ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উগ্রবাদ দৃপ্ত পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

উগ্রবাদ দৃপ্ত পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রা

মোরসালিন মিজান ॥ এখন ওরা যতই গর্জাবে, ভাই তন্দ্রা ততই ছুটবে,/মোদের তন্দ্রা ততই ছুটবে।/ওরা ভাঙতে যতই চাবে জোরে গড়বে ততই দ্বিগুণ করে,/ওরা যতই রাগে মারবে রে ঘা ততই যে ঢেউ উঠবে...। ঢেউ উঠল। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ঢেউ খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিল মৌলবাদ। বাঙালী ঘর ছেড়ে অভ্যাসবসত বের হলো। তাতেই জনস্রোত। এই স্রোতের সামনে এক মুহূর্ত টিকতে পারল না ক্ষুদ্র তুচ্ছরা। তাদের পরাস্ত করতে শেকড়ের শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল চিরচেনা বৈশাখ। সূর্য তখনও ওঠেনি। হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আলোয় ঠিকই দূর হলো অন্ধকার। ধর্মের বারুদে পোড়া রমনা বটমূল মানুষের হলো। আহ্বান জানানো হলো সম্প্রীতির। উগ্রবাদীদের ফতোয়া পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রা। উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ দাঁড়াল মাথা উঁচু করে। এভাবে লোক সংস্কৃতির প্রতি প্রেম আর বাঙালীত্বের অভূতপূর্ব জাগরণের মধ্য দিয়ে শুক্রবার উদ্যাপিত হলো পহেলা বৈশাখ। চিরায়ত আচার- আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারা দেশে বরণ করে নেয়া হলো ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে। বাংলা নববর্ষ মানেই চোখ ধাঁধানো উৎসব। বিপুল বর্ণাঢ্য আয়োজন। সব ধর্মবর্ণের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার শপথ। হাত ধরাধরি করে বাঁচবার অঙ্গীকার। কিন্তু এত ভাল, এত সুন্দর ধর্মের দোকানদারদের সইবে কেন? গা তাদের জ্বালা করে ওঠে। সব সময়। তাই বলে বৈশাখ রুখে দেয়ার হুঙ্কার ছাড়বে! নতুন বছর বরণ করে নেয়ার প্রাক্কালে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সে স্পর্ধাও দেখিয়েছিল। বলা চলে, ষাটের দশকেও বৈশাখ এত হুমকির মুখে পড়েনি, এবার যতটা পড়েছিল! বাঙালীর শেকড়ের সংস্কৃতি উপড়ে ফেলার সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে এবার। মৌলবাদীরা হা করেছিল। ভেবেছিল গিলে খাবে সব। এতকালের মঙ্গল শোভযাত্রা তারা আটকে দিতে চেয়েছিল। এ অবস্থায়ও রাজধানী শহরের বহু প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সংগঠন ভেতর থেকে এই তাগিদ অনুভব করেনি যে, আমাকে অন্তত মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকতে হবে। স্পষ্ট দেখা গেল, যারা মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধী তারা সকালে চারুকলায় আসেননি। এবং যাদের খুব পক্ষের লোক বলে জানে বাংলাদেশ, তারাও আসেননি। এর পরও দারুণ একটি বর্ষবরণ উৎসব হলো। অনুষ্ঠিত হলো বিপুল-বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা। কী করে সম্ভব হলো? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, অতি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে! এই সাধারণই বাংলাদেশের অসাধারণ সব ইতিহাসের নায়ক! অথচ এর আগে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে চোখ রাঙিয়েছিল অনগ্রসর কূপম-ূক গোষ্ঠী। তাদের বর্বর আক্রমণের শিকার হয়েছিল সুন্দরের চর্চা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশাখ বরণের অনুসঙ্গ দেয়ালচিত্র গভীর রাতে চোরের মতো এসে নষ্ট করে দিয়ে গিয়েছিল উন্মাদের দল। সারা দেশের সব মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার ফতোয়া এসেছিল হাটহাজারী থেকে। তারও আগে ভাস্কর্যকে মূর্তি জ্ঞান করে অপসারণের আবদার করা হচ্ছিল। পাঠ্যপুস্তকে আনা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী পরিবর্তন। অশনি সঙ্কেত দিচ্ছিল হেফাজতীদের আপ্যায়ন করার সরকারী নীতি। এ অবস্থায় বৈশাখ কতটা আনন্দের হবে, কতটা নির্বিঘœভাবে উদ্যাপন করা যাবে; সংশয় দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত হয়েছে যা, তা কেবল বাঙালীর পক্ষেই সম্ভব। বছরের প্রথমদিন সকল হুমকি- ধমকি উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে সব বয়সী মানুষ। জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড, পুলিশী তল্লাশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় গ্রীষ্মের দাবদাহ। বৈশাখে গরম হয়। বেশিই হয়। কিন্তু এবারের সূর্য যেন নিচে নেমে এসেছিল! গরমে গা গলে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল সাধারণ মানুষের। কিন্তু ওই যে, জ্বলে-পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়! এত বাধা, অসহনীয় গরম কোনটাই রুখতে পারেনি বাঙালীকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ছিল উৎসবের নগরী। রমনা বটমূল, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ; সব জায়গাতেই ঢল নেমেছিল মানুষের। নারী, পুরুষ, শিশুরা দেশীয় পোশাকে সেজেছিল। বৈশাখের লাল-সাদা রং ছিল গায়ে। কারও হাতে ছিল একতারা। কেউ মনের সুখে ঢোল বাজিয়েছেন। এভাবে শেকড়ের সন্ধান করে শহর ঢাকা। লোকঐতিহ্যের কাছে নত হয়। সমর্পণ করে নিজেদের। এদিন ভোরবেলা বাসা থেকে বের হতেই চোখ ছানাবড়া! মণিপুরীপাড়ার একটি গলি থেকে ভেসে আসছিল বর্ষবরণের প্রিয় সঙ্গীতÑ এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ...। ক্রমেই দৃশ্যমান হতে থাকে একটি শোভাযাত্রা। সেখানে কয়েক শ’ মানুষ। সবার গায়ে একই রকম পোশাক। বৈশাখের রং মাখা পোশাক পরে সবাই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এটি ছিল বার্তা। এর পর আরও অনেক পাড়ার মুখে দেখা গেল অভিন্ন দৃশ্য। গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়েছে। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বাধার শেষ ছিল না। কারণে, অকারণেও পুলিশ বলছিল, এই পথ বন্ধ। ওই পথে যাওয়া যাবে না। ফার্মগেট থেকে রমনা পার্কে যাওয়ার পথে বাংলা মোটর মোড়ে থামতে হলো। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছোট্ট একটি পথ করে দিয়ে বললেন, এদিক দিয়ে হেঁটে যেতে হবে রমনায়। কয়েক মাইল দূরে রমনা। একটু হতাশ হলেন কেউ কেউ। তবু থামলেন না। বরং বটমূল লক্ষ্য করে ছুটছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এবং চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার সব পথ বহুদূর থেকে বন্ধ করা। কোন ধরনের যানবাহন চলছে না। এর পরও এগিয়ে চলছিল বাঙালী। পথচারীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভেতরের তাগিদটা বোঝা যাচ্ছিল। বাবার হাত ধরে সুন্দর হাঁটছিল কিশোর সন্তান। পরিবাগের কাছে আসতেই দেখা গেল, অনেক বাবা-মা তাদের এইটুকুন বাচ্চা কোলে নিয়ে হেঁটে চলেছেন। একজনের নাম শিহাব। পেশায় চিকিৎসক। বললেন, স্টুডেন্ট লাইফে রমনা বটমূল, মঙ্গল শোভাযাত্রায় না যোগ দিতে পারলে পহেলা বৈশাখ মাটি হয়ে যেত। এখনও কিছু ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে মৌলবাদীদের যেসব কথাবার্তা এ কয়দিন শুনলাম এর পর বের হয়ে আসা দয়িত্ব মনে করেছি। শাহবাগের মোড়ে এসে দেখা গেল, দীর্ঘ লাইন পৌঁছে গেছে রমনার প্রবেশপথ পর্যন্ত। এই লাইনে দাঁড়িয়ে কথা হয় আমির হোসেনের সঙ্গে। সাবেক সরকারী কর্মকর্তা তার নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। দেখে বহুল শোনা ষাটের দশকের কথা মনে পড়ে যায়। স্মৃতি রোমন্থন করে এই প্রবীণ বলেন, আমি তো আমার ছেলেকে নিয়েও এসেছি। আজ নাতিকে নিয়ে আসলাম। আসতে তো হবেই। কেন? উত্তরটি কানে আসল না। ততক্ষণে এগিয়ে গেছে লাইন। একটু পিছিয়ে চারুকলা অনুষদে আসতেই দেখা গেল, মানুষের জটলা। অনেকেই বললেন, কয়টায় শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা তা ঠিক জানা নেই। তাই আগেভাগে চলে আসা! একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বললেন, ছেলেরা যেভাবে জঙ্গী হয়ে যাচ্ছে, আমি তো ভয়ই পাচ্ছি। আমার ছেলেকে মুক্তমনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ কারণে প্রথমবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিয়ে আসলাম। প্রধান প্রধান আয়োজন ছাড়াও ঢাকার অলি-গলি-রাজপথে অজস্র ছোট-বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। পুলিশ বিকেল ৫টার মধ্যে উন্মুক্তস্থানে আয়োজিত সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধের এলান দিয়ে রেখেছিল। জনগণের ইচ্ছের কাছে সেই এলান কার্যকর হয়নি। জাতির জনক বলেছিলেন, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ পহেলা বৈশাখেও দাবিয়ে রাখা যায়নি বাঙালীকে। ছায়ানটের সঙ্গে শুরু রমনা বটমূলে সকাল সোয়া ছয়টায় শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজন। বাঙালীর আবেগ ভালবাসা বিদ্রোহ বিপ্লবকে ধারণ করা এই আয়োজনের এবার ছিল পঞ্চাশ বছর পূর্তি। সব দিক বিবেচনায় আয়োজনটির প্রতিপাদ্য করা হয়Ñ আনন্দ, বাঙালীর আত্মপরিচয় সন্ধান ও মানবতা। রাজরূপা চৌধুরীর সরোদবাদনের মধ্য দিয়ে এই পর্বের শুরু। শিল্পীর রাগ ভৈরবী আরও শোনার পরিবেশটা যেন তৈরি করে নেয়। প্রতিবারের মতোই দিনের শুরুটা হয় ছায়ানটের সঙ্গে। এবার ছিল ঐতিহাসিক আয়োজনের পঞ্চাশতম বর্ষ। আবেগঘন আয়োজনের শুরু হয় ভোর সোয়া ছয়টায়। পরে ছায়ানটের শিল্পী শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ১০টি সম্মেলক গান। একক কণ্ঠে গাওয়া হয় ১৪টি। চন্দনা মজুমদার, খায়রুল আনাম শাকিল, মিতা হক, ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সিসহ খ্যাতিমান শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সব মিলিয়ে ১৬০ জন কণ্ঠশিল্পী বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। দুই ঘণ্টার আয়োজনে ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত নজরুলগীতিসহ পঞ্চকবির গান। ছিল পাঠাবৃত্তি, পালাগানও। সবশেষে দিক নির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। সারা দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার প্রথমবারের মতো সারাদেশ থেকেই বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনের ধারাবাহিকতায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। পহেলা বৈশাখ সকালে দেশের প্রায় ৩০ হাজার সরকারী বেসরকারী স্কুল কলেজ ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকার মূল আয়োজনটি শুরু হয় ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই। শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল চত্বর ঘুরে টিএসসি প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর। শোভাযাত্রায় যোগ দেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনসহ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ২৯তম মঙ্গল শোভাযাত্রায় রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল লোক ঐতিহ্যের ১২টি বিশাল শিল্প কাঠামো। মূল শিল্প কাঠামোটিতে দৃশ্যমান হয় ২৫ ফুট উচ্চতার সূর্যমুখ। এর এক প্রান্তে ছিল হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী আর অন্য প্রান্তে অশুভ মূর্তি। এভাবে মানুষের অন্তর্নিহিত দুটি রূপ তুলে ধরার চেষ্টা। ছিল ছোট ছোট আরও ১৬টি হাস্যোজ্জ্বল সূর্য মুখ। তৈরি করা হয় ময়ূরপঙ্খী নাও। এই শিল্প-কাঠামোটির উচ্চতা ২৫ ফুট। প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে নেয়া স্ট্রাকচারাল ফর্মগুলোর মধ্যে ছিল হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ও টেপা পুতুল। তবে বেদনার সঙ্গেই উল্লেখ করতে হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল এই অনুষঙ্গগুলো র‌্যালিতে ছিল না। শাহবাগের বাইরে এগুলো যেতে পারেনি। মৌলবাদী হুমকির মুখে পুলিশ এগুলোকে আটকে দেয়। নিরাপত্তার নামে এভাবে সবকিছু আটকে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা। পুলিশ র‌্যাব সোয়াত বাহিনী যেভাবে দৃশ্যমান হয়েছিল তাতে ‘বাড়াবাড়ি’ দেখেছেন অনেকেই। শিশু পার্কের সামনে ঋষিজ’র অনুষ্ঠান সকালে শিশু পার্কের সামনে নারকেল বীথি চত্বরে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ঋষিজ। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ‘জাগো নব আনন্দে’ সেøাগানে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। উদ্বোধন করেন অভিনেতা এটিএম শামছুজ্জামান। বৈশাখী আয়োজন থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, কণ্ঠযোদ্ধা উমা খান, গীতিকার-সাংবাদিক ফখরে আলম ও কবি নাসির আহমেদকে। ঋষিজের এবারের আয়োজন উৎসর্গ করা হয় সচ্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী, মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম ও পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লোক সঙ্গীত শিল্পী কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যকে। নানা আয়োজনে মুখর শিল্পকলা একাডেমি একদিন আগে চৈত্র সংক্রান্তি উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার শুরু করেছিল শিল্পকলা একাডেমি। পহেলা বৈশাখেও ছিল লোক সংস্কৃতির উৎসব। একাডেমির ছাদে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ঘুড়ি উড়িয়েছে ২০ সদস্যের একটি তরুণ দল। একাডেমি প্রাঙ্গণে ছিল নাগরদোলা, পুতুলনাট্য প্রদর্শনী ও বাইস্কোপ দেখার সুযোগ। সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, মানি মিয়ার চাঁপাই গম্ভীরা, জসীম পাগলা ও তার দলের পরিবেশনা গাজী কালু চম্পাবতী পালাগান এবং ঐতিহ্যবাহী রায়বেশে নৃত্য মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে উপভোগ করে শহুরে প্রজন্ম। বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী মেলা বাংলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। একাডেমির সহায়তায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক এই মেলার আয়োজন করে। এছাড়াও ‘বৈশাখে রং লাগাও প্রাণে’- এ প্রতিপাদ্যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একাডেমি। এ আয়োজন একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ৬৪টি জেলা ও ৬টি উপজেলায় একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ প্রতিবারের মতো এবারও হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুরের ধারা ও চ্যানেল আই। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উন্মুক্ত চত্বরে বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশির সুরে জেগে ওঠে মঞ্চ ও আশপাশের এলাকা। এর পর গান নাচসহ বহু পরিবেশনায় তুলে ধরা হয় আবহমান বাংলাকে। এ আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ইউনিলিভারের অন্যতম ব্র্যান্ড ‘সানসিল্ক’। সংস্কৃতি মন্ত্রীর ধন্যবাদ জ্ঞাপন উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে পহেলা বৈশাখ বরণ করে নেয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, নিজের ঐতিহ্য সংস্কৃতির প্রতি সব সময়ই বাঙালীর স্বতন্ত্র আবেগ ও ভালবাসা। এই আবেগ ছিল বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম। একই রকম আবেগ নিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখে রাস্তায় নেমে এসেছিল মানুষ। এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সকল কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বাংলাদেশের মানুষ। দেশের প্রয়োজনে বাঙালী সব সময় এমন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো/নির্বাণহীন নির্মল আলো...। অফুরান এই আলোয় বার বার উদ্ভাসিত হবে বাঙালী। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×