ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জঞ্জাল’ পরিষ্কার করে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

‘জঞ্জাল’ পরিষ্কার করে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, বিগত বছরের সকল ‘জঞ্জাল’ পরিষ্কার করে নববর্ষে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে এবং দেশের জনগণ সুন্দর জীবন লাভের মাধ্যমে ‘আনন্দালোকে’ বাস করবে ইনশাআল্লাহ। বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উপলক্ষে শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা এ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবো। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে দেশের জনগণ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গণভবনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদেরও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একটি নতুন মাত্রা পেল। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই দেশের জনগণ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় শিল্পী সুবীর নন্দী, লিলি ইসলাম, শামা রহমান ও অন্যরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত বৈশাখী সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো....’ গান পরিবেশন করেন। শেখ হাসিনা পরে বাঙালীর সমৃদ্ধ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ধ্বনিত লোকগীতি ও বাউল সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, ভাওয়াইয়া, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, হাছন রাজা ও রজনীকান্তের গান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে সুবীর নন্দী, লিলি ইসলাম, শামা রহমান, দিনাত জাহান মুন্নী, শবনম শিউলী, ফকির ম-ল ও দেশের অন্যান্য প্রখ্যাত শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ কিংবা ‘আনন্দালোকে মঙ্গলালোকে’ একের পর এক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত শিল্পী সুবির নন্দীসহ পেশাদার শিল্পীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত অনেকে সুর মেলান তাদের সঙ্গে। পরিবেশিত হয় ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান...’, ‘আমার বাংলাদেশটা’, ‘কোন মিস্ত্রি নাও বানাইলো, কেমন দেখা যায়। ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নাও।’ হাছন রাজার গান ‘নেশা লাগিলো রে বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলো রে’, লালনের গান ‘তিন পাগলের হলো মেলা,... পাগলের সঙ্গ নিবি পাগল হবি; বুঝবি শেষে, তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে’। গানের এক ফাঁকে ‘রঙে ভরা বৈশাখ আইলো রে...’ গান এবং দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি তুলে ধরে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ দলীয় নৃত্য। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পরিবেশিত রবীন্দ্রনাথের ‘আনন্দালোকে ও মঙ্গলালোকে’ সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী মোয়া, মুড়কি, কদমা, জিলাপি ও অন্যান্য মিষ্টি দিয়ে অতিথিদের অনুষ্ঠানে আপ্যায়ন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পহেলা বৈশাখে দুপুরে যা খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে খাবারের প্লেটে ইলিশ না রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। শুধু তাই নয়, এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীও খাবারের তালিকায় ইলিশ রাখেননি। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর দুপুরের খাবার মেন্যুতেও ছিল না পান্তা-ইলিশ। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের দুপুরের খাদ্য তালিকায় খিচুড়ি, সবজি, বেগুন ভাজা, মরিচ ভাজা ও ডিম ভাজা রাখা হয়েছিল। তবে তিনি খিচুড়ি, সবজি, মুরগির মাংস ও বেগুন ভাজা দিয়ে দুপুরে খাবার সেরেছেন।’ ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষের তৃতীয় দিনে আজ রবিবার তিন শতাধিক ক্রীড়াবিদকে সংবর্ধনা দেবেন। গত বছর অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেসব ক্রীড়াবিদ সফলতা অর্জন করেছেন তাঁরাই পাচ্ছেন সংবর্ধনা। আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, সব মিলিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ ক্রীড়াবিদ পাবেন এ সংবর্ধনা। সংবর্ধনায় ক্রীড়াবিদদের জন্য অর্থ পুরস্কারও দেয়া হতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক কিংবা সাফল্য পাওয়া ক্রীড়াবিদ বা দলকে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা নতুন নয়। তবে এই প্রথম নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে সাফল্য অর্জন করা সব ক্রীড়াবিদকে এক অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে খেলাধুলায় নতুন এক অধ্যায়ই যোগ করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এনএনসি সূত্রে জানা গেছে, হ্যান্ডবল, সাঁতার, মহিলা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, শ্যূটিং, মহিলাদের জুনিয়ার ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তোলন, ভলিবল, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া নারী ফুটবল দল, গলফ, আরচারি, স্পেশাল অলিম্পিকস, দাবা, রোলবল ওয়াল্ডকাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দল, বধির ক্রিকেট দল, মককাপ ফুটবলে অংশ নেয়া জুনিয়র দল, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করা ক্রিকেটাররা থাকছেন এ সংবর্ধনায়। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী তিন ক্রীড়াবিদ সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও শ্যূটার শাকিল আহমদের হাতে তুলে দেবেন তাদের জন্য নির্মিত সরকারী ফ্ল্যাটের চাবি। এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর তাদের ফ্ল্যাট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×