ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার যন্ত্র প্রকৌশলী বিপ্লবের উদ্ভাবন

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে সঙ্কেত দেবে ডিজিটাল যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে সঙ্কেত দেবে ডিজিটাল যন্ত্র

সমুদ্র হক ॥ নদী তীরবর্তী এলাকা, চরগ্রাম ও উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর পানি বৃদ্ধি ও সাগরের জলোচ্ছ্বাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই আগাম সংকেত পাবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে মেধার বিকাশে এমন ডিজিটাল যন্ত্র উদ্ভাবিত হয়েছে। যে যন্ত্রের সংকেতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে প্রাণের ও সম্পদের সুরক্ষা করতে পারে। এই যন্ত্রে এমন ডিভাইস ও সেন্সর আছে যা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার আবহাওয়া বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যন্ত্রটি সম্পতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শিত হয়েছে। সরকারী সহযোগিতায় যন্ত্রটি নদী তীরবর্তী ও উপকূলীয় এলাকায় স্থাপন করে মানুষ ও সম্পদ রক্ষার মতামত দিয়েছেন সুধীজন। যন্ত্রটির উদ্ভাবক বগুড়ার যন্ত্র প্রকৌশলী মাহমুদুন নবী বিপ্লব (৩৬)। বাড়ি গাবতলির পদ্মপাড়া গ্রামে। বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ার সময় তিনি ডিজিটাল ডিভাইসের বিভিন্ন কার্যক্রমে উৎসাহী হন। সেই থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন কিছু উদ্ভাবনের ভাবনা পেয়ে বসে। কিছুদিন আগে তিনি ভাবেন নদী তীর ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর বন্যা ঝড় জলোচ্ছ্বাসে অনেক মানুষ ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সহায় সম্বল যা আছে তাও হারায়। কি করে এসব মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা যায় তা ভাবেন। এক পর্যায়ে তার মনে হয় এই মানুষদের যদি বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের অনেক আগেই সতর্ক করে দেয়া যায় তাহলে তারা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে পারবে। এই ভাবনা থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস সতর্কীকরণ ডিজিটাল ডিভাইস যন্ত্র। যন্ত্রটি নদী তীরের সুবিধাজনক কোন স্থানে ২৫ মিটার উঁচু টাওয়ারের স্থাপন করলে নদীর স্বাভাবিক অস্বাভাবিক গতিপথ, পানি বেড়ে যাওয়া, কমে যাওয়া, স্থিতি থাকা, বিপদসীমা অতিক্রম করা ইত্যাদি বিষয়গুলো তিনটি রঙের বিশেষ ধরনের এলইডি বাতির মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। এর আগে এই যন্ত্রে পানির পরিমাপ নদীর গতি প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়গুলো ডিভাইসে যুক্ত করে যন্ত্রে সেট করা হবে। এটাও এক ধরনের সফটওয়্যার। যা একটি সেন্সরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পরিচালিত হয়ে রিডিংগুলো নির্দিষ্ট ডিভাইসে পৌঁছে দেবে। ডিভাইস এসব তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সিগনাল দেবে। প্রতিটি সিগনালের সঙ্গে সাইরেনের মতো পৃথক শব্দসুর সেট করা হচ্ছে। যেমন স্রোতের ঢল নেমে পানি বেড়ে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হলে হলুদ সংকেত দেবে। পানি যত বাড়বে বিশেষ ধরনের শব্দ করে জানান দেবে। বিপদসীমা অতিক্রম করার সঙ্গেই লাল বাতি জ্বলে উঠে ঘন ঘন সাইরেন বাজিয়ে আশপাশের মানুষকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সংকেত দেবে। এলাকার লোক দূরে থেকে লালবাতি দেখে কি করণীয় তা নিজেরাই ঠিক করে নেবে। নদী ও উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় যন্ত্রে সবুজ বাতি জ্বলবে। যন্ত্রটি চলবে সোলার প্যানেলের ২৪ ভোল্টের শক্তিতে। টাওয়ারের সঙ্গে সোলার প্যানেল রাখার ব্যবস্থায় ছোট একটি ঘর থাকবে। ডিজিটাল এই যন্ত্রে যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। যন্ত্রের সঙ্গে সেট করা মনিটরে সকল তথ্যই দেখা যাবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যন্ত্রে উচ্চ শক্তির এমন ডিভাইস দেয়া আছে যার সেন্সর এ্যান্টেনার মাধ্যমে ঢাকায় নির্দিষ্ট অফিসগুলোর কর্মকর্তাগণ কম্পিউটারের মাধ্যমে মনিটর করতে পারবেন। দেশের কোন নদী অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার নদনদী প্রবাহের কি অবস্থা তা জানতে পারবেন কর্মকর্তাগণ। কোন নদী অঞ্চলে কতটি এ ধরনের টাওয়ার বসানো হবে তা নির্ধারিত হবে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে। বড় টাওয়ার মাঝারি টাওয়ার ও ছোট টাওয়ার তৈরি করে নদীর অবস্থানগত দিক বিশ্লেষণ করে টাওয়ার বসাতে হবে। উদ্ভাবক মাহমুদুন নবী বলেন : প্রতিবছর বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। অনেকে সম্পদ রক্ষা করতে পারে না। ডিজিটাল এই যন্ত্রটি সংকেত দিয়ে নদী তীরের ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের প্রাণহানি ও সহায় সম্বল রক্ষা করতে পারবে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার আগাম সংকেতের এই ডিজিটাল যন্ত্রটি সরকার যদি স্থাপন করে দিতে বলে তাহলে তিনি লোকবল নিয়ে আরও যন্ত্র বানিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসিয়ে দিতে পারবেন।
×