ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দ হক অনূদিত শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের বিশেষ মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

সৈয়দ হক অনূদিত শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের বিশেষ মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারা বিশ্বের সবচেয়ে সমাদৃত নাটকের কথা বললে প্রথমেই আসে হ্যামলেট নাটকের কথা। চার শ বছর ধরে নাটকটি বিশ্বের অগণিত দেশে বিরতিহীনভাবে মঞ্চে অভিনীত হচ্ছে। সেই সূত্রে বিশ্ববরেণ্য নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী এ নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন হলো শনিবার রাজধানী ঢাকায়। আর এই বিশ্ববিখ্যাত প্রযোজনাটির বাংলা নাট্যরূপ দিয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। বছরখানেক আগে অন্তিম শয্যায় অনন্য কুশলতায় হ্যামলেট নাটকটির মুক্ত অনুবাদ করেন এই সব্যসাচী লেখক। মৃত্যুর আগে রেখে যান তার অনন্য সাহিত্য সৃজনের ভা-ার। তার অনুবাদের ভিত্তিতে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন আতাউর রহমান। অভিনয় করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন নাট্যদলের অভিনয়শিল্পীরা। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার স্মরণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বছরব্যপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে মঞ্চে এসেছে হ্যামলেট। আজ রবিবার নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আগে শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে হয়ে গেল বিশেষ মঞ্চায়ন। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক আতাউর রহমান বলেন, এই নাটক ব্যক্তিমানুষের অন্তর্গত ও নিত্যকার সংঘাতময় জীবনের আশা-হতাশার দোদুল্যমানতা অনুকরণীয় পারঙ্গময়তায় চিত্রিত হয়েছে। শেক্সপিয়ারের অনন্য লেখনীতে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের ইতি ও নেতির দ্বন্দ্বও বিবৃত হয়েছে নাটকে। কবি, লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল অনন্য কুশলতায় নাটকটির মুক্ত অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ সম্পন্ন করার কিছুদিন পরেই সবাইকে কাঁদিয়ে অনন্তের যাত্রী হয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক। শেক্সপিয়ারের নাটক অনুবাদ ও রূপান্তরের ক্ষেত্রে যিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী রূপকার। ‘হ্যামলেট’ নাটকে ডেনমার্কের যুবরাজ ‘হ্যামলেটে’র জীবনযুদ্ধের দ্বন্দ্ব ও সঙ্কটময় রূপ চিত্রিত হয়েছে যা কাহিনীবিন্যাস ও মর্মকথায় হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। আমাদের নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক তার কোন ব্যত্যয় ঘটাননি; তবে তার প্রয়াস ছিল যে, শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ যেন হয়ে ওঠে বাঙালীর ‘হ্যামলেট’ তথা বাংলাদেশের ‘হ্যামলেট’। তাই তিনি কাহিনীর কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে গ্রন্থিত করেছেন মহান বাঙালী কবিদের কাব্যাংশ ও সঙ্গীত। পাশাপাশি এসেছে আমাদের নিজস্ব লোকজ পালাগানেরও নানা আঙ্গিক। নৃত্যেও সচেতনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে বাঙালীর নৃত্য আঙ্গিক ও ভাবনা। নাট্যকাহিনীর সূচনা হয় ডেকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যু ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের জনক। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস, যুবরাজ হ্যামলেটের পিতৃব্য সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তার অগ্রজের স্ত্রী ও যুবরাজ হ্যামলেটের জননী গারট্রুডের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। জনককে হারানোর ব্যথ্যা, জননীর সঙ্গে পিতৃব্যের পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া, যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনে মর্মমূলে নাড়া দেয়; যুবরাজ শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনাপ্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। হ্যামলেটের পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহ লগ্নে তার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে জানিয়ে দেন যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্প দংশনে নিহত হয়েছেন; আসল সত্য হলো তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনাপ্রবাহে আরও কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রাণী গারট্রুডের ঘরে মাতা-পুত্রের কথোপকথন শোনার জন্য আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভুলবশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙ্গে পড়ে এবং জলে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের জ্বালা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে যান। রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ার্তেস হ্যামলেটের উধ বাহু রক্তাক্ত করে, হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে। রাণী গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, যা হ্যামলেটের পান করার কথা ছিল। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র। রাজার সব ষড়যন্ত্র যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করে এবং তিনি প্রাণত্যাগ করেন। এভাবে চার-চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারির ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাস্্উদ সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল, শফিকুল ইসলাম, শামীম সাগর, বাপ্পি আমীন, তৃপ্তি রাণী ম-ল, শামীম শেখ, মেরিনা মিতু, ফারজানা কামাল, শামীম শেখ প্রমুখ। লালনের জীবনের গল্প ‘ম্যান অব দ্য হার্ট’ জীবনভর গানে গানে মানবতার কথা বলেছেন ফকির লালন সাঁই। ধর্মের কূপম-ূকতা পেরিয়ে সুরে সুরে বলেছেন মানবিক সমাজের। ধর্মবর্ণ বা জাতের পরিবর্তে গেয়েছেন মানবতার জয়গান। সৃষ্টির মাঝে ছড়িয়েছেন মানবিক দর্শন। তার সেই জীবন ও দর্শনের গল্পবলা এক নাটক ‘ম্যান অব দ্য হার্ট’। বাংলা একাডেমির নববর্ষের অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে মঞ্চস্থ হলো নাটকটি। শনিবার বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে কলকাতার স্পেকটেটরস প্রযোজিত প্রযোজনাটির প্রদর্শনী হয়। নাটকটি ইতোপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, শিকাগো, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, জার্মানির বার্লিন, ইতালির রোম এবং ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরে মঞ্চস্থ হয়েছে। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম প্রদর্শনী। নাটকটি রচনার পাশাপাশি মঞ্চরূপ দিয়েছেন সুদীপ্ত চট্টপাধ্যায়। নির্দেশনা দিয়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতানুষঙ্গে ছিলেন শুভদীপ গুহ, অরুণাভ গুপ্ত, নজরুল শাহ ফকির এবং তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। যন্ত্রানুষঙ্গ ও অন্যান্য সহযোগে ছিলেন শ্রাবস্তী ঘোষ, সৌম্যদীপ্ত ম-ল, ইপ্সিতা সাহা, সুদীপ সান্যাল, স্বপন ব্যানার্জী ও অয়ন রায়। প্রযোজনা নিয়ন্ত্রণে কলকাতার রাজীব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রযোজনা সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন নায়লা আজাদ নূপুর। ‘একটি সূতার জবানবন্দী’ কামার আহমাদ সাইমনের রচনা ও পরিচালনায় এবং সারা আফরীনের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে নতুন চলচ্চিত্র ‘একটি সূতার জবানবন্দী’। সাভার সড়ক দুর্ঘটনার চতুর্থ বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনী হয়। চলচ্চিত্রটি এশিয়ার অন্যতম চারটি টেলিভিশন, জাপানের এনএইচকে, কোরিয়ার কেবি এস, তাইওয়ানের পিটিএস ও সিঙ্গাপুরের মিডিয়াকর্পের প্রযোজনায় তৈরি হয়েছে।
×