ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি

স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আমরা প্রথম দেখি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের পরে। সে সময়ই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্র একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর জামায়াতে ইসলামীর উত্থান। আর এ উত্থান ঘটেছিল জিয়ার গঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপির মাধ্যমে। তবে বলা দরকার, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নয় হয় অপরাজনীতি। আর এই অপরাজনীতি মানুষের অকল্যাণে পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয়, দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ যখনই রুখে দাঁড়িয়েছে, উন্নয়নের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে তখনই আমরা দেখেছি সেই চেনা অপশক্তি ধর্মকে শিখণ্ডি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। বলা বাহুল্য এসবই অধর্ম। ধর্মের দোহাই দিয়ে অধুনা মানব হত্যার দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে। একাত্তরে ধর্মের দোহাই দিয়েই এদেশে গণহত্যা চালানো হয়। অত্যন্ত পরিহাসের বিষয় হচ্ছে; ধর্ম নিয়ে এদেশে যারা অপরাজনীতি চালিয়ে আসছে তারা আবার স্বাধীনতারপক্ষের শক্তিকে বার বার আক্রমণ করছে ধর্মের দোহাই তুলেই। অনেকটা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অভিযোগ তুলে বলেছেনÑ শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন। বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের নির্বাহী সংসদের বৈঠকে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বিএনপি ও খালেদা জিয়ারাই করেন। ধর্মকে তারাই ব্যবহার করেন। আমি ধর্ম পালন করি, ধর্ম মান্য করি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না।’ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অর্থই হলো মানুষের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রীতিপ্রথা ও আচারের পৃথকত্বকে পুঁজি করে বিভেদের দেয়াল তৈরি করা। একইভাবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিনষ্টের পরিবেশ তৈরি করে। বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক উৎসব নববর্ষ বরণকে বিতর্কিত করে তোলার অপচেষ্টা তারাই চালিয়েছে। এই উৎসবকে শুধু বানচাল করাই নয়, মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রাবিরোধী নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। এমনকি বর্ষবরণের অংশ হিসেবে সৃজিত শিল্পকর্মের ওপর দানবীয় হামলা পর্যন্ত করেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে তারা ছোবল হানে চট্টগ্রামে। পোড়া মবিল ছিটিয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ষবরণের দেয়ালচিত্র নষ্ট করে। আবহমান গ্রামবাংলার কৃষি সমাজের উৎপাদন প্রক্রিয়া, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আনন্দ প্রকাশের স্বাভাবিক সুন্দর ছবিও মৌলবাদীদের সহ্য হয়নি! পারলে তারা মানুষের ছবি শুধু নয়, উৎসবমুখর মানুষের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়ত। অথচ নববর্ষ পালনের সঙ্গে ধর্মের কোন যোগসূত্র নেই। কথাটি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই দৃঢ়কণ্ঠে বলতে হয়েছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেছেন, সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাংলা বছরের প্রথম দিন উদযাপন করে। এখানে ধর্মকে টেনে আনার কোন যৌক্তিকতা নেই। আমরা বার বার বলে আসছি, বাংলাদেশের ওপর মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপপ্রয়াস রুখতে হবে। তা না হলে এরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে কলুষিত করে ছাড়বে।
×