ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ আসলাম ভূঁইয়া

আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে না

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে না

বিএনপি সরকার বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যাচার সম্পর্কে দেশবাসী জানে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হওয়ার পর বেগম জিয়া বললেন, নোয়াখালীর ফেনী (ফেনী খালেদা জিয়ার নিজের নির্বাচনী এলাকা) পর্যন্ত ভারতের বিস্তৃত হবে। অর্থাৎ ভারতের অংশ হয়ে যাবে। চুক্তির দীর্ঘ ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেনী আগের মতোই বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারপর বললেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে আজান হবে না, হবে উলুধ্বনি তাও হলো না। শেখ হাসিনা সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করছেন আন্তর্জতিক স্বীকৃতি নিয়ে। অবশেষে ছিটমহল চুক্তি করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষগুলোকে নাগরিকত্ব প্রদান করলেন। তার সাফল্যে হিংসা করার কিছু নেই। এ কাজগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। জেনারেল জিয়ার শাসনামলে বিএনপি সরকার ১৯৮০ সালে ৪ অক্টোবর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়। তার অনুচ্ছেদে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উভয় দেশ নিজ স্বার্থে দেশের জলপথ, সড়কপথ ও রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে। জেনারেল জিয়া অন্তত এইটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে জেনারেল জিয়া ১৯৮০ সালে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করেন। (ট্রানশিপমেন্ট) বিএনপি সরকার ১৯৮০ এবং ১৯৯৩ সালে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করলে ট্রানজিট অক্ষুণœ রাখে। চুক্তির অনুচ্ছেদ ১২ তে আছে কমিউনিকেশন, ট্রান্সপোর্ট এবং ট্রানজিট সুবিধা পাবে। এ চুক্তি কি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি? ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৫ বছরের বন্ধুত্ব স্মারক গৃহীত হয়। যাকে বিএনপি সরকার গোলামির চুক্তি আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে ওই ২৫ বছরের বন্ধুত্ব সম্পর্কে আর কোন কথা বলেনি। ওই চুক্তিতে ছিল যে কোন সময় চাইলে ওই চুক্তি দুই দেশের যে কোন দেশ বাতিল করতে পারবে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে ওই ২৫ বছরের বন্ধুত্ব চুক্তি সম্পর্কে কোন কথাই বলেনি অথচ ইচ্ছে করলে তারা চুক্তি বাতিল করতে পারত। করেনি কারণ, এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় জন কল্যাণেই হয়েছিল। অনেক রক্তে কেনা এ স্বাধীনতা তা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালভাবে আর কোন দল উপলব্ধি করতে পারবে না। ভারতবিরোধিতা একটা সংস্কৃতিতে পরিণত করেছে। বিএনপি বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তার অনুসারীরা সদা সর্বদা ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলছে। যে নেত্রী দেশের সর্বাধিক স্বার্থ ফারাক্কা বা গঙ্গার পানি চুক্তির কথা ভুলে যান তার কাছ থেকে জাতি কি প্রত্যাশা করতে পারে? শেখ হাসিনার সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ এদেশকে নতুন উচ্চতার শিখরে উন্নীত করেছে যা আগে কখনও হয়নি। বাংলাদেশকে ভারত সদাসর্বদা সহযোগিতা করে এসেছে। যে কারণে তিস্তা পানি চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে এই দেশের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট করে। কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার কোন ঘাটতি নেই তিস্তা পানি চুক্তির করতে। তারা এ ঘোষণাও দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তিস্তার পানি চুক্তি হবে। এখন এটা সময়ের ব্যাপার বৈ কিছু নয়। শেখ হাসিনা গণচীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এই দেশ দুটি বৃহৎ দেশ। এ অঞ্চলে ভারত/চীনা দুটি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এ দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দেশের স্বার্থে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি তাই করেছেন। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ করেই তা করেছেন। সময়ে সবই প্রমাণিত হবে। তখন কি বেগম জিয়া ক্ষমা চাইবেন, তার এ মিথ্যাচারের জন্য? আগেও এমন ভারতবিরোধিতার ভাব ধরেছেন। যা রীতিমতো এবং মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তাই সার্বিক বিষয় না জেনে এভাবেই বিরোধিতার স্বার্থে অবান্তর কথা একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায় না। তার চেলা-চামু-ারা বলে বলুক, তারা অর্বাচীন। কিন্তু একজন দায়িত্ববান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের মিথ্যাচার মানায় না। বাংলাদেশ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কারা উদগ্রীব এদেশের মানুষ তা জানে। বঙ্গবন্ধু কন্যা এদেশের একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি, তার দ্বারা দেশের স্বার্থবিরোধী কোন কিছুই করানো যাবে না। সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা সবাই রাখে। সে জন্য বলা হয় বিএনপি দেশ বিক্রি করে দিতে পারে কারণ দেশের জন্য তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা তেমন কিছু নেই, যা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর জীবনের সিংহভাগ জেলে কাটিয়েছেন। অতএব, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ বিক্রি করতে পারে না। একথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাই কোন মন্তব্য করার পূর্বে ভেবে চিন্তে করা সমীচীন বলে আমি মনে করি। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×