ব্যবহার এর একটি সুস্পষ্ট বার্তা হতে পারে!
×