ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ানটের অনুষ্ঠানে সন্্জীদা খাতুন

‘সংস্কৃতি’ অস্ত্র দিয়ে নতুন স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এসেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

‘সংস্কৃতি’ অস্ত্র দিয়ে নতুন স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এসেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অসন্তোষ ও হতাশার কথা জানিয়ে নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা অহর্নিশ যোদ্ধা সন্জীদা খাতুন। অস্ত্র দিয়ে নয়, সংস্কৃতির শক্তি দিয়ে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পহেলা বৈশাখ রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে নিজের এমন আরও বেশ কিছু জরুরী উপলব্ধির কথা সকলকে জানান তিনি। দেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে প্রতি বছরই বিশেষ বক্তৃতা প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। অতীতের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সমকালীন পর্যবেক্ষণ যোগ করে দেয়া তার বক্তৃতা বাঙালীকে দিক নির্দেশনা দেয়। এবার মৌলবাদীদের বাড়াবাড়ি রকমের আস্ফালনের মধ্যেই পঞ্চাশতম বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। আয়োজনের প্রথম পর্বের শেষ ভাগে এসে মাইক হাতে নেন সনজীদা খাতুন। তার কণ্ঠটি বেজে ওঠতেই সামনে বসে থাকা অযুত বাঙালী তাদের প্রাণপ্রিয় মানুষটিকে করতালী দিয়ে স্বাগত জানায়। বরণ করে নেয়। সাধারণের ভালবাসায় সিক্ত সনজীদা খাতুন সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। শরীর অনেক দুর্বল। কিন্তু কণ্ঠটি অদ্ভুত সবুজ সতেজ! নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ছায়ানট সভাপতি বলেন, আমরা এ কথা বুঝি যে, আমাদের নতুন করে স্বাধীনতা সংগ্রাম করবার সময় এসেছে। আমরা যেন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি আবার। অস্ত্র দিয়ে নয়, সংস্কৃতি নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা জানি যে, গ্রামের দরিদ্র মানুষকে অর্থ দিয়ে কিনছেন ধর্ম ব্যবসায়ীরা। আমাদের সে অর্থ নেই। আমরা আমাদের মন দিয়ে সংস্কৃতি দিয়ে আমাদের মনের সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে স্পর্শ করবার চেষ্টা করতে পারি। এটা খুবই জরুরী। এটা আমরা করতে চাই। পর্যবেক্ষণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ধর্মীয় সন্ত্রাস দমনে সফলতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন। এগুলো রয়েছে একদিকে। অন্যদিকে রয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে বিষয় নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক ভাবনা। আর ভাস্কর্যকে মূর্তি আখ্যা দিয়ে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলবার হুমকি। এই পরিস্থিতিতি থেকে মুক্তির জন্যে প্রগতিশীল চিন্তার মানুষদের আরও বেশি কাজ করার প্রতি জোর দেন তিনি। বলেন, আমাদের নিজেদের কাজ করবার আছে। আমরা ১৯৬১ সাল থেকে শুরু করে ১৯৬৭ পর্যন্ত বাঙালী সংস্কৃতির গঠনমূলক কাজে নিয়োজিত আছি। আমাদের চেষ্টা, আমরা দেশের মানুষের কাছে যাব। আরেক চেষ্টা, মিছিল নয়, সেøাগান নয়, আমরা চাই নানাভাবে মানুষের কাছে যেতে। নতুন প্রজন্ম সম্পর্কেও নিজের মতামত তুলে ধরেন সন্জীদা খাতুন। বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন খুব বেশি করে ইন্টারনেটমুখী। বিশ্বায়ন চলছে। ভেবে দেখা গেল এই বিশ্বায়নের ব্যাপারটিতে আমরা কেন পিছিয়ে আছি? আমরা কেন ইন্টারনেটে যাই না? আমরা কেন বাঙালীর শ্রেষ্ঠ যে সমস্ত নিদর্শন সংস্কৃতির, সেগুলোকে সেখানে দিই না? এগুলো দিতে হবে আমাদের। আমি শুধু ছায়ানটের কথা বলছি না। সমস্ত সংস্কৃতিকর্মীদের সমস্ত সংস্কৃতি সংগঠনকে বলছি, তাদের যা কিছু ভাল জিনিস সেগুলো তারা দিন ইন্টারনেটে। তাতে যা হবে, আমাদের সন্তানরা সবকিছুর নিদর্শনই দেখবে এবং তাতে যেটা সুবিধা হবে, তারা জানবে যে, বাঙালীরও কিছু দেখাবার মতো জিনিস আছে। এটা আমাদের ভেবে দেখা দরকার। নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা খানিকটা নগরকেন্দ্রিক। আমাদের এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু কথা বলবার জন্য যাওয়া প্রয়োজন। আমরা বলতে চাই। তবে কথা দিয়ে মানুষের প্রাণকে টানা যায় না। আমাদের যেটা করতে হয়, সেটা হচ্ছে গান দিয়ে আবৃত্তি দিয়ে নাটক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালীত্বের বোধ দেশপ্রেম এবং সত্য ধর্মের পরিচয় সবার কাছে তুলে ধরতে পারি। নজরুলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি নজরুল কেমন করে বলে গেছেন, ক্ষমা কর হযরত। তুমি যে পথ আমাদের দেখিয়েছিলে সে পথে আমরা চলিনি। আমরা ভুল পথে গিয়েছি। তোমার নির্দেশ অনুযায়ী, তোমার আদর্শ অনুযায়ী আমরা চলতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। সেই জন্যই আমাদের ওপর তোমার রহমত বর্ষিত হচ্ছে না। নজরুলের এসব কথা প্রচার করতে হবে। সুরে এগুলোকে গাইব আমরা। শুধু ছায়ানট করবে তা বলছি না। সবাই মিলে যেন আমরা যেতে পারি সাধারণ মানুষের কাছে। কারণ আপনি আমি আলোকিত হলে দেশ আলোকিত হবে না। সমগ্র দেশকে জাগাতে হলে তাদের প্রাণের স্বাধীনতার বোধকে জাগিয়ে দিতে হলে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হবে। এই কথাটি আমরা বহুদিন ঠিক উপলব্ধি করে ওঠতে পারিনি। করতে হবে। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা সবাই, নতুন স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রবৃত্ত হই। সে সংগ্রাম সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলবার সংগ্রাম। এই মিলবার চেষ্টাটাই এ বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় কথা
×