ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক হতাশায় বাড়ছে আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক হতাশায় বাড়ছে আত্মহত্যা

কয়েক দশক ধরে একটি বাস্তবতার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত এবং সেটা হলো কলেজ ডিগ্রি না থাকা আমেরিকান কর্মীদের অর্থনৈতিক অবস্থা বহু বছর ধরেই ভাল নেই। সম্প্রতি যে সত্যটা নতুন করে জানা গেছে তাহলো, তাদের এই দুর্ভোগ দুর্গতি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। ২০১৫ সালে এ্যানি কেস ও এ্যাঙ্গাস ডিটনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মৃত্যুহার বছরে প্রায় ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মৃত্যুহার বেড়েছে। ২০১৩ সাল নাগাদ মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা অনুরূপ নামের সব বর্ণের সুইডিশদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে মারা গেছে। আত্মহত্যা, মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগ সেবন ও মধ্যপান এজন্য দায়ী। কেস ও ডিটনের সেই গবেষণাকর্মের ফলাফল আপডেট করা হয়েছে এবং তাতে যে চিত্রটা বেরিয়ে এসেছে সেটাও কোন অংশে কম নিরানন্দ নয়। মধ্যবয়সী শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মৃত্যুহার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অব্যাহতভাবে বেড়েছে। তার ফলে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর আয়ু কমেছে। এই ধারা ভৌগোলিক এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রতিটি রাজ্য, এমনকি শহর ও গ্রাম উভয় জনপদেই তা লক্ষ্য করা গেছে। সময় যত গড়াচ্ছে ততই সমস্যাটার অবনতি ঘটছে। অনেকের মনে হতে পারে যে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া আয় হ্রাস পাওয়ার বিপরীত চিত্র। ৫০ থেকে ৫৪ বছরের শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানের পরিবারে মাথাপিছু মাঝারি আয়ের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক যে ধারা ফুটে উঠেছে তার মধ্যেই তাদের মৃত্যুহারের প্রতিফলন পাওয়া যায়। ১৯৯০-এর দশকে আয় বেড়েছে এবং তারপর ২০০০ এর দশকে হ্রাস পেয়েছে। তার মানে আয় বৃদ্ধি সেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানে গিয়েই শেষ হয়েছে। তবে জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার মানদ-ে বিভক্ত করলে এই প্রতিচ্ছবিটা ফিকে হয়ে আসবে। কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের আয় একই ধারা অনুসরণ করেছে। কলেজ শিক্ষার মূল্য বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা বেড়েছে ১৯৯০ সালের আগে। কিন্তু তাদের মৃত্যুহার ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য হতাশাজনিত মৃত্যু কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপ্যানিকদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত অনেক বিরল। এদের আয় মোটামুটিভাবে একই পথে আছে। গবেষকরা আমেরিকানদের হতাশাজনিত মৃত্যুর পিছনে আকার-অবয়বহীন দীর্ঘমেয়াদী শক্তির হাত আছে বলে সন্দেহ করেন। তবে মৌলিক কারণটি এখনও হলো অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের সেই পরিচিত কাহিনী। বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে বিশেষ করে ম্যানুফেকচারিং খাতে, স্বল্প দক্ষদের সুযোগ-সুবিধা কমে গেছে। তবে সামাজিক পরিবর্তনেরও একটা অবদান আছে। অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা কমে যাওয়ায় স্বল্প দক্ষ শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা বিবাহের চাইতে বরং বিবাহবহির্ভূতভাবে একত্রে থাকার অস্থায়ী ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে। পরিবার, সমাজ ও জীবনের সুস্পষ্ট কাঠামোগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেকেই মুক্তির আস্বাদ পেয়ে গেছে বটে তবে অন্যরা ব্যর্থ হচ্ছে। তার জন্য তারা নিজেদেরই দায়ী করছে এবং অসহায়, হতাশা ও বেপরোয়াবোধ করছে। এই পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা। কারণ তাদের আশা-আকাক্সক্ষা বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিকদের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্বেতাঙ্গদের চেয়েও খারাপ। কিন্তু তাদের আশা-আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা অত বেশি নয়। স্বল্প দক্ষ শ্বেতাঙ্গদের কাছে জীবনের অনেক দিক স্থায়ীভাবেই হতাশাজনক। এটা তাদের বিষণœতা, মাদক ও এলকোহলের দিকে ঠেলে দিতে পারে। কাজের সুযোগ কমে আসছে এবং সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে যাচ্ছে এটা যে শুধু আমেরিকায় হচ্ছে তা নয়Ñ ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ডেও হচ্ছে। এসব দেশেও হতাশায় মৃত্যু বাড়ছে তবে আমেরিকার মতো নয়। আমেরিকায় এত বেশি হওয়ার একটা কারণ আফিমাজাত বেদনানাশকের সহজলভ্যতা। এ জাতীয় ওষুধে আমেরিকায় মৃত্যুহার ২০০২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। আরেকটি কারণ বন্দুক বা পিস্তলের সহজপ্রাপ্তি। প্রায় অধিকসংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনায় এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়। অধিক মদ্যপানেও অনেক আমেরিকান মারা যায়। অবশ্য গোটা পাশ্চাত্যে মদ জিনিসটা ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার। হতাশার মূল কারণ যেটা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা সেটা হলো বিপুলসংখ্যক আমেরিকানের বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জালের অনুপস্থিতি। ওবামাকেয়ারের মাধ্যমে চিকিৎসা সহায়তা সাম্প্রসারণের আগে খুব কম রাজ্যই নির্ভরশীল সন্তান না থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা সাহায্য দিত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে চিকিৎসা সাহায্য বিষণœতার হার এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রাজ্যে স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণ করা হয়নি সেগুলোতে ব্যক্তিগত পরিসরে আর্থিক চাপ বেড়েছে। আর্থিক চাপে মানসিক চাপেরও কারণ ঘটেছে এবং তা থেকে সৃষ্টি হয়েছে বিষণœতা ও হতাশা। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×