ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ফরমেটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মিরাজ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

তিন ফরমেটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মিরাজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুধু টেস্ট কিংবা ওয়ানডে নয়। কিংবা টি২০ নয়। নিজেকে সব ফরমেটের জন্যই প্রস্তুত করে তুলছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এরইমধ্যে সব ফরমেটে তিনি যে যোগ্য, সেই প্রমাণ দিয়েছেন। তা যেন বজায় থাকে ভবিষ্যতে, সেই চেষ্টাই করছেন তিনি। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনের মাঠে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের অনুশীলন পর্ব শেষে মিরাজ জানিয়েছেন, ‘আমি চিন্তা করি না যে শুধু টেস্ট খেলোয়াড়ই হব, কিংবা ওয়ানডে খেলব বা টি২০ বিশেষজ্ঞ হব। তিন ফরমেটেই খেলব। যে ফরমেটে যেভাবে খেলা দরকার, সেভাবেই খেলব। আমি সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি।’ মিরাজ এখন পর্যন্ত ৭ টেস্ট খেলেছেন। ৩টি ওয়ানডে খেলেছেন এবং ১টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান মিরাজ। টেস্ট অভিষেক হয় তার। অভিষেক টেস্টটা মাতিয়ে দেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে টেস্ট সিরিজেও ১-১ ড্র হয়। মিরাজ বুঝিয়ে দেন টেস্টে তিনি যোগ্য। এখন পর্যন্ত ৭ টেস্টেই ৩৫ উইকেট নিয়ে নেন। টেস্টে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেও ওয়ানডের জন্য যেন মিরাজ আমলে আসছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেই সেই আশাও পূরণ হয়ে যায়। ছিলেন দেশের মাটিতে হওয়া ইমার্জিং টিমস কাপের দলে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে ওয়ানডে দলে নিয়ে নেয়। ডাক পেয়েই অলরাউন্ডার নৈপুণ্য দেখান। তিন ম্যাচে খেলেন। ব্যাট হাতে ১ এক ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ৫১ রান করেন। আর বল হাতে ৪ উইকেট নেন। বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের সেরা প্রাপ্তি মিরাজ, তা বলেই দেন। মাশরাফি বলেন, ‘মেহেদী হাসান মিরাজই শ্রীলঙ্কা সফরে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ওর সীমিত ওভারে অভিষেক হলো এই সিরিজেই। ওর যেদিকটা আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, সেটা হলো ও মানুষ হিসেবেও খুব ইতিবাচক। এই বিষয়টা আমাকে বিস্মিত করেছে।’ কেন মিরাজের এত প্রশংসা করেছেন মাশরাফি? মাশরাফির কণ্ঠেই তা পরিষ্কার, ‘তৃতীয় ওয়ানডেতে আমি যখন ২৬তম ওভারে ব্যাট করতে গেলাম, তখন ওকে বলেছিলাম ৪১ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে। অনেকগুলো উইকেট হারিয়ে ফেলায় ওই সময়ে আমরা ঠিক ভাল অবস্থায় ছিলাম না। সীমিত ওভারে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নেমেই ও আমাকে বলল, এটা সম্ভব না। আমি কারণ জানতে চাইলাম। ও জবাব দিল, ম্যাচটায় আমাদের হারার সম্ভাবনাই, সেটা ১৫০ রানে হোক, আর দুই রানে হোক। এরচেয়ে ইতিবাচক থেকে খেলি, সেটা বরং জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। পরের ওভারে আমি দুইটা চার মারলাম, ও নিজেও মারল। তখন মিরাজ এসে আমাকে বলল, ভাই, এটাই আমাদের খেলা। চলেন, এভাবেই খেলি। শেষ অবধি ম্যাচটা আমরা হারি, তবে ও সেদিন যেভাবে ব্যাট করেছিল সেটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক ছিল।’ মিরাজ শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফরেই টি২০তেও খেললেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচেই অভিষেক হলো মিরাজের। তবে টি২০তে এত বেশি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দুই ওভার করে ১৫ রান দেন। এখন মিরাজের আশা সব ফরমেটে নিজেকে মেলে ধরা। এরমধ্যেই ক্যারিবিয়ার প্রিমিয়ার লীগে (সিপিএলে) খেলার সুযোগও মিলে গেল। সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে মিরাজই সিপিএলে খেলার সুযোগ পেলেন। ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সে খেলবেন মিরাজ। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস হওয়াটাই স্বাভাবিক। মিরাজের কণ্ঠে সেই উচ্ছ্বাস আছেও, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ ও ভাল বিষয়। যেহেতু আমি জুনিয়র তাই এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাব।’ তবে এ মুহূর্তে ঢাকা লীগে যে মোহামেডানের হয়ে খেলছেন, প্রথম ম্যাচেই ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন; নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান, ‘আমরা প্রথম ম্যাচ হেরেছি। তবে আমাদের সামনের ম্যাচ জয়ে আত্মবিশ্বাস আছে। আমাদের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা একটু ভাল খেলে বেশি রান করলে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। প্রথম ম্যাচে তামিম ভাই খেলেননি বলে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। আশাকরি, সামনের ম্যাচে উনি দলে থাকবেন। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’ লীগ পুরো খেলতে পারবেন না জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। মিরাজের সেই দলের একজন। তাই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে এখনই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, ‘সামনে আমাদের আয়ারল্যান্ড সফর ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টাইট সিডিউল আছে। সেখানে চ্যালেঞ্জটা বড়। তাছাড়া প্রিমিয়ার লীগ তো চলছে। তাই ভাল পারফর্মেন্সের জন্য অনুশীলন করছি।’
×