ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতির পর আল্লামা শফি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতির পর আল্লামা শফি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ধর্ম ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি এবং দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিএনপি ও খালেদা জিয়া ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিশ্বস্ত পৃষ্ঠপোষক। ইতিহাস সেটারই প্রমাণ দেয়। শনিবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির পর আল্লামা শফি হুজুর শুক্রবার এক জনসভায় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান নেয়াটা লাভ নয় কি? হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন ধরনের আপোসের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির সঙ্গে হেফাজতের স্বীকৃতি বলে গুলিয়ে ফেলে। আমাদের স্বীকৃতি হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল অবকাঠামোর মধ্যে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা। তিনি বলেন, প্রায় ১৪ লাখ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে থাকবে। তাই আমরা কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছি। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন ও নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, প্রগতির যে পথ সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আর বাস্তবতাই হচ্ছে প্রগতিশীলতা। বাস্তবতা বাদ দিয়ে কেউ প্রগতিশীল হতে পারে না। এখানে ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আপোসের অভিযোগ সত্য নয়। হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোন এ্যালায়েন্স (জোট) হয়নি। তাদের চিন্তাধারার সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারার মিল হওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। একটা এ্যালায়েন্সের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের অনেক দল থাকতে পারে। এইচএম এরশাদের মতের সঙ্গে আমাদের মিল নেই, কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। এভাবে কওমী মাদ্রাসার বিষয়টি হেফাজত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। কওমী মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষার স্বীকৃতি দেয়ার পর হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জঙ্গী নির্মূলে হেফাজতও অবদান রাখতে পারে। হেফাজতে ইসলাম ও পহেলা বৈশাখের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাঙালীর জন্মের চেতনা হলো পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতাসহ এমন কিছু চেতনা রয়েছে, যেগুলো থেকে এক চুল সরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই হেফাজতে ইসলামের কারণে আওয়ামী লীগ পহেলা বৈশাখের বিষয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা হাস্যকর। দেশে উদার সংস্কৃতি সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগের ভূমিকার বিষয়টি দেশবাসী জানে বলে জানান ওয়ায়দুল কাদের। বৈঠক সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা জোরদার, ইস্টার সানডে সরকারী ছুটি ঘোষণা, মন্ত্রিপরিষদে খ্রীস্টান প্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারী সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা, খ্রীস্টান ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খ্রীস্টান শিক্ষক নিয়োগ, খ্রীস্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরাসহ খ্রীস্টান সম্প্রদায়কে দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতে রাখার দাবি জানান নির্মল রোজারিওর নেতৃত্বাধীন খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বিষয়সমূহ আলোচনা করে সাধ্যের মধ্যে থাকা দাবিসমূহ বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে খ্রীস্টান নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই মাইনরিটিবান্ধব সরকার। তাই নিজেদের দুর্বল ভাববেন না। আওয়ামী লীগ সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে। আপনাদের মধ্য থেকে ইতোমধ্যে নেতৃত্ব তুলে আনা হয়েছে। যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে তাদের জন্যও সুযোগ দেয়া হবে। এলাকায় কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে যোগাযোগ করবেন, দ্রুততম সময়ে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। বিগত সময়েও তাই করেছি। খ্রীস্টান এলাকাসমূহে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাসমূহের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সব দলেই কিছুসংখ্যক ক্ষমতালোভী, স্বার্থবাদী ও অহঙ্কারী নেতাকর্মী রয়েছে। এমন নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক থাকে না। ফলে তারা অনেক সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটায়। সঠিক তথ্য পেলে এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, সহ-সভাপতি মার্কুস গোমেজ, সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোড়াইয়া, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক নিখিল মানখিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি রাজনীতি করে এদিকে বাংলা নববর্ষের দিন শুক্রবার সকালে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি রাজনীতি করে। তারা যদি ধর্মীয় অপশক্তিকে মদদ না দিত, পৃষ্ঠপোষকতা না করত তাহলে আজ সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের এত ডালপালা বিস্তার করে প্রসারিত হতে পারত না। তাই ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
×