ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৫৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

১৫৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৫৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে আজ রবিবার। কমিশন জানিয়েছে, এসব ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনসহ উপনির্বাচন ও বন্ধ ঘোষিত কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। বিরতি ছাড়াই বেলা চারটায় শেষ হবে। ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংখ্যায় কম হলেও ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু করতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তারা। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, ১৭৩ ইউপি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও আদালতের আদেশে এবং সীমানাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিভিন্ন জেলার ১৬ ইউপির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে এখন ১৫৮ ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বাকি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। তারা জানান, আজ রবিবার সাধারণ নির্বাচন হবে ৩৮টি ইউপিতে, উপনির্বাচন হবে ১০২ ইউপিতে এবং বন্ধ ঘোষিত, মামলাজনিত বা অন্য কারণে স্থগিত ইউপি, ভোটকেন্দ্রে পুনঃ ভোটগ্রহণ হবে ১৭ ইউপিতে। এর মধ্যে ২১ জেলার ২৬ উপজেলার সাধারণ নির্বাচন, ৪৯ জেলার ৯০ উপজেলায় উপনির্বাচন ও ১২ জেলার সংশ্লিষ্ট ইউপিতে পুনঃ ভোট রয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে আদালতের আদেশে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ১৪ ইউপির নির্বাচন, কুমিল্লার মুরাদনগরসহ আরও কয়েকটি ইউপি নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছেÑইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সেলের প্রধান করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে। সেলের কাজ হবে ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এদিকে কমিশন সচিবালয় জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের প্রচার শুক্রবার মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকা থেকে বহিরাগতদের ছেড়ে যাওয়ারও কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউপি নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে মূলত লড়াই হবে। দুই দলের প্রতীক নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং নির্বাচনী এলাকায় বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চার দিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন তারা। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে তৃণমূলে এই ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউপি এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছে, এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এই ইউপির নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যাস মনির হোসেনকে কয়েকমাস আগেই প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ কারণে এই ইউপিতে উপনির্বাচন নিয়ে তারা সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। একই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ভোটগ্রহণের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। তারা উল্লেখ করেছেন, এর আগেও আরও তিন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কিছুদিন পরই গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি মনির চেয়ারম্যান হত্যাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কয়েকবার। এ অবস্থায় নির্বাচনে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হলে নির্বাচনের দিন বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এদিকে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তৃণমূলের ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনাররা মাঠপর্যায়ে সফর সেরেছেন। মাঠের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৭৬টি মোবাইল টিম, ৯০ প্লাটুন বিজিবি, ৯০ প্লাটুন র‌্যাব এবং উপকূলীয় এলাকার ইউপিতে ৮ প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিভাবে ইসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বধীন নির্বাচন কমিশন। এই ইসির অধীনে ইতোমধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ একাধিক নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব নির্বাচন নিয়ে কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠেনি। এজন্য তারা বলছেন, ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারা ভোটারদের কমিশনের ওপর আস্থা রেখে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে আপাত দৃষ্টিতে তারা এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলেই উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, বিগত ইসির অধীনে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে তা ফিরিয়ে আনাই বর্তমান ইসির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে সব নির্বাচনকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। এই বিবেচনায় আজকে অনুষ্ঠিত ১৫৮ ইউপির নির্বাচনও ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তারা।
×