ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটের শামীমা টানা ৪ মাস পর হাসপাতাল ছাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

জয়পুরহাটের শামীমা টানা ৪ মাস পর হাসপাতাল ছাড়ল

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে জয়পুরহাটের দশম শ্রেণীর ছাত্রী শামীমা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি হয়েছিল। অবশেষে সে মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল। ১৩ এপ্রিল সে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম শামীমার সুস্থতার বিষয়টি জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এখন সে শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ। হাঁটাহাঁটি করতে পারছে, খাওয়া-দাওয়াও ঠিকঠাক করছে। কথাও বলতে পারছে স্পষ্টভাবে। এজন্যই হাসপাতাল থেকে সে ছুটি পেয়েছে। তবে এখনও সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলছে না। পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা করলেই সে স্বভাবিক হয়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, ‘শামীমা যেহেতু কম কথা বলত তাই সন্দেহ ছিল সে হয়ত তার স্মৃতি ভুলে গেছে।এজন্য ঢামেক হাসপাতালের মনোরোগবিদ ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে সে টানা একমাস চিকিৎসাধীন ছিল। সম্প্রতি, ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুনের রিপোর্টে তার মেমরির কন্ডিশন পজিটিভ এসেছে। এছাড়া এ মাসের প্রথম সপ্তাহে শামীমার দাঁতের একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। মূলত তার চোয়ালের এক পাশ একটু বেঁকে গিয়েছিল আর এ কারণেই সে অস্পষ্ট কথা বলত। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তার পরিবারই এখন পারে শামীমাকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তুলতে।’ বাড়ি যাওয়ার সময় শামীমার সঙ্গে ছিলেন তার মা, বাবা ও ফুফা। এই দীর্ঘ চার মাস শামীমার ছায়াসঙ্গী হিসেবে হাসপাতালে দিনরাত এক করেছেন শামীমার মা। কবে মেয়ে আবার মা বলে তাকে ডাকবে? এজন্য ওসিসির সামনের বারান্দায় নামাজ পড়ে হাজার বার আল্লাহকে ডেকেছেন তিনি। মেয়েকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ায় আনন্দিত তিনি, কিন্তু এলাকায় নেয়ার পর এলাকাবাসী শামীমাকে কেমন চোখে দেখবে এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই তার। তিনি জানালেন, ‘আমার মা সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক কথা বলছে না। ডাক্তাররা বলছে পরিবারের সঙ্গে থাকলে আবার সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি, এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর যদি আমার মেয়েকে এলাকাবাসী ‘ধর্ষিত’ বলে ডাকে! ওর দিকে অন্য পাঁচ দশ মেয়ের থেকে ভিন্ন চোখে তাকায়। তখন আমার মেয়ে আবারও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে।’ গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বানদীঘি গ্রামের সদ্য দশম শ্রেণীতে ওঠা এই স্কুলছাত্রীকে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ এবং পরে তাকে কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর কেটে গেছে চার মাস। কিন্তু পুলিশ এখনও মূল অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। এ বিষয়ে শামীমার ফুফা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। এটা ভেবে ভাল লাগছে। কিন্তু পুলিশ যতদিন না অপরাধীদের ধরতে পারছে ততদিন আমরা শান্তি পাব না। কে বা কারা শামীমার সঙ্গে এমন জঘন্য কাজ করল! তার শাস্তি চাই। পুলিশ বলছে তদন্ত করছে, তাহলে কেন অপরাধীকে খুঁজে বের করতে পারছে না? এতদিন তারা বলে এসেছে, শামীমার কাছ থেকে ঘটনা শুনতে হবে। কিন্তু মেয়েটা তো এখনও মানসিকভাবে সুস্থ নয়। এজন্য তাকে আমরা জোর করে কিছু বলাতে পারছি না। দেখা যাক, শামীমা কবে নাগাদ সেদিনের ঘটনা বলতে পারে। আর তারপর পুলিশ কি করে! ’ অন্যদিকে, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ২৯ ডিসেম্বর বানদীঘি গ্রামের মাহাবুল (৪০) ও এযাবুল সরকারকে (২৮) গ্রেফতার করে কালাই থানার পুলিশ। তারা দুজনেই প্রতিবেশী। গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও প্রকৃত অপরাধীর সন্ধান এখনও জানতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। তবে, সন্দেহভাজন অপরাধীদের এখনও হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর দীর্ঘ চারমাস অতিক্রান্ত হলেও এখনও মূল অপরাধীকে ধরতে না পারার কারণ জানতে কালাই থানার পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বর্মনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
×